India & World UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
রাস পূর্ণিমার আকাশে চাঁদের জ্যোতির্বলয়, লিখেছেন ড. হিমাদ্রি শেখর দাস
|| ড. হিমাদ্রি শেখর দাস ||
আবহাওয়া মহাশয়ও কখনো কখনো খামখেয়ালিপনা করেন! আর তিনি যে রাস পূর্ণিমার রাতেই এমন কাণ্ড করে বসবেন তা কে জানতো! আসলে আজ রাতে যারাই চাঁদের দিকে চোখ রাখছেন তারাই এই বলয়ের দৃশ্য দেখছেন। এই বলয়ের পোশাকি নাম – ‘চাঁদের জ্যোতির্বলয়’। ইংরেজিতে Lunar Halo। চাঁদের বলয়ের এই অপরূপ দৃশ্য আজ সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল। কখনো কখনো দিনের বেলা সূর্যের চারিপাশে এমন বলয় দেখা যায়। কেন এই দৃশ্য আজ দেখা যাচ্ছে, খুব অল্প কথায় জেনে নেই।
বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে হাল্কা, বরফকণা ভর্তি পেঁজা পেঁজা মেঘকে আবহবিজ্ঞানের ভাষায় অলক মেঘ বা Cirrus cloud বলা হয়। আকাশে পালকের মত হালকা এই নরম মেঘ তৈরির পিছনে কিন্তু কাজ করে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। এই মেঘগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০,০০০ ফুট বা তার ওপরে চলাচল করে। এই মেঘে থাকে ষড়ভুজ আকৃতির বরফের লক্ষ লক্ষ স্ফটিক। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে স্থিতিশীলতার অভাব থাকলে এবং জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে অলক মেঘ তৈরি হয়। তবে এই মেঘে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না।
চাঁদের আলো এই বরফে প্রতিফলিত (reflected) এবং প্রতিসরিত (refracted) দু’টোই হয়। বরফের স্ফটিকের ষড়ভুজাকৃতি আকৃতির জন্যই প্রতিসরিত আলো চাঁদের চারপাশে একটি হ্যালোতে ফোকাস হয়। চাঁদের আলো স্ফটিকের ভেতর প্রবেশ করার পর ঠিক ২২ ডিগ্রি কোণে প্রতিসরিত হয়। যেহেতু বরফের স্ফটিকগুলি সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির হয়, তাই চাঁদের বলয় প্রায় একই আকারের হয়। এই বলয়ের ব্যাস প্রায় সবসময় ২২ ডিগ্রি হয়।
চাঁদের বলয় প্রায় বর্ণহীন। কিন্ত ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায় যে চাঁদের সে বর্ণবলয়ের সীমানা ঘেষে ঠিক ভেতরের দিকে প্রান্তের রঙ লাল, আবার ঠিক কিনারা ঘেষেই বাইরের দিকের রঙ নীল। আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে যে বলয়ের ভেতরের অংশটি পরিষ্কার, যেখানে বাইরের অংশটি তুলনামূলকভাবে অনেকটা বিক্ষিপ্ত রঙের। অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে বলয়টির চারপাশের আকাশ স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় বেশী অন্ধকারতর।
আবহাওয়া মহাশয় খামখেয়ালিপনা করেন বলেই বোধহয় এমন মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য কখনো কখনো হয়, তাই নয় কি?
(ড. হিমাদ্রি শেখর দাস আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক)