Barak UpdatesHappeningsCulture
প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনে পূবালির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান
ওয়ে টু বরাক, ১০ জানুয়ারি : পূবালি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংস্থার ৫১তম বর্ষবরণ অনুষ্ঠান গত ৭ ও ৮ জানুয়ারি, শনি ও রবিবার স্থানীয় গান্ধীভবন প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান হয়েছে ভিন্ন স্বাদের মনোগ্রাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সারা দিনব্যাপী বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ছাড়াও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সংস্থার শিল্পী ও আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনায় নানা স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে ছিল সংস্থার শিল্পীদের সমবেত সঙ্গীত ও সমবেত আবৃত্তি, সংস্থার শিশুশিল্পীদের পরিবেশিত সমবেত সঙ্গীত। তাছাড়াও প্রথমদিন অতিথি শিল্পী হিসেবে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন পঙ্কজ নাথ ও সুমনা পাল চৌধুরী। তাদের তবলায় সহযোগিতা করেন বিশ্বজিৎ দেব, সিন্থেসাইজারে ছিলেন হৃষিকেশ চক্রবর্তী ও গিটারে ছিলেন গোবিন্দ শর্মা। এ দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিলচর শহরের প্রখ্যাত সেতার বাদক রাজর্ষি ভট্টাচার্য ও প্রথিতযশা তবলাবাদক পণ্ডিত নিলয় কান্তি দত্তের সেতার ও তবলার যুগলবন্দির অনুষ্ঠান। সবশেষে ছিল ডান্সার্স সার্কল শিলচরের একটি অনবদ্য নৃত্যানুষ্ঠান। অন্ধকার ও আলোকে থিম করে এর কোরিওগ্রাফি করেছেন বিশিষ্ট নৃত্যশিক্ষক সৌমিত্র শংকর চৌধুরী।
সংস্থার শিশুশিল্পীর একক নৃত্যের মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারপর শিশুশিল্পীরা পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ও আবৃত্তি। সবশেষে পরিবেশিত হয় সংস্থার শিল্পীদের একক আবৃত্তি ও মহিলাদের অমল রায় রচিত একাঙ্ক নাটক ইঁদুর দৌড়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে প্রথম হয়েছেন শতাক্ষী দেব পুরকায়স্থ, দ্বিতীয় সম্বিতা ভট্টাচার্য ও তৃতীয় পুরষ্কার লাভ করেছে প্রিয়ঙ্কা নাথ। খ বিভাগে প্রথম হয়েছে হার্দিক বৈদ্য, দ্বিতীয় সোহম চক্রবর্তী ও যুগ্মভাবে তৃতীয় হয়েছে ঈপ্সিতা দেব ও অন্বেষা সেনগুপ্ত। গ বিভাগে প্রথম হয়েছে রাজসী দত্ত, দ্বিতীয় দেবাঞ্জলি নাথ ও তৃতীয় হয়েছে অভ্রাংশু ভট্টাচার্য। সংলাপ নিক্ষেপে খ বিভাগে প্রথম হয়েছে হার্দিক বৈদ্য দ্বিতীয় হয়েছে সোহম চক্রবর্তী ও তৃতীয় হয়েছে দেবাঙ্ক চক্রবর্তী। ঘ বিভাগে প্রথম হয়েছে মাধুর্য চৌধুরী ও দ্বিতীয় হয়েছে অনুসূয়া ভট্টাচার্য। গীতাশ্লোক প্রতিযোগিতায় খ বিভাগে প্রথম হয়েছে সোহম চক্রবর্তী ও দ্বিতীয় হয়েছে রোশনি রবিদাস। গ বিভাগে প্রথম হয়েছে উজ্জ্বয়িনী নাথ।
বসে আাঁকো প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে পিনাক কংসবনিক, দ্বিতীয় হয়েছে প্রজ্ঞা নাথ ও তৃতীয় হয়েছে দেবাংশী নাথ। খ বিভাগে প্রথম হয়েছে অংকিত পাল, দ্বিতীয় হয়েছে শানয় পাল ও তৃতীয় হয়েছে হিমাদ্রি রায়। গ বিভাগে প্রথম হয়েছে নির্মলেন্দু দাস, দ্বিতীয় হয়েছে ওমশান্তি নাথ ও তৃতীয় হয়েছে মধুমিতা দাস। ঘ বিভাগে প্রথম হয়েছে মন্টি মণ্ডল। যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেছে দিব্য চক্রবর্তী, দ্বিতীয় অদ্রিকা আচার্য ও তৃতীয় স্থান লাভ করেছে অনুরাগ দত্ত। খ বিভাগে প্রথম হয়েছে ঈপ্সিতা দেব, দ্বিতীয় হয়েছে পাপাই দাস ও তৃতীয় হয়েছে নাজমিন সুলতানা। গ বিভাগে প্রথম হয়েছে দিসা দাস।
সমবেত লোকনৃত্য প্রতিযোগিতায় জুনিয়র গ্রুপে প্রথম হয়েছে গৌড়ীয় নৃত্য কলাভারতী ও দ্বিতীয় হয়েছে অভয়াচরণ পাঠশালা। সিনিয়র গ্রুপে প্রথম হয়েছে নুপুর নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্র ও দ্বিতীয় হয়েছে মালুগ্রাম গার্লস স্কুল। শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী দল হিসেবে নীলিমা চক্রবর্তী স্মৃতি রানিং ট্রফি পেয়েছে শিলচর কলেজিয়েট স্কুল ও রানার্স আপ হিসেবে রঙ্গন বিজয় দাম ও সুনীলা রানি দাম স্মৃতি রানিং ট্রফি পেয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় শিলচর। শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে দিলু ধর স্মৃতি রানিং ট্রফি পেয়েছে হার্দিক বৈদ্য ও দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে রবীন্দ্র কুমার দাম স্মৃতি ট্রফি পেয়েছে ঈপ্সিতা দেব।
এ দিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যারা বিচারকের আসন অলংকৃত করেছিলেন তারা হলেন আবৃত্তিতে ড. স্বরূপা ভট্টাচার্য, সংলাপ নিক্ষেপে অমিত শিকদার, গীতা শ্লোকে বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় ড. নির্মল কান্তি রায়, যেমন খুশি সাজোতে অভীক সেনগুপ্ত ও সমবেত লোকনৃত্য প্রতিযোগিতায় ছিলেন মধুমিতা ভট্টাচার্য। পুরষ্কার বিতরণী সভায় বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমর রায়, চিত্রভানু ভৌমিক, সুব্রত রায় (শম্ভু), সুখেন সরকার, চন্দন শর্মা ও বাবুল হোড়।
বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন সময়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় পূবালি একটি ষ্টাম্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। এতে প্রণব কুমার চৌধুরী, দীপক ধর ও অমৃতাস্মি বর্মণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদেরও এদিন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। তাছাড়া কিছুদিন আগে একটি সর্বভারতীয় পর্যায়ে নাটকে শিলচরের নেতাজি বিদ্যাভবন প্রথম পুরষ্কার পাওয়ার জন্য তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিলচরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথা সমাজসেবী পূবালি ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক স্বর্ণালী চৌধুরী। কিন্তু বিশেষ কারণে তিনি চলে যাওয়ায় তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে ক্লাবের কর্মকর্তারা তাঁর অফিসে গিয়ে সংবর্ধনা দিয়ে আসেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সম্পাদক প্রণব কল্যাণ দে। তিনি অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার জন্য উপস্থিত সকল দর্শক, বিশিষ্ট অতিথি ও ক্লাবের সকল সদস্য সদস্যাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যারা বিচারকের আসনে থেকে ক্লাবকে সাহায্য করেছেন তাদেরও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সবশেষে সংস্থার কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরাজ চক্রবর্তীর শান্তি মন্ত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন ক্লাবের কার্যকরী সদস্য শান্তনু সেনগুপ্ত।