AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/৩৬ঃ মামলা থেকে রেহাই পেতেন ১৯৭১-র পরে আসা উদ্বাস্তুরা
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ৩৬-তম কিস্তি।)
২১ মার্চঃ তবে সু্প্রিম কোর্ট উভয় অর্ডার বাতিল করে দেয়। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সর্বানন্দ সোনোয়ালের দ্বিতীয় মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর রায় দেয়, ২০০৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখের জিএসআর ৫৭(ই) নির্দেশে তৈরি ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ২০০৬ সংবিধানের ৩৫৫ নং অনুচ্ছেদ এবং ১৪ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে। সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও উল্লেখ করে, ২০০৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখের জিএসআর ৫৮(ই) নির্দেশে তৈরি ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ২০০৬ আর কিছু নয়, শুধুই সোনোয়ালের প্রথম মামলায় সর্বোচ্চ আদালত তার রায়ে যে সব নির্দেশিকা জারি করেছিল, সেগুলি কার্যকর করতে না পারায় ওই ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা মাত্র। এই অর্ডার অযৌক্তিক এবং ক্ষমতার ইচ্ছেমত প্রয়োগ বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতিরা।
অতি সাম্প্রতিক, ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ জানায়, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে যে সব আইনি প্রশ্ন উঠে আসে, তার সমাধানের জন্য সংবিধানের ১৪৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তত ৫ সদস্যের বেঞ্চ গঠন প্রয়োজন। এই রায়ের ৩৩ নং প্যারায় সুপ্রিম কোর্ট ১৩টি প্রশ্ন উত্থাপন করে।
এই আলোচনা থেকে এই বিষয়টিই বোঝা যায়, মূল আইনের ৬(এ) ধারা শুধু ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছেন, সেইসব বিদেশিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে বাংলাদেশ থেকে আসা অন্যান্য অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদেরও বিচার ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অর্ডার মতে গঠিত ট্রাইব্যুনালে হতে পারে। এ বার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বা তার পরে বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের যে সব মামলা ট্রাইব্যুনালে ঝুলে রয়েছে, সেগুলিকে পৃথকভাবে দেখতে হবে। কারণ প্রস্তাবিত বিলের ২(১)(বি) ধারায় তাদের বৈধ অনুপ্রবেশকারী বলার কথা রয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার দিনেই তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। তাঁরা আইনের তৃতীয় তফশিলের ৬ নং ধারায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এই বিষয়গুলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক খতিয়ে দেখবে।
মূল আইনের ৬ নং ধারার প্রস্তাবিত সংশোধনীর প্রভাব সম্পর্কে পরিষদীয় বিভাগ সংক্ষেপে বলে, এই আইনের ৬(এ) ধারা শুধুই ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে যে সব বিদেশি অসমে প্রবেশ করেছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্কীত। এই ধারায় ওই তারিখের পরবর্তী সময়ের বিদেশিদের শনাক্ত করা, বাতিল করা বা বহিষ্কার করার কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রস্তাবিত বিলে বাংলাদেশ সহ তিন দেশ থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৯৬৪ সালের ফরেনার্স (ট্রাইব্যুনালস) অর্ডারে গঠিত কোনও ট্রাইব্যুনালে অমীমাংসিত থেকে থাকলে তাদের আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। প্রস্তাবিত বিল আইনে রূপান্তরের দিন থেকেই ২(১)(বি) ধারায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক বেঞ্চের ১৩টি প্রশ্ন উত্থাপন করে উত্তর জানতে চায়। তাতে লেখা হয়ঃ যতক্ষণ না বৃহত্তর বেঞ্চ নাগরিকত্ব আইনের ৬(১) ধারা নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবেন, একে বৈধ ধরে নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।
৫.৯ সুপ্রিম কোর্ট ১৩ প্রশ্নে সরকারের কী প্রতিক্রিয়া, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধি সাক্ষ্যদানকালে বলেন, ‘আইন মন্ত্রক থেকে আমরা জানতে পেরেছি, যে কোনও আইনের বৈধতা নিয়ে দুটি কারণেই চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। এক, আইনটির যদি পরিষদীয় যোগ্যতার অভাব থাকে এবং দুই, আইনটি যদি সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে গ্যারান্টি দেওয়া কোনও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। মন্ত্রক মনে করে, এই দুটির কোনও কারণ দেখিয়েই আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি এবং আবেদনকারী নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) নং ধারাটি অসাংবিধানিক বলেও দাবি করেননি। আমরা সুপ্রিম কোর্টেও এই কথাই বিভাগীয় জবাব হিসেবে পেশ করেছি।’
৫.১০ প্রস্তাবিত বিলের সঙ্গে অসম চু্ক্তির যে বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তার সমাধানে সরকার কি নতুন সংশোধনীর সাহায্যে অসম চুক্তি পুনঃবিবেচনা বা উন্নীতকরণের কথা ভাবছে? এই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, প্রস্তাবিত বিল এবং অসম চুক্তির সঙ্গে এর সম্ভাব্য বিরোধের জায়গাগুলি সরকার খতিয়ে দেখছে।
চোখ রাখুন— নাগরিকত্ব/৩৭ঃ উদ্বাস্তুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জনবিন্যাসগত পরিবর্তন করে ফেলেছে, এমন রিপোর্ট নেই