Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
মায়ের দুধ না পেয়েই শিশুরা দুর্বল হচ্ছে, শেষ সাক্ষাৎকারেও বলে গেলেন ডা. চন্দ্রশেখর- প্রথম পর্বway2barak presents the last interview with Dr. Chandrasekhar Das
শতাক্ষী ভট্টাচার্য
ইচ্ছে করলেই বিদেশে গিয়ে একটা চাকচিক্যের জীবন কাটাতে পারতেন। দূরদেশের প্রতিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে একটা আলাদা প্রশংসার জায়গা তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু, এসবের দিকে বিন্দুমাত্র মোহ ছিল না তাঁর। কারণ, নিজের ভিটে মাটির পরিবেশে জড়িয়ে থাকাটাই ছিল তাঁর কাছে মুখ্য। তাই তো নিজের শহরকে ভালবেসে, এই শহরের মানুষকে ভালবেসে, শহরের আলো-হওয়া-রোদ্দুরকে ভালোবেসে সাড়ে সাত দশকেরও বেশি সময় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। নিজের শিক্ষা, বুদ্ধি, অভিজ্ঞতার পুরোটাই দিয়েছেন আজকের প্রজন্মের সুস্থ ভবিষ্যত গড়ে তুলতে। জীবনের বর্ষীয়ান অবস্থায় এসে বর্তমানে প্রায়ই তাঁকে শারীরিক পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। তবে, আমরা জানি, অচল শব্দ এমন মানুষের জন্য অভিধানে নেই। কারণ, তাঁর অবদান সমাজে সদা অচল ও চিরসতেজ হয়েই আছে, থাকবে। তিনি শিলচরের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ চন্দ্রশেখর দাস।
সম্প্রতি এক শীতের সকালে ডাক্তারবাবুর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঠিক উল্টোটাই হলো, অসুস্থ অবস্থায় নিজেই আমার সঙ্গে দেখা করতে চলে এলেন। খুশি প্রকাশ করলেন খুব। সেসঙ্গে আমার ছোটবেলার দু-চার কথাও বেশ মজা করে বলে দিলেন। হেসে হেসেই বললেন ‘আগে তোমার স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখেছি। এখন তোমার বাচ্চার চিকিৎসা করছি। এভাবে দু-তিন প্রজন্মকে সেবা শুশ্রূষা করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার তৃপ্তির জায়গাটা তো এখানেই। আসলে আমি সবার সুস্থ-সুন্দর জীবন চাই।’
ওই দিন আসলে সি এস দাস স্যার কথা বলার মুডে ছিলেন। পুরনো দিনের স্মৃতি টেনে আনছিলেন বার বার। আর আমিও বেশ সুযোগ সন্ধানী হয়ে সময়টাকে কাজে লাগালাম। ডাক্তারবাবুর কর্মজীবন, চিকিৎসাক্ষেত্র এসব নিয়ে নিজের কৌতূহল, প্রশ্নও ভাগ করে নিলাম। স্যারের কাছ থেকে জানলাম বহু অজানা কথা।
Also Read: Dr. Chandrasekhar Das is dead, Long Live Dr. Chandrasekhar Das,! writes Sudarshan Gupta
‘বাবা প্রয়াত ডা:কৃপানাথ দাশই ছিলেন আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা। বাবার কাছ থেকে যেমন চিকিৎসক পেশার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলাম, তেমনি নিজের দেশ-সমাজের প্রতি দায়-দায়িত্বের পাঠও পেয়েছিলাম। ফলে, চিকিৎসা পরিষেবা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না। রোজই কিছু না কিছু আলোচনা হতো। হতো মত বিনিময়ও। এভাবেই আমার বেড়ে ওঠা’
নিজের স্মৃতির প্রেক্ষাপট ঘিরে আলোচনা করছিলেন ডা: চন্দ্রশেখর। হঠাৎ করে স্যার নিজে থেকেই বললেন। ‘অহ,অহ আবেগপ্রবণ হয়ে বেশি কথা বলে ফেলছি। আচ্ছা, তোমার নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন আছে? করতে পারো। কিন্তু স্বাস্থ্য বিষয়ের বাইরে নয়। বেশ পেশাদার সুরেই বললেন কথাটা। তাই করলাম। কিন্তু তাঁর শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপার মাথায় রেখে একেবারেই সীমিত জিজ্ঞাসা ছিল আমারও।
প্রশ্ন: আগে তো চিকিৎসা পরিষেবা এত আধুনিক ছিল না। কীভাবে ম্যানেজ করতেন।
ডা: সিএস দাস: হ্যাঁ, কষ্ট খুব ছিল। শিলচর মেডিক্যাল কলেজে তো শিশুদের একটু ভালো চিকিৎসার কোনও উপকরণ ছিল না। অভাব ছিল চিকিৎসকেরও। এমন বহুদিন কেটেছে, ডা: এম মাসুম আর আমি একসঙ্গে কোনও জায়গায় যেতে পারি নি। না ছুটি নিতে পেরেছি। রাত জেগে মা-সন্তানের পাহারদারী করতে হয়েছে। কাজে লাগাতে হয়েছে উপস্থিত বুদ্ধিকে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সফলতা পেয়েছি । কিন্তু সেইদিনগুলি খুব কঠিন ছিল ঠিকই।
প্রশ্ন: আমার বাচ্চাটা মানসিক-শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল। বেশিরভাগ অভিভাবকের মুখ থেকেই এমন কথা শোনা যায়। তার কারণ?
ডা: সিএস দাস: দুর্বল তো বটেই। কারণ হচ্ছে মায়ের দুধ পরিমাণ মতো শিশুরা পায় না। মায়ের দুধ হচ্ছে একটি শিশুর সারাজীবনের অন্যতম পুষ্টি। সঠিক সময়ে এই পুষ্টি নিয়মিত পড়লে শিশুরা শারীরিক-মানসিক ভাবে শক্তপোক্ত হয়। বাড়ে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। তাই একটি শিশুকে জন্মের ৩০ মিনিট পর থেকে ৪ ঘন্টার মধ্যে মায়ের বুকে ফেলে দিতে হয়। যাতে করে মায়ের প্রথম দুধ সে খেতে পারে। গ্রহণ করতে পারে অমূল্য পুষ্টি। খেয়াল রাখতে হবে এই প্রথম দুধ যাতে বিনাশ না হয়। শিশুর জন্য এটি অমৃত সমান। তবে, আজকাল সচেতনতার অভাবে এই অমৃতরস নিয়মমতো পাচ্ছে না শিশুরা। ফলে শুরু থেকেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
Also Read: Dr. Chandrasekhar Das is dead, Long Live Dr. Chandrasekhar Das,! writes Sudarshan Gupta