Barak UpdatesHappeningsBreaking News
বাঙালিদের নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুক দল ও প্রার্থীরা, দাবি বরাক বঙ্গের
ওয়েটুবরাক, ২০ মার্চঃ নাগরিকত্ব, ভাষা, নিযুক্তি, জমির অধিকার ইত্যাদি ইস্যুতে আসামের বাঙালিরা বিপন্ন। তাঁদের সুরক্ষায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি চাইল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। আজ শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেন, বাঙালিরা আজ এ রাজ্যে উপেক্ষিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত। প্রতিনিয়ত তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার প্রয়াস চলছে। শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে রাজনৈতিক দলগুলি এ নিয়ে উদাসীন। বিগত বিধানসভায় অধিকাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন মৌন।
বরাক বঙ্গের সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেন, স্বজাতির বিপন্ন অবস্থায় বিধানসভার ভেতরে-বাইরে একমাত্র কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থই সরব ছিলেন। আর কারও মুখে এ সবের বিরোধিতায় টু শব্দটি শোনা যায়নি।
তাঁদের কথায়, এ রাজ্যের আর্থ-সামাজিক বিকাশে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আসামের দুই উপত্যকার বাঙালিরাও সমানভাবে অংশীদার। কিন্তু নানা কৌশলে এই জাতিগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলে। বিরাট সংখ্যক বাঙালির পিঠে ডি বা সন্দেহভাজন ভোটার তকমা সেঁটে ভোটদান সহ তাদের যাবতীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সময়ে যে ১ লক্ষ ৮ হাজার ডি ভোটার রয়েছেন,তাঁদের সিংহভাগই বাঙালি। ৯৮৮জন ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পে অবর্ণনীয় দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। ২৯ জনের ডিটেনশন ক্যাম্পেই মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, এনআরসি-ছুট ১৯ লক্ষের অধিকাংশ বাঙালি। একদিকে, নতুন করে এনআরসি তৈরির কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে এনআরসি-ছুটদের ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।
বঙ্গ সাহিত্যের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালির জন্য দুয়ার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সূত্রে জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী জানান, নিযুক্তি পরীক্ষায় ৩০ নম্বরের অসমিয়া ভাষাজ্ঞান বাধ্যতামূলক করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে নিযুক্তি দিয়ে বরাক উপত্যকায় পাঠানোর প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। অথচ সরকারি পরিসংখ্যানেই বলছে অসমের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হচ্ছে বাঙালি। তারা মোট জনসংখ্যার ২৮.৯২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেন, আসাম ভাষা আইন অনুসারে বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা। কিন্তু তা এখানে নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সরকার নিজেই নানাভাবে বৈষম্যের রাজনীতি করে তুলেছে। গৌতমবাবু সরকারের কর্পাস ফান্ডের উল্লেখ করে বলেন, ২৩টি জনগোষ্ঠীর সাহিত্য সংগঠনকে ডেকে ৩ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। যার ন্যূনতম সুদ বছরে ১২ লক্ষ টাকা। এখানেও বাঙালি উপেক্ষিত। এর জন্য দায়ী এখানকার রাজনৈতিক অভিভাবকদের দায়হীন নির্লিপ্ততা। ভোটের পর আসাম চুক্তির 6 নং দফা রূপায়ণ কমিটির সুপারিশও কার্যকর করা শুরু হবে বলে বরাক বঙ্গের নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা করছেন। তাই বাঙালির ভবিষ্যত সুরক্ষার বিষয়গুলি ভোটের আসরে আলোচিত হয়, তা-ই চায় বরাক বঙ্গ। গৌতমবাবুর কথায়, দায়হীন প্রতিনিধি নির্বাচন করলে উত্তর প্রজন্ম ক্ষমা করবে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে মত বিনিময় করেন সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য, ইমাদউদ্দিন বুলবুল, অমূল্যচন্দ্র পাল, অনিল পাল, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, দীপক সেনগুপ্ত প্রমুখ৷