Barak UpdatesHappeningsBreaking News

ছেলে আমেরিকায়, মেয়ে ওড়িশায়, অবসরপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুতে পাশে পুলিশ
Son in USA, daughter in Odhisa, police stands beside deceased retired Chief Engineer

৩০ এপ্রিলঃ মারা গেলেন আসাম সরকারের পূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিজিতকুমার রায়। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। রেখে গিয়েছেন স্ত্রী রত্না রায়, পুত্র শান্তনু, কন্যা মৌসুমী, পুত্রবধূ, জামাতা, ১ নাতি ও ২ নাতনি সহ অসংখ্য স্বজনদের। কিন্তু লকডাউনের দরুন সবাই থেকেও গত ২৩ এপ্রিল স্বামীর মৃত্যুর পর একা হয়ে পড়েন ৭৫ পেরনো রত্নাদেবী। ছেলে বছর পঁচিশেক ধরে আমেরিকায় চাকরি করেন, মেয়ের সংসার ওড়িশায়। লকডাউনের দরুন আত্মীয়, পরিচিতজনেরাও আসতে পারছেন না। চিন্তিত শান্তনুবাবু সুদূর আমেরিকা থেকে টুইটারে আসাম পুলিশকে বিষয়টি জানান।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছুক্ষণের মধ্যে শিলচর বিবেকানন্দ কো-অপারেটিভ হাউসিং সোসাইটি স্থিত বাড়িতে উপস্থিত হন কাছাড়ের পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেবরায়। সঙ্গে ডিএসপি সঞ্জয় ভার্গব, রিজার্ভ অফিসার বিমলেন্দু দে। জানতে পারেন, মুখাগ্নি করবেন বিজিতবাবুর ভাতিজা। তাকে করিমগঞ্জ থেকে আসতে হবে। লকডাউনের মধ্যে এ নিয়েই সমস্যায় তাঁরা। মানবেন্দ্রবাবু কথা বলেন করিমগঞ্জের এসপি-র সঙ্গে। পুলিশের ব্যবস্থাপনায় দ্রুত তিনি চলে আসেন। ধীরে ধীরে আত্মীয়রাও জড়ো হন। কিন্তু পাঁচজনের বেশি শ্মশানে যাওয়া যাবে না জেনে বিমর্ষ হয়ে পড়েন অনেকে। ডিএসপি, রিজার্ভ অফিসার বলেন, ‘বেশি মানুষের কী প্রয়োজন সেখানে! আমরা আছি। চিন্তার কিছু নেই।’  থাকলেনও তাঁরা একেবারে শেষমুহুর্ত পর্যন্ত।

শুধু কী আর এই টুকু। ৫ মে বিজিতবাবুর শ্রাদ্ধ। লকডাউনের দরুন এখন কিছুই করবেন না রত্নাদেবী। শুধু ধর্মীয় রীতি মেনে যেটুুকু করা। সেখানেও কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, বুধবার পুলিশ কর্তারা গিয়ে খোঁজ নিয়ে এলেন। বিজিতবাবুর শ্যালক দূরদর্শন কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বিনীত রায় বলেন, ‘পুলিশকর্তাদের সাধুবাদ জানানোর ভাষা নেই। অনেকটাই করলেন তাঁরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মী এবং পূর্তবিভাগের অফিসাররাও গিয়েছিলেন। তাদেরও ধন্যবাদ।’ শান্তনুবাবু লিখে পাঠালেন, ‘যারা ওই মুহুর্তে উপস্থিত ছিলেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর পুলিশ প্রশাসন যা করল তা একস্ট্রা-অর্ডিনারি।’ পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেবরায় বললেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের কর্তব্য।’

প্রসঙ্গত, বিজিতবাবু বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। হৃদযন্ত্রের সমস্যায় পেসমেকার লাগানো হয়েছিল।  শেষ মুশকিলটা হয়, পড়ে গিয়ে পা ভেঙে। ২১ দিন বিছানায় থেকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে আসাম পূর্ত বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়, মিকির পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় সীমান্ত সড়ক তৈরি, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শিলচর রিজিয়নাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান এনআইটি) নির্মাণে বিজিতবাবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker