AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/২৪ঃ পাস হলেও তা সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে যাবে, সতর্ক করেছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞCitizenship/24: Constitutional Experts opined that even the bill is passed it may be annulled by the Supreme Court
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ২৪-তম কিস্তি।)
৮ মার্চঃ ২.২৬ বৈধ ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ২(১)(বি) ধারায় কোনও বিদেশি যদি বৈধ পাসপোর্ট বা অন্য কোনও ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট বা আইনসিদ্ধ কোনও নথি ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করে, তবে তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। আবার পাসপোর্ট বা কোনও ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট বা আইনসিদ্ধ কোনও নথি নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেও যদি তার মেয়াদ পেরনোর পরও ভারতে বসবাস করতে থাকে, তবেও তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে, কেউ যদি বৈধ ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে এফআরআরও বা এফআরও-র কাছে নাম নথিভুক্ত করান এবং বৈধ রেসিডেনসিয়াল পারমিট বা ভিসার জন্য আবেদন করে ভারতেই থাকতে চান তাহলেই তিনি বৈধ। বাকি সবাই হবেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।
২.২৭ আবেদনকারী বা স্বার্থসংশ্লিষ্টদের একাংশ প্রস্তাব দেন, ধর্মীয় নির্যাতনের সঙ্গে ওই তিন দেশের সামাজিক অত্যাচার ও অর্থনৈতিক শোষণের কথাও যেন খেয়াল রাখা হয়। এই প্রেক্ষিতে কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতামত জানতে চায়। তারা জানায়, এই বিল ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ও ২০১৬ সালের ১৮ জুলাইর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি ও জৈন সম্প্রদায় ভুক্তদের মধ্যে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নির্যাতনের আশঙ্কায় ভারতে প্রবেশে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের জন্য। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জাতীয়তা, আদি বাসিন্দার পরিচিতি, কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর সদস্য বা রাজনৈতিক কারণে আসা বিদেশিদের জন্য ২০১১ সাল থেকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর চালু রয়েছে।
২.২৮ ওই তিন দেশ থেকে যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অত্যাচারের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে, তাদের সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শিকারের ক্ষেত্রে এই সময়ে এই নিয়ে কোনও বিধান নেই। তবে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জাতীয়তা, আদি বাসিন্দার পরিচিতি, কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর সদস্য বা রাজনৈতিক কারণে আসা বিদেশিদের জন্য ২০১১ সাল থেকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর চালু রয়েছে।
২.২৯ প্রস্তাবিত সংশোধনীয় সাংবিধানিকতা এবং বৈধতা নিয়ে এক সংবিধান বিশেষজ্ঞ কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে বলেন, যে ভাবে হিন্দু, শিখ, জৈন, পারসি, খ্রিস্টান সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নামোল্লেখ করা হয়েছে, তা সংবিধানের পরিপন্থী। সংবিধানের ১৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের মাটিতে ধর্মের ভিত্তিতে কারও সঙ্গে কোনও ধরনের বৈষম্য চলবে না। তাই আমার বিনীত আবেদন, এই বিলে যদি পরিবর্তন না আনা হয়, তবে সেটি সুপ্রিম কোর্ট কয়েক মিনিটের মধ্যে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবে। তাই সংবিধানের একজন ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, বিলটি সংবিধানের ১৪ নং ধারাকে লঙ্ঘন করছে। আমি সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায় সংগ্রহ করেছি, এর ওপর আমার বক্তব্য উল্লেখ করে জমা করেছি। ফলে আমার মনে হয়, সেগুলির পুনরাবৃত্তি না করলেও চলে।
২.৩০ সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, হিন্দু, পার্সি, শিখ উল্লেখ করতে থাকলে সংবিধানের ২৫ নং ধারার উল্লঙ্ঘন হবে। সংবিধানের ২৫ নং ধারামতে, মুসলমানদেরও তাদের ধর্মমতে উপাসনার অধিকার রয়েছে। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে যদি কাউকে কোনও সুবিধে দিতে অস্বীকার করা হয়, তাহলে তা ২৫ নং ধারা উল্লঙ্ঘনই করবে। আর ১৪ নং ধারায় তো স্পষ্ট করে বলাই রয়েছে, ভারতের মাটিতে সকলের সমান অধিকার।
২.৩১ একই ইস্যুতে আরেক বেসরকারি সাক্ষ্যদাতা এ ভাবে তাঁর মতামত তুলে ধরেন, সমান অধিকার, লিঙ্গ বা ধর্ম ভেদে যেন বৈষম্য না হয় ইত্যাদি কথা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের ৫০ দেশে ইসলাম হল রাষ্ট্রধর্ম, ১১টি আবার শরিয়ত মেনে চলে, যে শরিয়ত বিভিন্ন মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে, ৮০ থেকে ৯০ কোটি হিন্দুর কাছে নেপাল ছাড়া কোনও হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র নেই, যেখানে তারা যেতে পারেন। আর হিন্দুদের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষ করে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত। ফলে রাষ্ট্র ধর্মীয় নির্যাতনের কথা বলে যে বিল এনেছে এবং নাগরিকত্ব মঞ্জুর করতে চলেছে, এর সমালোচনা হবেই। পাশাপাশি ধর্মীয় নির্যাতনের নামে নাগরিকত্বও তো চাইতেই পারে। পশ্চিমী দেশগুলিতে, ইউরোপ ও আমেরিকার অংশবিশেষে তা প্রচলিত রয়েছে। ফলে চ্যালেঞ্জ হলে আমি মনে করি, এইভাবে এর মোকাবিলাও করা সম্ভব।