Barak UpdatesHappeningsBreaking News
উধারবন্দের মণ্ডপে পাখি দিয়ে অভিনব সাজসজ্জা, অভিযোগ পেয়ে ছুটে গেলেন ম্যাজিস্ট্রেটPandal decorated at Udharbond with exotic birds, Magistrate rushes after getting complain
৪ অক্টোবর : দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জন করতে এ বছর মণ্ডপের প্রায় বন্ধ ঘরে কয়েকশ’ পাখি আটকে রেখেছে উধারবন্দের একটি পুজোমণ্ডপ। এ নিয়ে এখন শিলচর সহ বরাক উপত্যকা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়াও। সাধারণ মানুষের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছে বন বিভাগ। কীভাবে এই মণ্ডপ বিভাগের ছাড়পত্র পেলো সে কথাও উঠেছে। কীভাবেই বা এমন একটি মণ্ডপ উদ্বোধন করলেন জেলাশাসক নিজে। শুক্রবার এমন পরিস্থিতিতে যাবতীয় বিষয় দেখতে ছুটে গেছেন ম্যাজিস্ট্রেট।
উধারবন্দ কালীবাড়ি রোড সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি গত কয়েক বছর থেকেই বিগ বাজেটের পুজো আয়োজন করে এখন বরাক উপত্যকার কেন্দ্রবিন্দুতে। ফলে এই পুজোকে ঘিরে সবার একটা আকর্ষণ আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এ বছর উদ্যোক্তারা মণ্ডপের ভেতর সাজসজ্জার নামে তিনশ’ পাখি নিয়ে এসেছেন।
এগুলো খাঁচায় বন্দি করে মণ্ডপের ভেতরেই রাখা হয়েছে। আর এ নিয়েই সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, পাখি থাকার জন্য যে পরিবেশ দরকার তা মণ্ডপের ভেতরে নেই। প্রায় সবদিক বন্ধ ঘর। পুরো মণ্ডপের গরম বাতাস বাইরে বের করার জন্য মাত্র দুটি ফ্যান লাগানো হয়েছে। তা একেবারেই যথেষ্ট নয়।
দর্শনার্থীরা ভেতরে ঢুকে মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছেন। পাখির জন্য এই ফ্ল্যাশ খুব ক্ষতিকারক। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে মাইকে যদিও ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করতে বলা হচ্ছে, কিন্ত তা একেবারেই দায়সারা গোছের। কারণ মণ্ডপের ভেতরে দেখা গেল স্বেচ্ছেসেবকদের সামনেই দিব্যি সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত।
সবথেকে বড় বিষয়টি হচ্ছে, মণ্ডপের ভেতরের দমবন্ধ পরিবেশ। একজন মানুষ যদি টানা কয়েক ঘণ্টা মণ্ডপের ভেতর বসে থাকেন, তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত অসুবিধে দেখা দেবে। সেক্ষেত্রে এই পাখিগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে টানা কয়েকদিন থাকছে। দিনরাত সাউন্ড সিস্টেম, দর্শনার্থীদের মণ্ডপে আনাগোণা, হুল্লোড়, এতজন দর্শনার্থীর একসঙ্গে ভেতরে থাকায় তাপমাত্রার বৃদ্ধি ইত্যাদি পাখিদের জন্য শুধু ক্ষতিকারকই নয়, তাদের জীবনের জন্যও এক অশনি সংকেত। রাতে সাধারণত পাখিরা ঘুমোয়, এই পাখিরা এক সপ্তাহ তাহলে কি ঘুমোবে না? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান পার্থঙ্কর চৌধুরী বলেন, একটি পুজোমণ্ডপে এভাবে দিনের পর দিন পাখি আটকে রাখা মোটেই ঠিক হয়নি। তার ওপর এই পাখিগুলো বিদেশি এক্সোটিক। ফলে এগুলো এখানে কিনে আনার ক্ষেত্রে আইন মানা হয়েছে কি না, সেটাও এক বড় প্রশ্নের। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই পাখিগুলো যে কিনল, বা যারা বিক্রি করল, তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসার অনুমোদন রয়েছে কি না তাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, এই কাজটি অবৈধভাবে হলে একটি বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। সেক্ষেত্রে এর বিচার হবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
তিনি এও বলেছেন, কাছাড়ের জেলাশাসক কীভাবে এমন একটি পুজোমণ্ডপ ঊদ্বোধন করলেন, তা বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের আমলারা পরিবেশ বা বন্যপ্রাণী বিষয়ক আইন সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিবহাল নন। কিন্তু তা ঠিক নয়, এর প্রাথমিক বিষয়গুলো এঁদের জানা উচিত। জেলা বন সংমণ্ডল আধিকারিক সান্নিদেও চৌধুরীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এই পাখিগুলোকে পুজোমণ্ডপে রাখার ব্যাপারে বন বিভাগের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর দাস ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেছেন, খাঁচায় বন্দি অসহায় কিছু পাখিকে দেখতে দর্শনার্থীরা উধারবন্দের কালীবাড়ি রোডের পুজোমণ্ডপে নিশ্চয় ভিড় জমাননি! নান্দনিক প্রতিমা আর মণ্ডপের ভেতরের কারুকার্য দেখতেই প্রতি বছর সেখানে ছুটে যান সবাই। পাখিদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দি করে মানুষ টানার যে প্রয়াস পুজো কমিটির সদস্যরা করেছেন তা সমর্থযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, মানুষের আনন্দের শব্দে পাখিদের চাপা আর্তনাদ ঢাকা পড়ে গিয়েছে। যখন পাখিদের ঘুমোবার সময়, তখনই তাদের বাধ্য করে জাগানো হচ্ছে। আর রয়েছে মোবাইলের ফ্ল্যাশ। উদ্দোক্তাদের তরফ থেকে দায়সারাভাবে একটা ঘোষণা করা হয়েছে, স্মার্টফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ফটো তুলবেন না, কিন্তু অনেকেই তা শোনেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এমন আজব প্রজেক্ট সরকারী ছাড়পত্র পেলো কি করে, ভাবতেই অবাক লাগছে!
অন্যদিকে পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, এই পাখিগুলো গৃহপালিত এবং এগুলো ব্যবহারের বৈধ অনুমতি তাদের রয়েছে। এই অনুমতিগুলো বাইরে ডিসপ্লে করা হবে। পাখিগুলো কলকাতার খোলা বাজার থেকেই কেনা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি দাবি করেন, এই পাখিগুলোকে যত্নসহকারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য ৪-৫ জন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। এরা পাখির খাবার-দাবার দেওয়া, খাঁচার ভেতর পরিচ্ছন্ন করে তোলা ইত্যাদি কাজে রয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, পাখিকে রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব এখানে আছে।