Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News

পীযূষকান্তি দাসের স্মরণানুষ্ঠান, গ্রন্থ প্রকাশ

ওয়েটুবরাক, ২৭ মে : আলোচনা ও গ্রন্থপ্রকাশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হল ‘পরাণমাঝি’ পীযূষকান্তি দাসের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী৷ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এই স্মরণানুষ্ঠানের সূচনা করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য৷ তিনিই এ দিন পীযূষকান্তি দাসের লেখালেখির সংকলন গ্রন্থ ‘পরাণমাঝি’-র আবরণ উন্মোচন করেন৷ সঙ্গে ছিলেন দুই পত্রিকা সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী ও অরিজিৎ আদিত্য৷ ছিলেন শান্তশ্রী সোম, মেঘমালা দে মহন্ত ও সিঞ্জিনী সৌহার্দ৷

বইয়ের উন্মোচক তপোধীর ভট্টচার্য পীযূষ দাসকে সংবাদযোদ্ধা, সংস্কৃতিযোদ্ধা, পরিবেশযোদ্ধা বলে অভিহিত করেন৷

‘পরাণমাঝি’-র ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কাছাড় কলেজের অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস বলেন, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবিদ — নানা ক্ষেত্রে জড়িয়ে থাকলেও এক পীযূষের সঙ্গে অন্য পীযূষের কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না৷ নিজের বিশ্বাস, মতাদর্শের জায়গায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়৷ জয়দীপের কথায়, সাংবাদিকতার নানা তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি নিজেই একটা ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছিলেন৷

‘পরাণমাঝি’-র ওপর আলোচনার সূত্র ধরেই জয়দীপ বলেন, প্রকৃত সাংবাদিকরা সব সময়েই সরকারবিরোধী হন৷ সাংবাদিকদের সাহসিকতার সঙ্গে সরকারের দোষত্রুটি তুলে ধরতে হয়৷ আবার সরকার বা প্রশাসনকেও দোষত্রুটি ধরিয়ে দিলে মেনে নিতে হয়৷ এতে গণতন্ত্র মজবুত হয় বলেই মন্তব্য করেন জয়দীপ৷

সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় বলেন, “অনেকে অবস্থান নিতে ভয় করেন৷ পীযূষদা সেখানে ছিলেন ব্যতিক্রমী৷” রাজনৈতিক মতাদর্শে ফারাক থাকলেও উপত্যকার উন্নতিকল্পে, পরিবেশ সুরক্ষার নানা ভাবনায় তিনি পীযূষদার পরামর্শ পেতেন বলে জানান ডা. রায়৷

আসাম বিধানসভার প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার  দিলীপকুমার পাল ২৭ বছর আগের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, প্রতিবাদী লেখনীর জন্য  গ্রেফতার হয়েছিলেন পীযূষ৷ নির্ভীক ছিলেন তিনি৷ কিন্তু ২৭ বছরে নির্ভীক সাংবাদিকতার জায়গাটা যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, এগোয়নি মোটেও৷

অধ্যাপক রমাপদ বিশ্বাস বলেন, ঠিক কথাটা ঠিকমত বলার বুকের পাটা ছিল তাঁর৷ পীযূষের মতাদর্শ, বিশ্বাস, স্বকীয়তায় কোথাও কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না৷

পরিবেশ আন্দোলনের অগ্রণী অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরীর কথায়, টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতায় পীযূষ অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন৷ পরিবেশকর্মী জিষ্ণু দত্ত পীযূষের জীবনবোধের কথা উল্লেখ করেন৷ মৃত্যুর কিছুদিন আগেও আইসিইউ-তে থেকে তিনি তাঁর ম্যাসেজের জবাব দিয়েছিলেন‌৷  মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তেও লিখেছিলেন, এ তো জীবনেরই অঙ্গ৷  আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পীযূষের স্মৃতিকে সামনে রেখে ডলুতে চা বাগান ধ্বংস এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানান কোরাসের প্রধান বিশ্বজিৎ দাস৷

অধ্যাপক বিশ্বতোষ চৌধুরী বলেন, পীযূষের দায়বদ্ধতাটা শুরু হয়েছিল পরিবার থেকে৷ পরে তা সম্প্রসারিত হয় সমাজ, পরিবেশ, পেশা সহ নানা ক্ষেত্রে৷ পীযূষ তাঁর অধীনে পিএইচডির কাজটা প্রায় শেষ করেও করতে পারলেন না, সে আক্ষেপ যেমন পীযূষ বয়ে বেড়িয়েছেন, তেমনি একই খেদ রয়েছে তাঁরও মনে, জানান অধ্যাপক চৌধুরী৷

পীযূষকান্তি দাসকে স্পষ্টবক্তা বলে অভিহিত করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য৷ মঞ্চের বর্তমান সভাপতি শেখর  দেবরায় মন্তব্য করেন,  দোর্দণ্ডপ্রতাপ এক রাজনীতিবিদকে একেবারে ল্যাজেগোবরে করে দিয়েছিলেন পীযূষ৷

পীযূষকান্তি দাসের জীবনের নানা দিক তুলে ধরে শ্রদ্ধা জানান অধ্যাপক চার্বাক, কবি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের কলেজশিক্ষক  লুৎফুর রহমান, অরিজিৎ আদিত্য, দুলাল মিত্র, নির্মলকুমার দাস,  শরিফুজ্জামান লস্কর, দীপক সেনগুপ্ত, কৃষ্ণেন্দু রায় প্রমুখ৷

এ দিন পীযূষের কবিতায় সুরারোপ করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মঞ্জুশ্রী দাস৷ উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুদীপ্তা ভট্টাচার্য৷ মনোজ দেব  আবৃত্তি করেন৷ ধন্যবাদ সূচক ভাষণ দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সম্পাদক অজয় রায়৷ সঞ্চালনায় ছিলেন শাশ্বতী ভট্টাচার্য, পরমা ব্যানার্জি ও পঞ্চতপা চৌধুরী৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker