Barak UpdatesHappeningsBreaking News
বাঙালিয়ানায় বরাককণ্ঠের বর্ষবরণ শিলচর গান্ধীভবনে
ওয়ে টু বরাক, ১৮ এপ্রিল ঃ নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাল বরাককণ্ঠ পত্রিকা গোষ্ঠী। শনিবার পয়লা বৈশাখে অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল শিলচর গান্ধীভবনে আয়োজন করা হয়েছিল এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয়, এরপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টানা চার ঘন্টার অনুষ্ঠান ছিল এক্কেবারে গান-কবিতা-সংবর্ধনায় ঠাসা। আমন্ত্রিত দলগুলোর অনুষ্ঠানের বাইরে এ দিন বরাককণ্ঠের বর্ষবরণে দুটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানও ছিল। প্রথমটি শিলচরের বিশিষ্ট তবলিয়া পণ্ডিত সঞ্জয় প্রকাশ দাসের তবলা লহরা পরিবেশন এবং অন্যটি কলকাতা থেকে আসা দুই তরুণ কণ্ঠশিল্পী অনির্বাণ দাস ও দীপ্তম সিনহা বিশ্বাসের দ্বৈত উপস্থাপনা। এই দুটো অনুষ্ঠান এ দিনের আয়োজনকে অন্য মাত্রায় পৌছে দিয়েছে।
শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হয় সঞ্চালক দেবাশিস পুরকায়স্থের স্বাগত ভাষণ দিয়ে। তিনি বরাককণ্ঠ পত্রিকার যাত্রা শুরু সময় থেকে বছর জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এরপরই মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বরাককণ্ঠের সাংস্কৃতিক বিভাগের সভানেত্রী স্বর্ণালি চৌধুরীর পৌরোহিত্যে উদ্বোধনী সভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী রজত ঘোষ, প্রাক্তন জনসংযোগ কর্তা হারাণ দে, বিশিষ্ট সমাজসেবী রূপম নন্দী পুরকায়স্থ, সাংস্কৃতিক সংগঠক গৌতম গুপ্ত, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী গৌতম সিনহা এবং বরাককণ্ঠের স্বত্ত্বাধিকারী ও সম্পাদক সন্তোষ চন্দ। এরপর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে আইনজীবী রজত ঘোষ ও সমাজসেবী রূপম নন্দী পুরকায়স্থকে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মান জানানো হয়।
উদ্বোধনী সভার পরই সত্যজিত বসুর পরিচালনায় গৌড়ীয় নৃত্যভারতীর শিশুশিল্পীদের গণেশ বন্দনা দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর পরের অনুষ্ঠান ছিল শিলচর ইয়ুথ কয়্যারের পরিবেশনায় দুটি সমবেত সঙ্গীত। এরপর মঞ্চে আসেন শিলচরের বিশিষ্ট তবলিয়া পণ্ডিত সঞ্জয় প্রকাশ দাস। কিংবদন্তি তবলাবাদক পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্য সঞ্জয় প্রকাশ এ দিন আসরে তবলা লহরা বাজিয়ে শোনান। তাঁকে সঙ্গত করেন নাগমায় সন্দীপ ভট্টাচার্য।
তবলা লহরা শেষে গান শোনাতে আসেন কলকাতার দুই তরুণ গায়ক অনির্বাণ দাস ও দীপ্তম সিনহা বিশ্বাস। সঙ্গে তাঁদের সঙ্গত করতে এসেছেন কলকাতার তবলিয়া কৃষ্ণেন্দু শর্মা। অনির্বাণ ও দীপ্তম এই কম বয়সেই অনেক গুরুর কাছে গানের তালিম নিয়েছেন। বর্তমানে দুজনে গাইছেন পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ির ঘরানায়। দুজনে মিলে একসঙ্গে শুরু করেছেন একটি সংস্থা ‘সম্পূরণ’। এই সংস্থা নিয়েই তাঁরা এ পর্যন্ত কলকাতা, দিল্লি, আগরতলার একাধিক মঞ্চ ছাড়াও জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশে গান গেয়ে বহু মানুষের সুনাম কুড়িয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের ঝুলিতে এসে গেছে বহু পুরস্কার। এ দিন গান্ধীভবনের মঞ্চে এই দুই শিল্পী দুর্গা বন্দনা দিয়ে নিজেদের অনুষ্ঠান শুরু করেন। এরপর তাঁরা ক্রমান্বয়ে গেয়েছেন ঠুমরি, একটি নজরুলগীতি ও একটি বাংলা রাগ প্রধান গান।
অতিথি শিল্পীদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই মঞ্চের দখল চলে যায় স্থানীয় শিল্পীদের কাছে। নৃত্যাঞ্জলি ডান্স স্কুলের সমবেত নৃত্যের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্ব শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে দ্য ফিট ফিমেইল ডান্স অ্যাকাডেমি পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য, দীপা মিউজিক্যাল ইনস্টিটিউট, রবি-জুঁই সঙ্গীত বিদ্যালয় ও গীতাঞ্জলি সঙ্গীত বিদ্যালয় সমবেত সঙ্গীত উপহার দেয়। ফের নৃত্যের ডালি নিয়ে আসে শিলচর ইয়ুথ কয়্যার, নৃত্যম ভারতী কলা কেন্দ্র, মণিমালা নৃত্য শিক্ষাকেন্দ্র, ছন্দালয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ও নৃত্যাঞ্জলি ডান্স স্কুল। মণিমালা নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্র এ দিন চড়ক নৃত্য ও নৃত্যাঞ্জলি ড্যান্স স্কুল ধামাইল নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষে প্রতিটি দলের দলনেতাকে একটি শুভেচ্ছা স্মারক ও অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের শংসাপত্র দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এ দিন যন্ত্র সঙ্গীতে সহায়তা করেন কি-বোর্ডে দিবাকর দাস, অক্টোপেডে লুইতেশ দাস, হ্যান্ডসোনিকে শ্রীকান্ত নমশূদ্র এবং তবলায় সন্তোষ চন্দ, বিপ্লব দে, গোপাল চক্রবর্তী ও স্বপন কুমার দেবনাথ।