Barak UpdatesHappeningsBreaking News
পরিচালন সমিতির সভাপতিকে অপসারণের দাবিতে কাছাড় কলেজে ধরনাSit-in demonstration at Cachar College in demand of removal of G.B. President
১১ জুনঃ সোমবার অধ্যক্ষ, প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং ৪ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছেন কাছাড় কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি ড. বিবি দাস। মঙ্গলবার সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ধরনায় বসলেন অভিযুক্ত ৪ শিক্ষক। আনন্দলাল ঘোষ, বিশ্বজিত পুরকায়স্থ, রতনলাল দাস ও অজয় রায়। সঙ্গে ছিলেন অপূর্ব চক্রবর্তী, কমলকান্তি দাস, সোমা আচার্য, পারমিতা দাস, স্মৃতি পাল, নিপামাচা সিংহ, আব্দুল কাদির বড়ভুইয়াও। চন্দন দে ধরনায় না বসলেও তিনি তাঁদের দাবির সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করেন। বেলা ১১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে এই ধরনা। পরিচালন সমিতির সভাপতি পদ থেকে ড. দাসকে অপসারণের জন্যও আওয়াজ তোলেন তাঁরা। প্ল্যাকার্ডেও এই দাবিতেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সঙ্গে যোগ করেন, ১০দিনের মধ্যে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিযুক্ত করতে হবে। বিবি দাসের চার বছরের কাজের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তও চান তাঁরা।
বিবাদের কেন্দ্রে কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার। বিবি দাসের অভিযোগ, মনগড়া পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে অনৈতিকভাবে বহু টাকা নিয়ে গিয়েছেন পূর্বতন সেন্টার ইনচার্জ ও কো-অর্ডিনেটররা। নিয়ম অনুসারে অধ্যক্ষরা হন সেন্টার ইনচার্জ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পূর্বতন অধ্যক্ষ ড. দেবাশিস কর, বর্তমান অধ্যক্ষ লক্ষ্মীতন সিংহ, পূর্বতন সেন্টার কো-অর্ডিনেটর বিশ্বজিত পুরকায়স্থ, আনন্দলাল ঘোষ এবং বর্তমান কো-অর্ডিনেটর রতনলাল দাস। অজয়বাবুকে তাদের সহযোগী বলা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে তিনি এসইউসিআই করে ঘুরে বেড়ান।
অভিযোগ খণ্ডন করে আনন্দবাবু বিবি দাসকেই পাল্টা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেন। অন্যরাও বলেন, দাসবাবুর এ সব করার একটাই উদ্দেশ্য, স্থায়ী অধ্যক্ষের নিযুক্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করা। তাহলে কয়েকমাসের মধ্যে লক্ষ্মীতন সিংহ অবসর নিলে তিনি অনিত্যবিনোদ দেবকেই ফের অধ্যক্ষের চেয়ারে বসাবেন। আর দুজনে মিলে মর্জিমত কলেজ চালাবেন, লুটপাট করবেন।
আনন্দবাবু বলেন, ড. দেবাশিস করকে নিয়ম ভেঙে রিলিজ দিয়ে বিবি দাস তাঁর অনৈতিক কাজের সূচনা ঘটান। কলেজের সামনে পূর্ত বিভাগের মাটিতে টেন্ডার ছাড়া নালা তৈরি করান। এমন ব্যক্তির নাম স্থায়ী অধ্যক্ষের জন্য পাঠিয়েছিলেন, যিনি এই পদের জন্য আবেদনই করতে পারেন না। পরে তাঁর পাঠানো সুপারিশ শিক্ষা দফতর খারিজ করে দিয়েছে। বলে দিয়েছে, তিনমাসের মধ্যে নতুন বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য। ২১ মাসেও বিবি দাস তা করেননি।
আনন্দবাবুর অভিযোগ, লক্ষ্মীতন সিংহের সাসপেনশনের পর অনিত্যবিনোদ দেব অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলেও মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ইনচার্জ হতে চাননি। সাড়ে চার মাস তাঁকে বিনা পারিশ্রমিকে সেই দায়িত্বও অতিরিক্ত হিসেবে পালন করতে হয়েছে। তখন দেববাবু উল্টে তাঁকে নানাভাবে অসহযোগিতা করেছেন। ডিএলএড পরীক্ষার্থীদের ওয়ার্কশপ তিনি কলেজে করতে দেননি। তাঁকে কাছাড় হাই স্কুলে ওয়ার্কশপ করাতে হয়েছে। নইলে ২০০ শিক্ষকের ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিল। ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট সেন্টার ইনচার্জের দায়িত্ব নিয়েই দেববাবু সমস্ত ব্যাঙ্ক লেনদেন বন্ধ করে দেন। তাতে শিক্ষকদের পারিশ্রমিক দিতে পারেননি। তাঁর নিজের পারিশ্রমিকও আটকে পড়ে। আনন্দবাবুর কথায়, আমার বদউদ্দেশ্য থাকলে নিজে সব দায়িত্ব পালনের সময় নিজের সমস্ত পাওনা আদায় করে নিতাম।
কিছুদিন পরেই আনন্দলাল ঘোষকে কো-অর্ডিনেটর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় হেমন্ত বরাকে। নতুন পারিশ্রমিক হার তৈরি করা হয়। তাঁকেও নতুন হারে পারিশ্রমিক নিতে বলা হয়। তিনি তা নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর বক্তব্য, পুরনো কাজের জন্য নতুন হারে পারিশ্রমিক হতে পারে না। সেই তাঁর পাওনা ঝুলে থাকে। কিছুদিন আগে লক্ষ্মীতন সিংহ ফের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলে তিনি আনন্দবাবুর পাওনা ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মিটিয়ে দিতে হেমন্তবাবুকে নির্দেশ দেন। হেমন্তবাবু তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে চেক তুলে দেন তাঁর হাত। পরদিনই দাসবাবু ব্যাঙ্ককে চেক আটকে দিতে বলেন। জোর করে চেকে সই করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম তদন্তে এলে দাসবাবু তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি। তাঁরা আনন্দলাল ঘোষের পারিশ্রমিক পুরনো হারে মিটিয়ে দিতে লিখিতভাবে জানিয়ে যান। এর পরও তাঁর টাকা আটকে রয়েছে। দাসবাবু মর্জিমত টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন জেলাশাসকের কাছে। সেই হিসেবে সোমবার ম্যাজিস্ট্রেট এলে তদন্ত করে যান। সেই তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা না করে সে দিনই থানায় এফআইআর করে দেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি। এতে ক্ষিপ্ত হন অন্য শিক্ষকরাও।
অজয় রায়ের বিরুদ্ধে এফআইআরে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে এসইউসিআই করার যে অভিযোগ করা হয়েছে, অজয়বাবু তা অস্বীকার করেন। তাঁর কথায়, ছাত্রছাত্রীরাই তাঁর সাক্ষ্মী, তিনি কোনওদিন ক্লাশ ফাঁকি দেননি।