Barak UpdatesHappeningsBreaking News
নথি আছে, শরণার্থী পরিচয় দেব কেন!We have documents, why should we declare us as foreigners!
নিজস্ব সংবাদদাতা, শিলচর, ১৯ ডিসেম্বর: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না| কাদের আবেদন করতে হবে, কী কী শর্ত পূরণ প্রয়োজন, ওইসব নিয়ে বিভ্রান্তিতে এনআরসি-ছুট হিন্দুরা| একই নথিতে যাদের পরিবারের অন্যদের নাম উঠেছে, কিন্তু এক-দুজন বাদ পড়ে গিয়েছেন, তাঁরা আরও বেশি দুশ্চিন্তায়| শরণার্থী পরিচয়ে নাগরিকত্বের আবেদন জানাবেন, নাকি নতুন এনআরসির জন্য অপেক্ষা করবেন! সংশোধিত আইনে নাগরিকত্বের আবেদন জানালে ধর্মীয় নির্যাতনের প্রমাণ দিতে হবে কি?
আদৌ কি ৩১ অগস্ট প্রকাশিত এনআরসি বাতিল হয়ে গিয়েছে? বাতিল হলে কি আর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে ছোটার প্রয়োজন রয়েছে? নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে, কারও কাছে কোনও জবাব নেই| আইনজীবীরা বলছেন, এখনও বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়| আমলাদেরও একই বক্তব্য, কোনও নির্দেশিকা এখনও এসে পৌঁছায়নি| এলেই সব স্পষ্ট হবে|
তবে অসমের এনআরসি-ছুট হিন্দু বাঙালিরা এতে উপকৃত হবেন বলা হলেও তাঁদের বড় অংশই শরণার্থী পরিচয়ে নাগরিকত্বের আবেদনের পক্ষপাতী নন| বরং তাঁরা চান, ১৯৭১ সালের আগের নথিপত্র ঠিকঠাক পরীক্ষা করে তাঁদের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা হোক|
শিলচর রংপুরের অজিত রায় বললেন, এনআরসি নথি হিসেবে তিন ভাই ও তিন বোনের সবাই ঠাকুরদার রিফিউজি কার্ডের প্রতিলিপি জমা করেছিলেন৷ দিয়েছেন ১৯৭০ সালের জমির দলিলও৷ তাও রাজ্য সরকারই শরণার্থী হিসেবে ওই জমি দিয়েছিল তাদের৷ একই নথিপত্রের সাহায্যের অগস্টে প্রকাশিত এনআরসিতে সবচেয়ে বড় ভাই ও তিন বোনের নাম এসেছে৷ বাদ পড়লেন অজিত রায় ও তার আরেক ভাই এবং তাদের সন্তানসন্ততিরা৷ অজিতবাবু জানালেন, একই রিফিউজি কার্ড দেখিয়ে তার কাকা-জেঠার বাড়িতেও সকলের নাম ওঠে৷ তাই তাঁর বক্তব্য, আমি কেন ক্যাতে নাম লিখাব!
একই বক্তব্য নীলমণি চক্রবর্তীরও৷ শৈশব কেটেছে করিমগঞ্জ জেলায়৷ পরে কাছাড় জেলার উধারবন্দে বাড়ি করেছেন৷ নথিপত্র সময়মত সংগ্রহ ও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে জমিয়ে রাখা তার পুরনো অভ্যাস৷ এর পরেও স্বস্তিতে নেই৷ তার মা চারুপ্রভা চক্রবর্তী ১৯৬০ সালে স্বাস্থ্য বিভাগে নিযুক্তি পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছিলেন৷ একই বছর নিযুক্তি পান৷ ১৯৬৮ সালে নীলমণিবাবু করিমগঞ্জের বিপিন পাল বিদ্যানিকেতনে সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন৷ এখনও হাতে রয়েছে সেই মার্কশিট৷ নবম, দশমে ওঠা এবং এর পরের সমস্ত মার্কশিটও ফাইলে রাখা৷ না, এনআরসিতে নাম নেই তাঁর নিজের বা ছেলেমেয়ে কারও৷ ছেলেমেয়ে দুজনই চাকরি করেন৷ তাঁর প্রশ্ন, এত নথি থাকার পরও তিনি কি ক্যা-তে নাগরিকত্বের আবেদন করবেন? করলে তাঁর ছেলেমেয়ে দুটির চাকরির কী হবে? নিজেই জবাব দেন, তাদের চাকরির সুরক্ষার জন্যই ক্যাতে তিনি আবেদন করতে পারবেন না৷ আর এত নথি হাতে থাকতে কেনই বা তিনি আর্জি জানিয়ে মঞ্জুরির অপেক্ষায় থাকবেন?
ব্যতিক্রম নন শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পালও| ৩১ অগস্ট প্রকাশিত এনআরসিতে তাঁর স্ত্রী অর্চনা পালের নাম আসেনি| তাই বলে তিনি স্ত্রীর জন্য সংশোধিত আইনে আবেদনের পক্ষপাতী নন| দিলীপবাবু বলেন, অর্চনাদেবীর বাবা-কাকা ১৯৪৮ সালে শিলচরে একটি জমি কিনেছিলেন| এর দলিল সংগ্রহ করে এনআরসির জন্য আবেদন করা হয়েছিল| বাবা-মেয়ের লিঙ্ক হিসেবে পেন কার্ড দেওয়া হয়েছিল, মানা হয়নি| ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সার্টিফিকেট দেওয়া হল| এর পরও অর্চনা দেবীর নাম আসেনি| দিলীপবাবুর দাবি, নতুন করে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হলে তাঁর নাম না এসে পারে না|
তবে আর ক্যাব পাশের জন্য এত হইচই, অশান্তি কেন? বিজেপি নেতারাই-বা এ নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করছে কেন? দিলীপকুমার পাল বলেন, ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৯৭১ সালের পর অনেকে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তা অস্বীকারের উপায় নেই| নথির অভাবে অনেকে এনআরসির জন্য আবেদনই করতে পারেননি| সংখ্যাটা কম হলেও এই সংশোধনীতে তাঁরাও নাগরিকত্ব পাবেন| তাঁর কথায়, একজন হিন্দুও যেন নাগরিকত্ব নিয়ে বিপাকে না পড়েন, সে জন্যই এই সংশোধনী|