Barak UpdatesHappeningsBreaking News
আসামে বাঙালি বঞ্চনা, ধরনায় বসছে বরাক বঙ্গ
কমলাক্ষ ছাড়া সব বিধায়ক নিস্পৃহ
৪ জানুয়ারি : রাজ্যের নব্বই লক্ষ লোকের ভাষা বাংলাকে সহযোগী রাজ্যভাষা করার দাবিকে উপেক্ষা, সরকারি নিযুক্তিক্ষেত্রে বাঙালি কর্মপ্রার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বঞ্চনা, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিধি প্রণয়নে টালবাহানা এবং বরাকে ভাষা আইন লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনা নিয়ে এই উপত্যকা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মুখ খুলতে আহ্বান জানালো বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। রবিবার শিলচর বঙ্গভবনে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ সভা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই উপত্যকায় জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে বিস্ময়কর ভাবে মৌন থেকে উপত্যকাবাসীকে নিদারুণভাবে হতাশ করেছেন। জনগণ তাদের উপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন তাঁরা তার মর্যাদা দিতে পারেননি।
সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্যের পৌরোহিত্য অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহক সমিতির ওই সভায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনতার দাবিকে উপেক্ষা করে চললে বিষয়টি জনতার দরবারে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর গত্যন্তর থাকবে না । উপত্যকার মানুষ আশা করেছিলেন, সর্বক্ষেত্রে বঞ্চনা নিয়ে তারা একজোট হয়ে সরকারের দরবারে উপত্যকার কান্না পৌঁছে দেবেন । কিন্তু পরিতাপের বিষয় তাঁরা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেবার কোনও প্রয়োজন বোধ করেননি । সরকারি তরফে বঞ্চনার বিষয়গুলো ক্রমাগত বাড়তে থাকায় গোটা রাজ্যে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দানা বাঁধছে বলে সভায় মতপোষণ করা হয়। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এককভাবে বিধানসভার ভেতরে – বাইরে বিষয়গুলো নিয়ে লড়ে যাওয়ায় সভা থেকে তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়েছে, তিনিই এখন জনগণের আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
এদিনের সভার প্রারম্ভে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এ সম্পর্কে সম্মেলনের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করান। বলেন, বড়ো ভাষাকে রাজ্য সরকার সহযোগী রাজ্যভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়ায় বরাকবঙ্গ মনে করে, এটা এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে বড়ো জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। তবে এ ক্ষেত্রে রাজ্যের নব্বই লক্ষ লোকের ভাষা বাংলাকে সহযোগী রাজ্যভাষা হিসেবে মর্যাদা দেবার দাবিকে সুকৌশলে উপেক্ষা করার ঘটনায় রাজ্যের বাংলাভাষীরা মর্মাহত হয়েছেন । বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার তালিকায় এটা নতুন সংযোজন । পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে স্থানীয়ভাবে নিযুক্তি দেওয়া হবে বলে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে সরে এসে বাংলাভাষী কর্মপ্রার্থীদের দৃষ্টিকটুভাবে বঞ্চনা করা হচ্ছে। নিযুক্তির পরীক্ষায় অসমিয়া ভাষাশিক্ষা বাধ্যতামূলক করার ফলে এ রাজ্যে সরকারি চাকরিতে বাঙালির জন্য দুয়ার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এদিনের সভায় আলোচনায় অংশ নেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য , করিমগঞ্জ জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুখেন্দু শেখর দত্ত, দুই কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইমাদউদ্দিন বুলবুল ও অমূল্য পাল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিভাসরঞ্জন চৌধুরী, কাছাড় ও হাইলাকান্দি জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী ও সুদর্শন ভট্টাচার্য, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রায়, শিলচর আঞ্চলিক সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর, কাছাড় জেলা সহ-সভাপতি দীপক সেনগুপ্ত, কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক বিশ্বনাথ মজুমদার ও দেবদত্ত চক্রবর্তী, সুলেখা দত্ত চৌধুরী, তাজউদ্দিন বড়ভূইয়া, পরিতোষ চন্দ্র দত্ত , মিলন উদ্দিন লস্কর প্রমুখ। প্রত্যেকেই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উৎকন্ঠা ব্যক্ত করে নিজস্ব অভিমত তুলে ধরেন। সভাপতি নীতিশ ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যের বাঙালি জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ খর্ব করতে সুপরিকল্পিত চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে ক্রমবর্ধমান জনঅসন্তোষ দূর করতেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সভায় স্হির হয়েছে, আগামী ৮ জানুয়ারি উপত্যকা জুড়ে সম্মেলনের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করা হবে। ওইদিন সম্মেলনের আঞ্চলিক সমিতিগুলো স্থানীয় পর্যায়ে ও জেলা সমিতিগুলো জেলা সদরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতবিদ্য প্রবীণ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা দেবে। এ ছাড়া আগামী ১৮ জানুয়ারি উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তের ২১টি আঞ্চলিক সমিতি সম্মেলনের দাবিগুলো পূরণে একযোগে ধর্ণা ও স্মারকলিপি প্রদান করবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সম্মেলনের আগামী দ্বিবার্ষিক অধিবেশন শিলচরে অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য কাছাড় জেলা সমিতি সভা ডেকে অভ্যর্থনা সমিতি গঠন করবে। পাশাপাশি সম্মেলনের ভাষা আকাদেমি বরাকের অর্থনীতির উপর গবেষণাধর্মী আকাদেমি পত্রিকার আগা সংখ্যা প্রকাশ করবে। এ সম্পর্কে প্রস্তুতির কথা সভায় জানান আহ্বায়ক পরিতোষ চন্দ্র দত্ত।