Barak UpdatesHappeningsBreaking News
“কানে বাজে শুধু, জল চেয়েছিলাম, চড় দিল আমাকে!”
তদন্ত রিপোর্টে এসেছে, অভিযোগ অসত্য, জানালেন ডা. ভাস্কর গুপ্ত
২৭ অগস্ট: “জল খেতে চেয়েছিলাম৷ তাই আমাকে চড় দিল!” স্ত্রীর এই দুটি বাক্যই বারবার কানে বাজে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী রঞ্জিত দাসের৷ জোর গলায় দাবি করেন, এই অপমান সইতে না পেরেই প্রাণ হারিয়েছেন দেবীকা দাস৷
জেলাশাসক কীর্তি জল্লি বুধবার দুপুরে রঞ্জিতবাবুর বক্তব্য জানতে চাইলে তখনও তিনি একই কথা শুনিয়েছেন৷ রঞ্জিতবাবু বলেন, 49 বছরের দেবীকাদেবীর নিয়মিত ডায়ালিসিস করানো হচ্ছিল৷ ১৭ আগস্ট রুটিন মেনেই তাঁরা শিলচর মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু রক্তচাপ কম থাকায় ডায়ালিসিস হয়নি৷
তাঁর অভিযোগ, সেদিন থেকেই প্রতি মুহূর্তে টের পেয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজে কী চলেছে৷ ডায়ালিসিস ইউনিট থেকে দেবীকাদেবীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে বলেন৷ তিনি বেলা সাড়ে 12টায় সেখানে গিয়ে দেখেন, রোগীরা থাকলেও নেই ডাক্তার-নার্স, এমনকী ওয়ার্ডবয়ও৷ সন্ধ্যা 6টা পর্যন্ত একই অবস্থা৷ পরে এক পিজি ছাত্রীকে ধরে নিয়ে যান তিনি৷ প্রেসার মেপে দেখেন ১১০/৬০৷ তিনি তাঁকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন৷ পরদিন প্রেসার প্রচণ্ড নেমে গেলে চিন্তায় পড়ে যান৷ গ্রিনহিলস নার্সিং হোমে নিয়ে যান৷ সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ মেডিক্যালে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেন, প্রেসার-অক্সিজেনের সঙ্গে সুগারও নেমে গিয়েছে৷ দ্রুত এনে একটি রসগোল্লা খেতে দেন রঞ্জিতবাবু৷ অক্সিজেন লাগানো হয়৷ আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়৷ তাঁর অভিযোগ, আইসিইউতে এসি কাজ করছিল না৷ মাথার ওপর ফ্যান নেই৷ চারদিকে নোংরা৷ এ সবের মধ্যেই থাকছেন রোগীরা৷
রঞ্জিতবাবু জানান, তিন ইউনিট রক্ত দিলে দেবীকাদেবীর প্রেসার বাড়ে৷ মঙ্গলবার ডায়ালিসিস হয়৷ তখনই কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী তাঁকে বলেন, আইসিইউতে জল চেয়েছিলাম৷ পিপিই কিট পরা এক মহিলা চড় মেরে দিলেন! তিনি যে খুব অপমানিত বোধ করছিলেন, রঞ্জিতবাবু টের পান৷ বুধবার সন্ধ্যায় আইসিইউ-তেই মারা যান তিনি৷
শিলচর মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর গুপ্ত বৃহস্পতিবার জানান, অভিযোগ জেনে তাঁরা দ্রুত তদন্তে নামেন৷ মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. পৃথ্বিরাজ ভট্টাচার্যকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ তিনি এরই মধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন৷ তাতে ডা. ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “এমন কোনও ঘটনা আইসিইউতে ঘটেনি৷ আসলে দেবীকাদেবীর নানা শারিরীক সমস্যা ছিল৷ হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিক তো ছিলই৷ সঙ্গে কিডনির সমস্যা ইউরেনিক এনকাফলোপ্যাথিতে পরিণত হয়েছিল৷ এমন রোগীদের মস্তিষ্কেরও সমস্যা হয়৷” রিপোর্টে রঞ্জিতবাবুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, রোগী মাঝেমধ্যে উল্টোপাল্টাও বলতেন৷” ভাস্করবাবুর বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে হয়তো তা-ই হয়েছিল৷
পৃথ্বিরাজ ভট্টাচার্যের তদন্ত রিপোর্ট মানতে নারাজ রঞ্জিতবাবু৷ বলেন, স্ত্রীর উল্টোপাল্টা বলার কথা তিনি মোটেও বলেননি৷ এ ছাড়া, দেবীকাদেবী জীবিত থাকা অবস্থায় অন-ডিউটি ডাক্তার তাঁর বক্তব্য মোবাইলবন্দি করেছেন৷ সেখানেও তিনি হুবহু একই কথা বলেছিলেন৷
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত ভট্টাচার্য এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এর উচ্চ পর্যাযের তদন্ত হওয়া দরকার৷ এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না৷