Barak UpdatesCultureBreaking News

তোর কি মনে পড়ে রক্তিম, লিখেছেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য
Do you remember Raktim, writes Indrani Bhattacharjee

১৩ অক্টোবর: কিছু ঘটনা কোনো কোনো আলোকিত সকলকেও বিমর্ষ করে দেয়। ঠিক যেমনটি আজ ঘটল।পুজোর ছন্দে সুন্দর ভাবেই চলছিল দৈনন্দিন জীবনের যাপন কথা, কিন্তু অনবধানে আকস্মিকভাবেই তা যেন থমকে গেল। মনে হলো, “এ কোন সকাল! রাতের চেয়েও অন্ধকার !!” Whats app খুলেই তোর ফটোর নীচের লিখাটা পড়ে কেমন যেন হাত পা অসাড় হয়ে গেলো। স্মৃতির কোলাজ থেকে এক এক করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর দিনগুলো ঝাপসা চোখে উকি দিতে লাগল —-

——— মনে আছে বন্ধু ! তোর সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা সুদৃঢ় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। তার আগে এক গাল হাসি আর কেমন আছ গোছের টুকিটাকি কথা পর্যন্তই আমাদের পরিচয় সীমাবদ্ধ ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে তুই “গণ জ্ঞাপন ” আর আমি “সমাজ বিজ্ঞান”। এখানে এসেই আমরা কখন যেন “তুমি” থেকে “তুই” এ এসে ঠেকলাম! তা এখন আর মনে আসছে না। তোর মনে পড়ে কি রক্তিম? তখন ক্লাসের পর আমাদের হাতে থাকত অসংখ্য শীতের কুয়াশা মাখা বিকেল,বর্ষার বৃস্টিস্নাত সন্ধ্যা, কিংবা কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল বিছানো ঝকঝকে দুপুর। বিভিন্ন বিভাগের আমরা একদল ছাত্র-ছাত্রী হাঁটতে হাঁটতে পৌছে যেতাম আইরংমারা, কিংবা কোনোদিন “মানস মমি” ধরে পৌছে যেতাম ধোয়ারবন্দ।

তুই তখন বেশ গোলগাল ! আমাকে দেখে তুইও কিনলি কাধের ঝোলা ব্যাগ। মনে পরে তোর সে সব কথা? আমরা কিন্তু বেশ ছিলাম তখন। পড়াশোনা, নাচগান, আবৃত্তির চর্চা সমানভাবে চলত আমাদের। ইউনিভার্সিটির গণ্ডি পেরিয়ে তোর সাথে শুরু হলো একসাথে মঞ্চ উপস্থাপন। শ্যামা’তে তুই বজ্রসেন, আমি শ্যামা। শাপমোচনে তুই অরুণেশ্বর আর আমি কমলিকা। আরো ক-তো– ক—তো নাচ আমরা একসাথে করেছি!!কেমব্রিজ স্কুল থেকে অনুষ্ঠানের রিহার্সাল দিতে তুই টিফিনে আমার বাড়ি আসতিস। কিন্ত তখন নাচ থেকে আমাদের আড্ডাটাই বেশি প্রাধান্য পেত। সেই সোনালি দিনগুলো ভীষণ ভাবে আজ মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।

প্রায়ই তোর সাথে ফোনে কিংবা whats app এ কথা হতো। আমাদের code name গুলো মনে আছে তোর রক্তিম !! তোর বিয়ের বৌভাতেও দারুন মজা করলাম। কিন্তু তারপর বেশ কিছুদিন পর যখন তোকে রাস্তায় পেয়ে বৌ-এর কথা জিগ্গেস করলাম – তুই সযত্নে এড়িয়ে গেলি। আর কোনো দিন আমাদের কথার মাঝে তোর বৌ’কে টেনে আনিনি আমি। তোর সাথে আমার শেষ দেখা ১১ই সেপ্টেম্বর কালিকা প্রসাদের জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে। মঞ্চের পেছনে আমাকে দেখে সেদিনও তুই স্বভাব সুলভ leg pulling করলি। “রবীন্দ্র নৃত্যে এতো গয়না কেন পড়েছিস?” উত্তরে বলেছিলাম ” তা তোর কী রে? তুই নিবি একটা?” সেদিন তোকে খুব ক্ষেপিয়ে ছিলাম। শরীরের খবর জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যেতিস তুই। তাই শেষটায় আর জিজ্ঞেস করতাম না। নিজের ব্যথাগুলো যে তুই সযত্নে নিজের মনের মণিকোঠায় সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসতিস — তা তোর এই বন্ধু বেশ বুঝতে পারত রে !!

—— শত কাজের মধ্যেও যেন আমার সমস্ত মন জুড়ে আজ কেবলি তুই। সমস্ত দিন যেন আজ রক্তিম নামের বন্ধুর কাছে থমকে আছে। সারা মনে আজ আমাদের বন্ধুত্ব জীবনের সমস্ত ঘটনা তোলপাড় করছে। তুই সত্যিই চলে গেলি বন্ধু!! কিসের এতো তাড়া ছিলো তোর ? জীবনের জলছবির রঙ এতো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেলো তোর ? এভাবেও চলে যাওয়া যায়? —- হয় তো বা ! তবে তুই চলে গেলেও প্রসাদদা’র মতনই বেচে থাকবি তোর প্রতিটি কাছের মানুষের অন্তরে। কোন এক শান্ত বিকেলে যখন বেলকনির টবে জল দেব একমনে তখন চুপিসারে এসে কানে কানে বলবি — *”সকল খেলায় করছি খেলা এই আমি—” সেই দিনটার অপেক্ষাতেই আছি বন্ধু ! জন্ম জন্মান্তরে ভালো থাকিস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker