AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/১২ঃ দাবি উঠেছিল ৬(এ) ধারা প্রত্যাহারেরCitizenship/12: Demand was raised to withdraw Section 6(A)
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর দ্বাদশ কিস্তি।)
২৪ ফেব্রুয়ারিঃ ১৯. পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সমস্ত হিন্দু অনু্প্রবেশকারীদের ভারতের স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। কারণ ওই দুই দেশে হিন্দুরা প্রতি মুহূর্তে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নানাভাবে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন সে দেশে।
২০. রাজস্থান, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশের মত কিছু রাজ্য ২০০৩ সালে একাংশ সংখ্যালঘুকে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে। একই প্রক্রিয়া অন্য জায়গাতেও কার্যকর করা হোক। ন্যূনতম বসবাসের সময়সীমা প্রস্তাবিত ৬ বছর থেকে আরেকটু কমানো হোক।
২১. অসমিয়াদের জন্য নাগরিকত্ব মঞ্জুরির ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকাকে গ্রহণ করা হোক। কোনও কারণে যাদের নাম ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় অসমে বা দেশের কোথাও নেই, তাদের যতদিন না নাগরিকত্ব মিলছে, ততদিন বৈধ শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
২২. পাসপোর্ট (এন্ট্রি ইনটু ইন্ডিয়া) অ্যাক্ট ১৯২০, ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৪৬, ইমিগ্রান্টস এক্সপালসন ফ্রম আসাম অ্যাক্ট ১৯৫০ বা অন্য যে সব আইন বিদেশি বা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কীয়, সবকটিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
২৩. ১৯৫১ সালের এনআরসি-র নবায়ন এখন সময়ের দাবি। সঙ্গে সমগ্র দেশ জুড়ে বায়োমেট্রিক সিটিজেনশিপ আইডেন্টিটি কার্ড ইস্যু করা হোক। সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিও হওয়া দরকার।
২৪. অসমের বাংলাভাষীরা সন্দেহভাজন হিসেবে নানারকমের হয়রানির শিকার। প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে শুধু সন্দেহের বশে বিদেশি বলে যে মামলা চলছে বা বিদেশির শাস্তিভোগ করতে হচ্ছে, তা থেকে রেহাই পাবেন। তারা তখন একজন সাধারণ নাগরিকের মত জীবনযাপন করতে পারবেন।
২৫. পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দুদের প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ তারা অবিভক্ত বঙ্গের বাসিন্দা ছিলেন। এর পর যারা বাকি থাকবেন, তাদের ওড়িশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হোক। ওইসব বাংলাদেশি হিন্দুদের যদি নাগরিকত্ব দিতেই হয়, তবে তাদের যেন ভোটাধিকার দেওয়া না হয়।
২৬. ২০০৯ সালের আগে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাদের নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য যে রিনানিয়েশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন, প্রস্তাবিত বিলে তাতে ছাড় মিলবে। এই ছাড় যদি ২০০৯ সালের আগে যে সব পাকিস্তানি মহিলা ভারতীয়কে বিয়ে করেছেন এবং দীর্ঘকালীন ভিসা নিয়ে বসবাস করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও কার্যকর করা হয় তবে ওই মহিলারা এই মহান দেশের নাগরিক হতে পারেন।
২৭. দুর্ভাগা উদ্বাস্তুদের অসহায় অবস্থা দেখে কেন্দ্র যেন নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) ধারার প্রতিবন্ধকতাগুলো দয়াপরবশ হয়ে প্রত্যাহার করে। তাহলে বিলে উত্থাপিত রাষ্ট্র থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা সবাই নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
২৮. আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যে সব সংখ্যালঘু নানা রকম চাপে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন রাজ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে। কিন্তু ১৯৭১ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির পরে আসা, হিন্দুই হোক বা মুসলমান, কাউকে আবেদনেরই সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। দিতেই হলে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেওয়া হোক।
২৯. ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়টি অস্পষ্ট। তাই প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ৭(ডি) ধারা প্রত্যাহৃত হোক।
৩০. বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানের এই প্রস্তাবিত সংশোধনী অসমের আদি বাসিন্দাদের বিরাট ক্ষতি করবে। ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরও। কয়েকটি বিশেষ জনগোষ্ঠীকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে বাধা দেওয়া দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধী। এভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের এ দেশে ঢুকতে উতসাহিত করা হবে এবং ছয় বছর থেকেই তারা সবাই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। এটা ফরেনার্স অ্যাক্টের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রমের এক উদার আহ্বান।