Barak UpdatesBreaking News
বরাকের ভবিষ্যৎঃ ওপিনিয়ন মোভার্সের আলোচনায় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলবেOpinion Movers providing direction in shaping future of the Valley
-ইমাদউদ্দিন বুলবুল-
গত ৩ নভেম্বর ইলোরা হোটেলে বরাকের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি মনোজ্ঞ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ওপিনিয়ন মোভার্স নামে শিলচরের একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ এই সভার আয়োজন করে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. তপোধীর ভট্টাচার্য আলোচনার সূত্রপাত করলেও বরাকের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে চাননি। পরবর্তীতে আরও বলবেন, এই আশ্বাসের মধ্য দিয়ে, এই মূল্যবান আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকেও, তিনি যথোচিত আশা পূরণে অপারগ থাকেন। দৈনিক যুগশঙ্খের সম্পাদক অরিজিত আদিত্য সমগ্র অসমের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সঠিকভাবে বর্ণনা করে বরাক পৃথকীকরণের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
শ্রমিকনেতা কিশোর ভট্টাচার্য অসমের জনসংখ্যার বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে স্পষ্টভাবে কাছাড় পৃথকীকরণের বিরুদ্ধে মতামত দেন। তিনি বলেন, বরাকে হিন্দু-মুসলমানের সংখ্যা প্রায় সমান। উভয় সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হতে পারছে না। কিশোরবাবুর মতে, দেশভাগের ফলে বাঙালি হিন্দুর মনে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল, সেই ভীতি আজও বিদ্যমান। বেশির ভাগ হিন্দুর মনে একটি আশঙ্কা, বরাক আলাদা রাজ্যে পরিণত হলে মুসলমানরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাবে। ফলস্বরূপ বাঙালি হিন্দুকে হয়তো আবার বাস্তুচ্যুত হতে হবে। তাই তিনি বরাক পৃথকীকরণের দাবিকে খারিজ করে দিয়ে অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন।
প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী অরবিন্দ রায় স্পষ্টভাষায় বলেন, আসাম রাজ্যের রাজনৈতিক চরিত্র দ্রুত পাল্টাচ্ছে। খিলঞ্জিয়ার স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আসামের বাঙালিরা অচিরেই কোণঠাসা হবে। এ ছাড়া, আলফার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যে শান্তিচুক্তি হতে চলেছে, এতে বরাক উপত্যকার যেটুকু রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বর্তমানে রয়েছে, ওই সময় তাও থাকবে না। তখন বরাক পৃথকীকরণ অনিবার্য হয়ে উঠবে। শিক্ষকনেতা কৃষ্ণেন্দু রায় বরাকের শিক্ষাজগতে অসমিয়া ভাষার ক্রমাগত আক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেন। বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলা না জানা অসমিয়া মাধ্যমের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবিরাম পাঠানো হচ্ছে। এতে বরাকের পঠনপাঠনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই আলোচনায় উপস্থিত শ্রোতারাও অংশ নেন এবং সামূহিক ক্ষোভের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষিত হয়। গ্রুপের অ্যাডমিন দীপক সেনগুপ্ত এই সভার আয়োজন এবং পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা নেন।
এই আলোচনা সভায় আমি বরাক পৃথকীকরণের দাবির পক্ষেই নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করি। এ কথা আমি স্বীকার করি যে, ১৯৬১ সালে বরাক উপত্যকায় যে সাহসী সংগ্রামী নেতৃত্ব ছিল, আজ তা নেই। আর্থ-সামাজিক ব্যাপারে এখানকার মানুষের ধীশক্তির প্রচণ্ড অবনমন ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে অসমের বাঙালি নেতৃত্বেরও একই দশা। এজন্যই শিলাদিত্য দেবের মত একজন মধ্যম নেতা আজ বাঙালির নেতা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন। এর ফলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ছে। তবে এটাকে আমি একটা সাময়িক পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করি। বরাক আলাদা হলে দ্রুত এই ভূমির উন্নয়ন সম্ভব হবে। এখানে সঞ্চালক দীপক সেনগুপ্ত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক বারিদবরণ ভট্টাচার্যের হাইলাকান্দিতে প্রদত্ত এক সভার ভাষণের উল্লেখ করেন। অধ্যাপক ভট্টাচার্য বলেছিলেন যে, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাধ্যবাধকতায় বরাক এক সময় আলাদা হবেই। আমিও তা বিশ্বাস করি।
এই সভার সূত্র ধরে আগামী অনেকদিন বরাকে বিভিন্ন মহলে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলবে, তা নিশ্চিত।