Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
ছাদের উপরে শুধু লোক আর লোক, ত্রাণের জন্য কী চিৎকার! লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য
বন্যার্তের ডায়েরি (চার)
রাতের খাওয়ার পর আমরা ছাদে চলে এলাম। তূর্য-র ফোন এলো। অনেকক্ষণ কথা বললাম। ও বরাকের জলের লেটেস্ট পজিশন জানাল। বলল, যদিও বরাক বাড়ছে, কিন্তু সকালের দিকে স্টেডি হয়ে যাবে। ঘরে কতটুকু জল হয়েছে জানালাম। সে বলল মিটার বক্স এবং এমসিবি-র ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে, তখনও অবশ্য বোর্ড জলে ডোবেনি।
২২ জুন, সকাল থেকে জল আর বাড়ছে না। স্টেডি হয়ে গেছে। এদিকে হেলিকপ্টারে এয়ার ড্রপিংও শুরু হয়েছে । প্রথমে ট্রায়াল ফ্লাইটে কয়েকটি জায়গায় ড্রপিং করল। জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাসেজ এসেছে, খোলা ছাদের উপর লাল কাপড় টাঙিয়ে রেখে দূরে সরে থাকতে হবে। আমরা সেভাবেই করলাম। টিনের ছাদ থাকলে ড্রপিং করবে না। প্রায় সারাদিনই আশেপাশে ড্রপিং হয়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, কেক, বিস্কুট, স্যান্ডউইচ এগুলো। যেদিকে তাকানো যায়, ছাদের উপরে শুধু লোক আর লোক, হাত নেড়ে ড্রপিং-এর জন্য কী চিৎকার! এক অদ্ভুত উন্মাদনা। দারুণ থ্রিলিং। আমিও ত্রয়ীকে নিয়ে ছাদের উপরে। আমরা কিছু পাইনি, কিন্তু আশেপাশের ড্রপিং দেখে খুব ভালো লাগছে। নিজের কষ্টের কথা ভুলে গেছি।
আমাদের অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই, শুধু জল। ট্যাঙ্ক চেক্ করলাম– প্রায় ১৩০০ লিটারের মতো জল আছে। যা ভয়ঙ্কর অবস্থা– কবে যে কী হবে একদম আনসার্টেন । এই জলে কম করেও কুড়ি থেকে বাইশ দিন চালাতে হবে। তার আগে কিছুই ঠিক হবে না, কেননা জলের পুরো সিস্টেমটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
বিকেল বেলার দিকে রিলিফ নিয়ে একটি নৌকা গলিতে ঢুকল। ২ লিটার জল আর ২ প্যাকেট বিস্কুট। সবাইকেই দিয়েছে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অন্ধকারে সব ডুবে যাবে। পরিষ্কার, পশ্চিম আকাশে লাল সূর্যদেব। দেখলে বোঝার উপায় নেই নীচে কি ভয়ঙ্কর তান্ডব ! বৃষ্টির কোনও লক্ষণ নেই।
আশিসরা এবং আমরাও প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছি। বিদখুটে অন্ধকারে প্রদীপের আলো কিন্তু অনেক। এক দারুণ নির্ভরতা। শুধু খাওয়ার অল্প সময় একটা লাইট জ্বলে। রান্না দিনের আলো থাকতে থাকতেই করে নেওয়া হয়। নিরামিষ। সয়াবিন, কাঁকরোল পুর, পনির এসবই। কি কারণে জানি না, ক্ষুধা বেশি লাগছে। সন্ধ্যার সময় শিলচরের স্থানীয় সংবাদ শোনার দারুণ অপেক্ষা। ভলিউম্ বাড়িয়ে দিই, আশেপাশে অন্যরাও শুনতে পায়। সাধারণত আমরা সকালবেলা ২ ঘন্টার মতো রেডিও শুনি। এই সিস্টেম মূলত অঞ্জনার (আমার সহধর্মিনী )। অনেক বছর থেকেই শুনছি। তবে এখন সন্ধ্যার খবরে বিশেষ আকর্ষণ। এই খবরে স্থানীয় অন্নপূর্ণা ঘাটে বরাক নদীর জলসীমা সংক্রান্ত ঘোষণা থাকে। এই ব্যবস্থা প্রথমে চালু হয় ১৯৮৫ সালের প্রলয়ংকরী বন্যার সময়। এখন বরাক নদী বিপদসীমার প্রায় ১ মিটার ৪০ সেমি উপর দিয়ে বইছে, যা খুবই উদ্বেগের। নদীতে জল কমছেই না।
এমনিতেও ঘন্টায় ঘন্টায় জল সংক্রান্ত বুলেটিন নেটে পাওয়া যায়। আমাদের তো অন্য কিছু নেই, তাই, রেডিও-ই ভরসা। সব কিছু নির্ভর করে বরাকের জলের উপর।
. . . . . . . . . . .
(চলবে)
Also Read: দেখছিলাম, বাড়িতে সাপ ঢুকছে, সাপের বাচ্চারা জলে খেলছে, লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য