Barak UpdatesBreaking News
মা-ছেলের শেষ আশাও কেড়ে নিয়েছে রাজ্যসভার অধিবেশনMother in detention camp, teenager son running from pillar to post for her release
২১ ফেব্রুয়ারিঃ কয়দিনের মধ্যেই সব উচ্ছ্বাস এমন বিফলতার চেহারা নেবে, কে জানত! ৮ জানুয়ারি লোকসভায় বিল পাশ হতেই আনন্দ আর ধরছিল না অভিজিত বর্ধনের। সবাইকে ফোন করে বলছিলেন, এ বার মা-কে বাড়ি নিয়ে আসবেন। দুই বছর ধরে মা শিলচরের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি। আইনজীবী বললেন, আরও একটা হার্ডল বাকি। রাজ্যসভায় বিল পাশ হলে তবেই তা আইনে পরিণত হবে।
২০১৩ সালে বাবার মৃত্যুর দরুন মাধ্যমিকে বসা হয়নি অভিজিতের। লোকসভা, রাজ্যসভা অতশত বোঝেন না তিনি। তবু বাজেট অধিবেশনের প্রতিদিন টিভিতে খবর দেখেছেন। না, একবারের জন্যও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনা হয়নি রাজ্যসভায়। ১৩ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি হতেই মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন অভিজিত।
শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল জয়পুরের সীমা বর্ধনকে বিদেশি ঘোষণা করলে হাইকোর্টে যান পুত্র অভিজিত। হাইকোর্টই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ভারতে থাকার আবেদন করতে পরামর্শ দেয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে যে সব হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্টান, জৈন, পারসি বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসে বসবাস করছেন, তাঁদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা হবে না। ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জারি করেছিল সেই বিজ্ঞপ্তি। আবেদন করেছিলেন অভিজিত। লাভ হয়নি। পরে হিন্দু লিগ্যাল সেল এ নিয়ে নাড়াচাড়া করলে মন্ত্রক জানিয়েছে, তাঁর আবেদন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যস, ওখানেই আটকে যায় সবকিছু।
এ বার লোকসভায় বিল পাস হতেই আশায় বুক বাঁধেন অভিজিত ও তার ছোট ভাই-বোন। কিন্তু রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি হতেই সব গুঁড়িয়ে যায়। সীমাদেবীর দুই ছেলে, এক মেয়ে। বাবা নিরঞ্জন বর্ধনের নামে ১৯৬৫ সালে ইস্যু করা সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট তাঁর হাতে রযেছে। কিন্তু তিনি যে তাঁর মেয়ে, সেই প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
অভিজিত জানান, কী করে দেখাবেন, ১৬ বছর বয়সে মায়ের বিয়ে। ফলে বিয়ের আগে ভোটার তালিকায় নাম থাকার প্রশ্ন ওঠে না। আর বিয়ের পরের তালিকাতে তো স্বামীর নাম। স্কুল সার্টিফিকেটের ডুপ্লিকেট কপি সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাও মানতে রাজি হল না হাইকোর্ট। দোকান কর্মচারী অভিজিতের পক্ষে আর সুপ্রিম কোর্টের দরজায় কড়া নাড়া সম্ভব হয়নি। তাই অপেক্ষা করছিলেন রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে নতুন করে আবেদন জানাবেন।
কিন্তু এখন? এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না হতাশায় ভেঙে পড়া অভিজিত।