Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
বন্যা ঠেকাতে সোনাবাড়িঘাট থেকে পাঁচগ্রাম পর্যন্ত বরাক নদীর বাইপাস খননের পরামর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের
ওয়েটুবরাক, ২০ সেপ্টেম্বর : বন্যার জল বেরিয়ে গেলেও শিলচর শহরের মানুষের জীবনে যে প্রভাব ফেলে গিয়েছে, এর থেকে রেহাই পেতে কত বছর যে কেটে যাবে ! সর্বস্ব খুইয়ে কত মানুষ যে জুন-পূর্ব জীবনে আর ফিরতে পারবেন না!
কেন এমন বন্যার মুখোমুখী হতে হল শিলচরবাসীকে, এর বিশ্লেষণে তিনমাস পরও সরকার বাঁধ কাটাকেই দায়ী করছেন। সোমবারও এ নিয়ে বিধানসভায় হইচই হয়৷ কিন্তু মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা নিজের কথা থেকে সরতে নারাজ৷ অন্যান্য রিপোর্টে অবশ্য বেরিয়ে আসে, শুধু বেতুকান্দিতে বাঁধ কেটে দেওয়াতেই এমন বন্যা হয়ে যায়নি। বিভাগীয় গাফিলতির দরুনই জলে ডুবেছিল গোটা শিলচর। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগে সমন্বয়ের অভাবে ত্রাণ ও উদ্ধারে বিলম্ব হয়। এর দরুন প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। জলমগ্ন শ্মশানে অন্ত্যেষ্টির ব্যবস্থা নেই বলে নিকটাত্মীয়ের দেহ ভেলায় বেঁধে বন্যার জলে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগও এই বন্যা নিয়ে অনুসন্ধান চালায় এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে ডেকে সম্প্রতি দিনভর আলোচনা করে৷ সেখানেও স্লুইসগেট এবং ড্রেনেজ সিস্টেমের কথা গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয়। স্বল্পকালীন পরিকল্পনায় এখনই এই দুই বিষয়ে মনোযোগ দিতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং দীর্ঘকালীন পরিকল্পনায় নতুন খাল খনন করতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা চক্রে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে, বেতুকান্দি ছাড়াও আরও বহু জায়গায় বাঁধ অনেকদিন থেকে নিশ্চিহ্ন। তাঁরা সে সব জায়গায় বাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কারে গুরুত্ব দিতে বলেন।
জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত আলোচনা চক্রে নিজেদের অনুসন্ধানের কথা তুলে ধরেন বিভাগীয় ডিন পার্থঙ্কর চৌধুরী। শিলচর এনআইটি-র অধ্যাপক অসীমকান্তি দে ও শুভ্রজিত দত্ত, জলসম্পদ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্নেহাংশু রঞ্জন স্বামী, মার্চ ফর সায়েন্সসের মহীতোষ পাল দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের রাজীব গুপ্ত প্রমুখ নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক রাজীব মোহন পন্থ, রাজ্য সরকারের যুগ্ম সচিব জে আর লালসিম, অতিরিক্ত জেলাশাসক যুবরাজ বরঠাকুর, দুর্যোগ মোকাবিলা প্রজেক্ট ম্যানেজার শামিম আহমেদ প্রমুখ।
আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পকালীন এবং দীর্ঘকালীন পরামর্শের তালিকা তৈরি করে। উপাচার্য পন্থ নিজে ওই তালিকা সংবলিত চিঠি রাজ্যপাল জগদীশ মুখির হাতে তুলে দেন। চিঠি পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছেও। দীর্ঘকালীন পরিকল্পনায় তাঁরা সোনাবাড়িঘাট থেকে পাঁচগ্রাম পর্যন্ত খাল খননের পরামর্শ দেন। মূলত তা হবে বরাক নদীর বাইপাস। অতিবৃষ্টি বা বর্ষার সময় শহর এড়িয়ে নদীর অধিকাংশ জল সোনাবাড়িঘাট থেকে বাইপাস ধরে পাঁচগ্রামে গিয়ে ফের নদীতে মিশবে। খালের দুই প্রান্তে থাকবে স্লুইস গেট। শুকনো মরসুমে নদী তার গতিতে এগিয়ে যাবে।
হাইলাকান্দির কাটাখালও একই প্রক্রিয়ায় বরাক নদীতে গিয়ে মিশেছে৷ ত্রিপুরার হাওড়া নদীতেও খাল খনন হয়েছে৷ তিতাস নদীতে পড়ে হাওড়া বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি করছিল বলে খাল কেটে এক জলস্রোতকে দুই ভাগ করে দুইদিকে নিয়ে তিতাসে মেশানো হয়৷ ব্যতিক্রম শুধু, কাটাখাল ও হাওড়া এক জায়গার জল আরেক জায়গায় নিয়ে ফেলছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত খাল বরাক নদীর জল বরাক নদীতেই নিয়ে ছাড়বে৷
নদী ড্রেজিঙেও সুফল মিলতে পারে বলে অভিমত তাঁদের। সে জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধানকারী দল মনে করে, স্থানে স্থানে যে স্লুইস গেটগুলি রয়েছে, সেগুলির এখনই মেরামতি প্রয়োজন। দরকার আরও কিছু স্লুইস গেট নির্মাণ। সে জন্য জলসম্পদ বিভাগের সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগকে এক করে দিতে বলেন তাঁরা। দ্বিতীয়ত, ড্রেনেজ সিস্টেম এমন করতে হবে, শহরের জল যাতে বিনা বাধায় নর্দমা ধরে এগিয়ে যেতে পারে। বড় বড় নর্দমাগুলির পার আরসিসি বাঁধাই হওয়া দরকার। কিছু জলাভূমিরও সুরক্ষা প্রয়োজন বলে জোরালো অভিমত দেন তাঁরা। বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয় রোধেরও প্রস্তাব দিয়েছে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়।