Barak UpdatesHappeningsBreaking News

জিসি কলেজে ভর্তি হয়ে পরে ভুগবে না তো ছাত্রছাত্রীরা! লিখেছেন অধ্যাপক দিলীপ কুমার দে

//অধ্যাপক দিলীপ কুমার দে//
শিলচরের ঐতিহ্যবাহী গুরুচরণ কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির বিজ্ঞাপন নিয়ে নানা প্রশ্ন, সন্দেহ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞাপনে জি সি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদি অধ্যক্ষ দাবি করেন যে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়ে গেছে তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পঞ্জিয়ক ( রেজিষ্ট্রার) , পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কারা? বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী উক্ত পদাধিকারী দিয়ে থাকেন, অধ্যক্ষ ডিগ্রী দিলে সেটির গ্রহণযোগ্যতা এই অঞ্চলের বাইরে থাকবে কি না সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
    দ্বিতীয়তঃ, জিসি কলেজ কি এখন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছে? যদি তাই হয় তবে এখন থেকে সিমেষ্টার পরীক্ষা কোন আধিকারিকের তত্বাবধানে হবে, কে ফল প্রকাশ করবেন আর কে নম্বর-পত্র দিবেন?
        জি সি কলেজে এখনও সিনিয়র সেকেন্ডারি (১১+১২ ক্লাস), স্নাতক ( নতুন চার বছরের) কোর্স চালু আছে। সেসব সামলানোর জন্য শিক্ষক প্রয়োজন। অথচ এই কলেজে ( বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নীত হওয়ার আগ পর্যন্ত) কোন উপাধ্যক্ষ নেই, ৩৫ থেকে ৩৭ টি শিক্ষক পদ শূন্য। চার থেকে সাত হাজার টাকা ভাতা/সাম্মানিক দিয়ে ‘পার্ট টাইম’/ ‘কনট্রেকচ্যুয়েল শিক্ষক স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় নিয়োগ করে পড়াশোনা, পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ণ বজায় রাখা হচ্ছে। এসব  শিক্ষকদের পারিশ্রমিক একজন অদক্ষ দৈনিক মজুরের চেয়ে ৫০℅ কম। একজন ‘দা-কামলা’র  দৈনিক মজুরি শিলচরে পারে শত টাকা হলে  মাসে ২৪ কর্ম দিবসে দা৺ড়ায় ৫০০× ২৪ = ১২,০০০/- টাকা। এদের অনেকে দশ বা ততোধিক বছর থেকে শিক্ষকতা করে আসছেন। যদি সত্যিই জি সি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এইসব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের কোনও না কোন পদে বসানোর কথা ভাবা যেতে পারে, অন্ততঃ তাঁদের ত্যাগের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে বৈকি।
           বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হলে জি সি কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানোর জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা আশু প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঘর নেই, শ্রেণীকক্ষ নেই, অধ্যাপক নিযুক্তি নেই, পরীক্ষাগার গড়ার উদ্যোগ নেই, উপযুক্ত কর্মী নেই। সেসব রাতারাতি ব্যবস্থা করা যায় না। অন্য বাড়ি ভাড়া করে না হয় শ্রেণী কক্ষের ব্যবস্থা করা গেল। কিন্তু  উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণীতে পড়াবার জন্য যেখানে বছরের পর বছর ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি সেখানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানোর জন্য দু-তিন জন অধ্যাপক নিয়োগ বা ধার করলেই তো হবে না। শৈক্ষিক ব্যবস্থা ও শৈক্ষিক বাতাবরণ তৈরী একদিনে হবে না জানি, কিন্তু পরিকল্পনা, অর্থ মঞ্জুরি, ও প্রয়াস তো চাই। তা না হলে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তো আমাদের শংকা থাকবেই।
       প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য গুরুচরণ কলেজের অধ্যক্ষ, যার কলেজে কোন উপপাধ্যক্ষই নেই, তিনি আবার শিলচর শহরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘কাছাড় কলেজ’ এর অধ্যক্ষের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। সেখানেও কোধ উপাধ্যক্ষ নেই। সেই কাছাড় কলেজে অন্ততঃ ২৫ জন শিক্ষকের পদ দীর্ঘকাল যাবৎ শূন্য পড়ে আছে। কোন কোন বিষয়ে সাম্মানিক ( অনার্স) পাঠক্রম চালু আছে, অথচ একজনও শিক্ষক নেই। জানি না ঐসব কলেজের গভর্নিং বডির কর্তাব্যক্তিরা কেন আসন আকড়ে আছেন। এসব দেখে জিসি কলেজের মান্যবর অধ্যক্ষের চৈতন্য হওয়ার কথা, কিন্তু তিনি সম্ভবত রেজিষ্ট্রার হবার আশায় তড়িঘড়ি করছেন। অবশ্য তিনি খুবই উচ্চ শিক্ষিত এবং একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিষ্ট্রার হবার যোগ্যতা রাখেন।
        আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পেছনে দীর্ঘ  গণ আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদে আইন পাশ করার পরও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এর একটি নির্ধারিত ব্যাপ্তি অঞ্চল ( জুরিসডিকসন) আছে। আসামের  বরাক উপত্যকা ও পাহাড়ী জেলা গুলো এর অঞ্চল ভূক্ত। এখন কেন্দ্রীয় আইনের সংশোধন না করে একটি মাত্র কলেজকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্মতি/ অনুমোদন/ জ্ঞাপন ছাড়া যখন তখন স্বয়ম্ভু করতে রাজ্যের আইন সভার আছে কি না সেটা আইন বিশারদগণ জানেন। তবে শৈক্ষিক সৌজন্য দাবি করে যে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখিত জ্ঞাপন করার ও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়োজন অবশ্যই আছে, যা এক্ষেত্রে উল্লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়।প্রায়  না চাইতেই বিনা আন্দোলনে জি সি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেউ কেউ উপরি পাওনা ভেবে থাকলেও শৈক্ষিক বিষয়গুলো অবজ্ঞা করা উচিত হবে না।
         কেন্দ্রীয় মূল্যায়ন সংস্থা ন্যাক ( ন্যাশনাল এসেসমেন্ট এন্ড এক্রিডিটেশন কাউন্সিল) যে গ্রেডই দিয়ে থাকুক, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্রের গ্রহণযোগ্যতা দেশে ও বিদেশে রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে সুনামের সাথে নানা পদে বৃত আছেন, গবেষণা করে সুনাম অর্জন করেছেন। কিছু কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও আসাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি উজ্জ্বল স্থান অর্জন করেছে।
      আমার মত অনেকে গুরুচরণ কলেজের প্রাক্তনী, আবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক। আমরা উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি কামনা করি। আমরা চাই না ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হোক। কোনো এক সময়ে ‘ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ যে দুর্নাম অর্জন করেছিল সে অবস্থায় যেন আমাদের  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেতে না হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker