Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
চোখে দেখে না, মা-জেঠুর মুখে শুনে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ রুদ্রাণী
২৬ জুনঃ হাতেখড়ির কিছুদিন পরই চোখের সমস্যা। প্রথমে বড় বড় লেখা দেখতে পেত। ক্রমে সব আবছা হতে থাকে। ওই অবস্থাতেই স্কুলে যাওয়া শুরু। পরীক্ষার সময় কখনও নিজে কষ্ট করে লিখেছে। কখনও ‘রাইটার’ নিয়েছে। পড়েছে মা-কাকী-জেঠুর চোখে৷ তাঁরা বই থেকে শুনিয়েছে, সে বোঝার চেষ্টা করেছে, মুখস্থ করেছে৷ ওই করেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করল শিলচর পাবলিক হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী রুদ্রাণী দাস।
বাবা শুভব্রত দাস রেফ্রিজারেটরের মেকানিকস। কোনওমতে সংসার চলে। গৃহবধূ-মা শম্পা দাস জানিয়েছেন, ‘নেতাজি বিদ্যাপীঠে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে সে৷ প্রধানশিক্ষক দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় সহ প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকা তাকে খুব সাহায্য করেছেন৷ পরে ভর্তি হয় পাবলিক স্কুলে৷ সেখানে অধ্যক্ষা কবিতা সেনগুপ্ত এবং বিষয়শিক্ষকরা তাকে নিয়মিত হাজির হওয়া থেকে রেহাই দিয়েছেন ৷’
একা একেবারে হাঁটতে পারে না রুদ্রাণী। তাই মাধ্যমিক পাশের পরই পড়ানোর ব্যাপারে আপত্তি ছিল অভিভাবকদের। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন তাঁরা। এখন অবশ্য তাঁরাও চান, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক সে৷ পারফর্মিং আর্টে ডিগ্রিটা নিক। এ ব্যাপারে এখন তারা পাশে পেয়েছেন সক্ষম নামে এক সর্বভারতীয় সংস্থাকে৷ পারফর্মিং আর্ট নিয়ে পড়ার ব্যাপারে তাঁরাই উৎসাহিত করছেন৷
এক বছর বয়সে লাল বল দেখেও যখন রুদ্রাণী আকৃষ্ট হয়নি, তখনই চিন্তা হয়েছিল তাঁদের। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করার পর সমস্যাটা স্পষ্ট হয়। তবু দিনের আলোয় চোখের সামনে বই নিয়ে পড়ে ফেলত। পরীক্ষাতেও কষ্ট করে লিখে নিত। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে আর পারছিল না। একবার কলম তুললে পরে কোথায় বসাবে, সেটা ঠিক করতেই সমস্যা। সে থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এক কাকিমা তার কথা শুনে খাতায় উত্তর লিখে দিতেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির ছাত্রকে রাইটার হিসেবে নেওয়ার অনুমতি মেলে। উচ্চমাধ্যমিকেও তা-ই।
শম্পাদেবী বললেন, রাইটার নিলে কী হল! মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে কাউকে লিখতে দেয়নি সে। শুধু প্রশ্নটা শুনেছে রাইটারের কাছ থেকে। পরে নিজেই লিখেছে৷ রুদ্রাণীর যে নিজের শেখা পড়া নিজে লেখাতেই আনন্দ!