NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
আবেদন-নিবেদনে নয়, বরাক বঙ্গকে অনুদান দিতে হলে দিন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে, বললেন তপোধীর
৩ ফেব্রুয়ারি: সম্প্রতি আসাম সরকার অসম ভাষা গৌরব ও প্রজ্ঞান ভারতী প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের একুশটি ভাষা গোষ্ঠীর সাহিত্য, সংস্কৃতি সংগঠনকে আর্থিক অনুদান দিয়েছে। এই তালিকায় অসম সাহিত্য সভা থেকে শুরু করে বোড়ো, ডিমাসা, রাভা, তিওয়া ইত্যাদি সহ রাজ্যের প্রায় সমস্ত সাহিত্য সভা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও নাম নেই বরাক উপত্যকা বা রাজ্যের কোনও বাঙালি সংগঠনের। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর উপদেষ্টা কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক তপোধীর ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, তালিকা প্রকাশিত হবার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়ায় শাসকদলের স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা এ ব্যাপারে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাও সামনে নির্বাচন বলে। এর আগে কি করছিলেন তাঁরা ? তিনি বলেন, এর আগেও বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনকে কোনও অনুদান দেওয়া হয়নি। এসব কি তাদের অজ্ঞাত ছিল ? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বরাকের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, বরাক বঙ্গ আবেদন করেনি বলেই অনুদান দেওয়া হয়নি । এখন আবেদন করলে তাঁরা এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবেন।
এই প্রসঙ্গে বিডিএফ উপদেষ্টা কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, এর আগে বিধানসভায় সহযোগী ভাষা বিতর্কের সময় শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতা নিয়ে মুখর ছিলেন। রাজ্যের ৯৩ লক্ষ লোক যে ভাষায় কথা বলেন, যারা রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষিক গোষ্ঠী অনুদান দেবার সময় তাদের কথা সরকার পক্ষ ভুলে যান কী করে ? বাঙালি কোনও সংগঠন শুধু আবেদন করেনি, এই অজুহাত মাত্র৷ শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না , যাবে না। এসব ইচ্ছাকৃত বৈষম্য। অন্তত গত পাঁচ দশক ধরে এই রাজ্যে যেভাবে বাঙালি বিদ্বেষের চাষ হচ্ছে তাতে এই সন্দেহ মোটেই অমূলক নয়।
তিনি বলেন, বোড়ো ভাষাকে সরকারি সহযোগী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে অথচ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা সহযোগী ভাষা হিসেবে মান্যতা পায় না। জেলাশাসকের কাছ থেকে বার বার লিখিত আশ্বাস পাবার পরও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ‘ ভাষা শহিদ স্টেশন’ নামকরণ ঝুলিয়ে রাখা হয়। খোদ অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পরও বরাক উপত্যকার শূন্য পদে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে নিযুক্তি দেওয়া হয়। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাঙালিদের মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যের এই তালিকার শেষ নেই। তার বক্তব্য এরপরও কি সরকার পক্ষের এই অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য ?
তপোধীর ভট্টাচার্যের স্পষ্ট বক্তব্য, বাঙালি আবেদন নিবেদন বা ভিক্ষা বৃত্তি করে অনুদান পেতে মোটেই আগ্রহী নয়। নেতাজি সুভাষ , স্বামী বিবেকানন্দের উত্তরসূরি এই জাতি স্বাভিমান নিয়ে বাঁচতে অভ্যস্ত এবং এই অনুদানের জন্য সরকারের দয়াভিক্ষা চায় না। যদি সত্যিই সরকার অনুদান দিতে আগ্রহী হয়, তবে ভারতীয় সংবিধান দ্বারা গ্যারান্টিকৃত ভাষা-গণতন্ত্রের মৌলিক বিধি অনুযায়ী বাঙালির স্বাভিমানকে স্বীকৃতি দিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসুক। অন্যথা অনুদান ছাড়াও বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকবে।
তিনি বরাক বঙ্গ থেকে শুরু করে রাজ্যের সব বাঙালি সাহিত্য, সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এই অবস্থানে সুদৃঢ় ভাবে স্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।