Barak UpdatesHappeningsBreaking News
করিমগঞ্জ কোভিড ওয়ার্ডে যুবকের মৃত্যু, চরম গাফিলতির অভিযোগYouth dies at Covid ward in Karimganj, gross negligence alleged
নোংরা পরিবেশ, খাবার মুখে তোলা যায় না
ওয়েটুবরাক, ১০ মে: ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আজ সোমবার দুপুরে যখন শপথ নিচ্ছিলেন, সে সময় করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে দাদার মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে করজোড়ে প্রার্থনা করছিলেন এক যুবক, “স্যার, করিমগঞ্জ জেলার কোভিড আক্রান্তদের বাঁচান।”
আজ ভোরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি শহরের ২৬ বছরের ব্যবসায়ী যুবক আশুতোষ বণিক। তাঁর ভাইয়ের আর্তি মুহূর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । মৃত আশুতোষবাবুর ভাইবোন সহ অন্যান্য করোনা রোগীদের অভিযোগে করিমগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের চিত্র স্পষ্ট হয়ে যায় । সেখানে চিকিৎসাধীন হয়ে কী ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশে তাঁরা আছেন তা প্রমাণ সহ তুলে ধরেন।
পাথারকান্দি স্টেশন রোডের বাসিন্দা আশুতোষ বণিক ২ মে কোভিড পজিটিভ হয়ে ৫ মে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে ভর্তি হন। শুধু তিনিই নন, তাঁর ভাই, বোন, মা সবাই একসঙ্গে সে দিন ভর্তি হয়েছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার অভিযোগ করেছেন এবং চিকিৎসা কর্মীদের গাফিলতিকেই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। আশুতোষ বণিকের ভাই এবং বোন বলেন, দাদা যখন অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেছিলেন তখনই তাঁরা ডাক্তারদের আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের কেউ এলেন না। তাঁর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পরে এক নার্স একটি ইঞ্জেকশন নিয়ে আসেন। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়া হয়েছিল, সেটি খালি ছিল। পরিবারের সদস্যরা আরও অভিযোগ করেছেন, রোগীকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়নি। তাঁরা বলেন, ওষুধের দোকানেই নাকি সেটি নেই৷ ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড একেবারে নোংরা৷ জঞ্জালে ভরা। রোগীরা বলেন, তাদের যে সব খাবার দেওয়া হয়, সেগুলি অতি নিম্নমানের ৷ ওয়ার্ডে জল নেই। শৌচাগারে যাওয়ার উপায় নেই৷
করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাঃ অরুণাভ চৌধুরী বলেন, “আশুতোষ বণিকের কোনও উপসর্গ ছিল না৷ তিনি হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাফেরা করতেন। আসলে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে কোভিডের সম্পর্ক নেই৷ হৃদযন্ত্রের সমস্যায় মারা গিয়েছেন তিনি৷” তিনি বলেন, অতীতেও লক্ষ্য করা গিয়েছে, করোনা রোগীদের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
তাঁর দাবি, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে রেমডেসিভির ইঞ্জেকশন রয়েছে। তবে অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ কেবল তখনই ব্যবহার করা হয়, যখন রোগীর দেহে উপসর্গ থাকে৷ প্রয়োজনীয় সময়ে ডাক্তার তা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া, হাসপাতালে জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং কনসেনট্রেটরও রয়েছে বলে জানান তিনি৷
করিমগঞ্জ জেলার যুগ্ম সঞ্চালক ডা: অনুপ দৈত্যারি শুধু বলেন, “যুবকের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোক প্রকাশ করছি। আমরা চাই, প্রত্যেক রোগীকে ভালো চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিশেষ নজর রাখতে ।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, আশুতোষ বণিকের মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টি করিমগঞ্জের ব্রজেন্দ্র রোড শ্মশানে সম্পন হয়। সার্কল অফিসার ত্রিদিব রায়, সমাজকর্মী সুজন দেবরায় এবং রবিন হুড আর্মির চার সেনার উপস্থিতিতে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে তাঁকে দাহ করা হয়েছে ।