Barak UpdatesHappeningsBreaking News

শিলকুড়ি রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে ভক্তি শ্রদ্ধায় জগদ্ধাত্রী পুজো

ওয়ে টু বরাক, ২ নভেম্বর : দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাস পর কার্তিক শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে সাড়ম্বরে পালিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। দুর্গার আর এক রূপ জগদ্ধাত্রী। চরাভূজা দেবী জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ। বরাক উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে উতসাহ উদ্দীপনায় ভক্তি সহকারে এই পুজো হয়। বুধবার শিলকুড়ি রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে সকাল থেকেই শুরু হয় দেবীর পুজো। ভোগ, আরতি, অঞ্জলি ইত্যাদিতে এবং পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে এক অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

দেবী জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার সামনে সকাল থেকেই ভক্তরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বেলা যতই বাড়তে থাকে, ততই বাড়তে থাকে ভক্তদের জমায়েত। দুপুরের দিকে বিশাল সংখ্যক ভক্ত পুজো মণ্ডপে হাজির হন। এদের মধ্যে শিলকুড়ি এলাকার অনেকে তো ছিলেনই, শিলচর থেকেও বহু ভক্ত শামিল হন।

শাস্ত্র মতে নবমীর দিনে জগদ্ধাত্রী পুজো করা হয়ে থাকে। নবমী তিথি শুরু ১ নভেম্বর রাত ১১টা ৫ মিনিট থেকে। নবমী তিথি সমাপ্ত ২ নভেম্বর রাত ৯টা ১০ মিনিটে।

পুরাণ অনুযায়ী মহিষাসুরের অত্যাচারে সকলে ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মহিষাসুরের হাত থেকে মুক্তির জন্য তাঁরা দুর্গার শরণে যান। মহিষাসুর বধ করেন দেবী দুর্গা। এদিকে দেবতারা উল্লসিত হয়ে ভাবতে শুরু করেন, দুর্গা আসলে তাঁদের শক্তির সম্মিলিত রূপ, একা তাঁর কোনও অস্তিত্ব নেই। দেবতাদের অহংকার ও গর্ব দেখে তাঁদের পরীক্ষা করতে উদ্ধত হন দুর্গা। দেবতাদের উদ্দেশে একটি তৃণখণ্ড নিক্ষেপ করেন। বজ্র দিয়ে ইন্দ্র সেই তৃণটি ধ্বংস করতে পারেননি। আবার অগ্নি দেবের মায়া সেই তৃণকে পুড়িয়ে ফেলতে অক্ষম হয়। পবনদেব সেই তৃণ ওড়াতে অসফল হন। বরুণদেব সেই তৃণের সামান্য অংশও জলে ভাসিয়ে দিতে পারেননি। এরপর দেবতাদের সামনে উপস্থিত হন দুর্গার সালঙ্করা, চতুর্ভুজা স্বরূপ জগদ্ধাত্রী। দেবতাদের বুঝিয়ে দেন, তিনিই জগতের ধারিণী শক্তি।

অন্যদিকে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে উল্লেখ রয়েছে, মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দুর্গাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এই চেষ্টায় মহিষাসুর একবার হাতির রূপ ধারণ করে। সেই হাতিকে বধ করার চেষ্টা করেন দুর্গা। সেই উদ্দেশে এক চতুর্ভুজা স্বরূপে আবির্ভূত হন তিনি। চক্র দ্বারা সেই হাতির মুণ্ডচ্ছেদ করেন তিনি। দেবীর এই রূপটিই হল জগদ্ধাত্রী।

তাই ধ্যানমন্ত্রে উল্লেখ না-থাকা সত্ত্বেও মূর্তিতত্ত্বে জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হাতির মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে। সংস্কৃতে হাতিটির নাম করী, তাই সেই অসুরের নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন জগদ্ধাত্রী পরিচিত হন করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।

কথিত আছে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী মা সারদা দেবী এই পুজোর সূচনা করেন। ইন্দ্রিয়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জ্ঞান পাওয়া যায় এই পুজোর মাধ্যমে। অভিমান, অহংকার নাশের উৎসব এটি। দেবীর চার হাতে শঙ্খ, ধনুক, তীর ও চক্র শোভা পায়। লাল বস্ত্র, অলঙ্কার ও নাগজঙ্গোপাবিতা ধারণ করেন দেবী জগদ্ধাত্রী। সিংহ তাঁর বাহন, দেবীর পায়ের তলায় হাতি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী যাঁরা নিজের ত্রুটি ও অহংকার সমাপ্ত করেছে, তাঁদের হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী বাস করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker