Barak UpdatesFeature Story
প্রতিমা বিসর্জনের লঞ্চেই নামাজ আদায়!Driver offers Namaz in the launch used for idol immersion
১০ অক্টোবরঃ লঞ্চের উপরে চলছে দেবীর বিসর্জনের প্রস্তুতি। ওই লঞ্চেরই ভেতরে গামছা পেতে নামাজ সেরে নিলেন আব্দুস সুবহান লস্কর। রাজ্য জলপরিবহণ দফতরের লঞ্চ-চালক তিনি। ১৯৯২ সালে সাধারণ কর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগদান। ১২ বছর পরে পদোন্নতি পেয়ে মাস্টার বা লঞ্চ-চালক হন। সে থেকে বিসর্জনের লঞ্চ তিনিই নোঙর করেন বরাক নদীর সদরঘাটে। সন্তানদের নিয়ে দেবী শিলচর থেকে তাঁর লঞ্চেই কৈলাশের পথে রওয়ানা হন।
অসহিষ্ণুতা নিয়ে যখন নানা অভিযোগ, সে সময়ে ৫৭ বছর বয়সী সুবহানের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। বললেন, দাড়ি-লুঙ্গি দেখেও দেড় দশকে কেউ কখনও কটুক্তি করেননি। এমনকী, একই লঞ্চে নামাজ আদায়েও কোনও আপত্তি ওঠেনি। তবে সন্ধ্যা ও রাতের নামাজের সময় তিনি নদীতীরে কাছাড়ি মসজিদে চলে যান। তাও কোনও ভয়ভীতি বা অস্বস্তিতে পড়ে নয়। লাউডস্পিকারের বিকট শব্দে লঞ্চে নামাজ আদায়ে অসুবিধে হয়।
সুবহানের কথায়, জলযান চালানোর প্রশিক্ষণের সময়ই শেখানো হয়েছে, ডিউটি চলাকালে কোনও ভেদাভেদ নেই। তাই শুধু লঞ্চ নোঙর করে বসে থাকা নয়, প্রতিমা বিসর্জনে হাতও লাগিয়েছেন বহু বছর। বছর চারেক ধরে অবশ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী দায়িত্ব নেওয়ায় অন্যদের আর দরকার পড়ে না। তবে বিসর্জন চলাকালে নদীর জলস্তরের ওঠা-নামায় দেবীর ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তাঁকেই সারাক্ষণ খেয়াল রাখতে হয়।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া লঞ্চ এখন আর বরাকের জলে চলে না। মাস্টাররা তখন মোটরবোট চালান। সুবহান বললেন, আমার মোটর বোটে কত বিশ্বকর্মা মূর্তি যে এ পার-ও পার হন। এ ছাড়া, অনেকেই মনসা প্রতিমা নিয়ে বোটে ওঠেন। মাঝনদীতে বিসর্জন দেন। পূজাবাড়ির মানুষ সঙ্গে থাকলেও নিরাপদে ফেলার কাজটা তাঁকেই করতে হয়।
সুবহানের কাছে প্রকৃত অর্থেই জল জীবন। জলই তাঁর জীবিকা। তাই নদীদূষণ তাঁকে পীড়া দেয়। এ বার কাছাড়ের জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করেন। দেবীর ফুল, মালা, অলঙ্কার, হাতিয়ার বিসর্জনের আগে খুলে নেওয়া হয়। বিসর্জনের পরও বেশি সময় প্রতিমাকে নদীতে ভাসতে দেওয়া হয়নি। ঘাটের ১০০ মিটার দূরে ৫টি মোটর বোট রাখা হয়। একদল কর্মী ভাসমান প্রতিমাগুলিকে টেনে উপরে তুলে রাখেন। সুবহানের কথায়, সব প্রতিমা তোলা যায়নি বটে, কিন্তু উদ্যোগ নেওয়াটাও কম কথা নয়।