Barak UpdatesHappeningsBreaking News
“সব সম্মানই হাসপাতালের, আমি শুধু গ্রহণ করি”, বললেন আসামের প্রথম ম্যাগসেসে জয়ী রবি কান্নান
ওয়েটুবরাক, ৩১ আগস্ট : ক্যানসার শুনেই কেঁদে আকুল রোগী সহ পরিবারের সদস্যরা৷ রোগ নিয়ে যত না চিন্তা, সবাই মিলে এর চেয়ে বেশি ভাবছেন চিকিৎসার খরচ নিয়ে৷ ডিরেক্টর রবি কান্নান বললেন, “টাকা-পয়সা নিয়ে ভেবো না৷ আমরা বিনা মাশুলে চিকিৎসা করাব৷” কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসায় এখন সুস্থ কাছাড় জেলার উধারবন্দের অশোকা নমঃশূদ্র, কালাইনের কবীর হোসেন৷ করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গার গোলাপজান বিবিকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আরেক সমস্যা৷ হাসপাতালে রয়েছে বলে মেয়ে বিনা মাশুলে চিকিৎসা পাচ্ছে, দুইবেলা খাবারও জুটছে৷ কিন্তু তাঁর সঙ্গে যে মা-বাবা রয়েছেন! তাঁরা কী খাবেন? কান্নান একদিন রাতে দেখেন, দুজনে মিলে মুড়ি খাচ্ছেন৷ জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, টাকা নেই৷ দুদিন ধরে ভাত খাওয়া হচ্ছে না৷ ক্যান্টিনে ফোন করলেন, তাঁরা যতদিন এখানে থাকবেন, হাসপাতালের খরচে খাবেন৷ এর পরই চালু করেন জনতা মিল৷ প্রতি দরিদ্র রোগীর সঙ্গে একজন বিনা খরচে খাওয়া৷ কিন্তু তাতেও কি সমস্যা মেটে! বহু রোগী মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দিচ্ছিলেন৷ তবে কি হাসপাতালের কোনও ভুলে এরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন? চালু করলেন বাড়িতে ফোন করে রোগীদের খবর নেওয়া৷ দেখা যায়, ব্যথায় কাতর রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া বড় কষ্ট৷ তৈরি হল হোম ভিজিট টিম৷ রোগীকে হাসপাতালে নয়, হাসপাতাল ছুটে যাচ্ছে রোগীর কাছে৷
তাই এ বারের রমন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ডের জন্য রবি কান্নানের নাম ঘোষণা হতেই শিলচর তো বটেই, গোটা বরাক উপত্যকায় আক্ষরিক অর্থেই বইছে আনন্দের বন্যা৷ সামাজিক মাধ্যমে দিনভর শুধুই কান্নান-চর্চা৷ বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চলছে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা প্রকাশ৷ বাদ যাচ্ছেন না রিকশাচালক, দিনমজুররাও৷ কী পুরস্কার পেয়েছেন, কোন মাত্রার সে পুরস্কার, সেইসব বোঝার ক্ষমতা না থাকলেও আনন্দের শরিক তাঁরাও৷ অনেকেরই মন্তব্য, “তিনি না এলে আমরা কি পারতাম, ক্যানসারের চিকিতসায় কলকাতা বা মুম্বই যেতে?”
কান্নানের অবশ্য আজও রুটিনে ফারাক নেই৷ আউটডোরে বসে রোগী দেখছিলেন৷ চোস্ত হিন্দির সঙ্গে ভাঙা বাংলায় রোগীর পরিজনদের আশ্বস্ত করছিলেন, ‘চিন্তা করিও না, শুধু হসপিটাল আসতে লাগব৷”
ম্যাগসেসে জয়ের প্রতিক্রিয়ায় শোনালেন কাছাড় ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পেছনের মানুষগুলির কথা৷ বললেন, কয়েকজন নন-মেডিক্যাল মানুষ সোসাইটি গড়ে একটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে, ভাবা যায়! তাই তিনি যখন প্রথম কাছাড় ক্যাসার হাসপাতালে আসেন, দেখেন, খুবই ছোট পরিসরের এক প্রতিষ্ঠান৷ মাত্র ২৩জন কর্মচারী৷ কিন্তু কখনও এমন মনে প্রশ্ন জাগেনি যে, “চেন্নাই ছেড়ে এসে ভুল করিনি তো?”
২০২৩ সালের রমন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ডের জন্য চারজনকে বাছাই করা হয়েছে৷ ইউজেনিউ লেমুস, মিরিয়ম কলোনেল ফেরার ও করবি রখসন্দের সঙ্গে ভারতের রবি কান্নান৷ ২০১৯ সালে রবিশ কুমার ভারতীয় হিসেবে এই অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন৷ এর পর কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর কান্নান৷ আসামের বললে, তিনিই প্রথম ম্যাগসেসে জয়ী৷ উত্তর-পূর্বে দ্বিতীয় ৷ ২০২০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রীতে সম্মানিত করে৷
কিন্তু তাঁকেই কেন? সব জায়গাতেই নির্বাচক মণ্ডলীর এক বক্তব্য, কোনও ক্যানসার রোগী যেন অর্থের অভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত না হন, এটিই যে লক্ষ্য কান্নানের৷ আর সেই লক্ষ্যপূরণে তাঁর ৪৫১ জন মেডিক্যাল-ননমেডিক্যাল ”সহকর্মী” নিজের সেরাটা দিয়ে চলেছেন৷ কান্নানের কথায়, “সব সম্মানই যে হাসপাতালের৷ আমি প্রধান বলে শুধু গ্রহণ করি৷”