Barak UpdatesFeature Story
৮২ মুসলমান পরিবারের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন জিতেন্দ্র কৈরিJitendra Koiri made arrangement for food & lodging of 82 Muslim Families
২২ জুনঃ রজনীখালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ হওয়া ৮২ পরিবার এখন কোথায় আছে? পক্ষকাল আগে উচ্ছেদের সময় যখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল, কী করছিলেন তাঁরা? তা জানতে ওয়েটুবরাক প্রতিনিধি শনিবার যান রজনীখালে।
ধলাই থানার পাশ দিয়ে গুরুদয়ালপুর পর্যন্ত ভালই রাস্তা। অটো চলাচল করে ওই পথে। গুরুদয়ালপুর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার খেতের আল ধরে ডানে-বাঁয়ে এগিয়ে রজনীখাল। খালের ওপর একটি পিলার ফেলা। ঝুঁকি নিয়ে ওই পিলারে পা রেখেই এগিয়ে যায় ছেলে-বুড়ো সবাই। খালের ও-পারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৮২ পরিবারের সবাই মুসলমান। জোতজমিতে বাড়ি বললে একটাই। জিতেন্দ্র কৈরির বাড়ি।
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে কাছাড় জেলার ধলাই রেঞ্জের রজনীখালে বসবাস করছেন ৮২ পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ। আগেও বহুবার উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাদের। এ বার যে তুলেই দেবে, আঁচ করতে পারেননি তাঁরা। হাতি লাগিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় সবকিছু। কোথায় যাবেন, কী করবেন দিশেহারা সবাই। মূল্যবান নথি, ঘরের আসবাব বের করে আনলেও রাখবেন কোথায়!
তখনই প্রতিবেশী জিতেন্দ্র কৈরি এগিয়ে গেলেন। আপাতত তার বাড়ি গিয়ে মাথা গুঁজতে বললেন সবাইকে। নিজেই উদ্যোগ নিলেন। কারও পুরনো বাড়ির টিন খুলে আনলেন। কারও জন্য ত্রিপালের ব্যবস্থা করলেন। প্রথম কিছুদিন নিজের ঘরেই সকলের জন্য দু বেলা খিচুড়ির ব্যবস্থা হল। পরে অবশ্য বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গেলে নিজেদের মতো রান্নাবান্না শুরু হয়। কিন্তু ত্রাণে কি আর পক্ষকাল চলে! ফলে শুরু হয়ে গিয়েছে অর্ধাহার, অনাহার। তবে যখন কেউ খিদের জ্বালা আর সইতে পারেন না, জিতেন্দ্রর ঘরে গিয়েই পাত পাড়েন। হাসিমুখে তাদের খেতে দেন জিতেন্দ্রর স্ত্রী সঙ্গীতা। তিনি ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা।
না, একমাত্র ওই দায়িত্বের দরুন এত মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেননি জিতেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘আগেও দেখেছি, উচ্ছেদের হুমকি পেলেই তাঁরা বাবার কাছে এনে সমস্ত মূল্যবান কাগজপত্র রেখে যেতেন। বাবা বলতেন, বেশি বিপদ হলে কয়দিন আমাদের বাড়িতেই না হয় থাকবে।’ এখন বাবা জীবিত না থাকলেও তাঁর ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দিলেন ছেলে।
আলাউদ্দিন, রবিজুল আলি, জহুরুদ্দিন-রা বললেন, জিতেন্দ্র জায়গা না দিলে কী যে হতো! কোথায় রাত কাটাতেন এতগুলো মানুষ! ৫২ বছরের এনামুদ্দিন বললেন, জিতেন্দ্র আমার চেয়ে বয়সে ১৫ বছরের ছোট। কিন্তু কাজ করেছে আমার বাবার মতো। তার ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না।
রজনীখালের পাশেই হাতিমারায় প্রচুর মুসলমান পরিবার রয়েছে। হলে কী হবে! তারাও যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে থাকেন। রজনীখালের মানুষ ওখানে গিয়ে উঠলে না তাদেরও উচ্ছেদ করে দেয়! ওই ভয়ে তারা কারও খবর নেওয়ার সাহস পাননি। এই সময়ে অবশ্য ধীরে ধীরে অনেকে জিতেন্দ্রর বাড়ি থেকে সরছেন। কিশোরী-যুবতীদের অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গিয়েছে। কেউ কেউ পুরনো জায়গাতেই ত্রিপাল টাঙিয়ে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করছেন।
স্থানীয় বিজেপি নেতারা উচ্ছেদের পক্ষে কথা বললেও তারা জিতেন্দ্র কৈরির ভূমিকাকে সম্মান জানান।