India & World UpdatesHappeningsBreaking News
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ রাষ্ট্রসংঘে, ভোটদানে বিরত ভারত
ওয়েটুবরাক, ২৯ অক্টোবর : গাজায় ত্রাণসহায়তা পাঠাতে মানবিক দিক বিবেচনায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রস্তাবে ভারত ভোটদানে বিরত থাকে৷ তবে শুক্রবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি পাস হয়। পক্ষে ১২০টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে দেয় ১৪ দেশ৷ ভারতের মতো ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি ৪৫টি দেশ৷ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি পেশ করেছিল জর্ডন। তাতে হামাসের হামলার উল্লেখ না থাকায় ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। পাল্টা এক প্রস্তাব তুলেছিল কানাডা। তাতে হামাসের হামলার নিন্দা জানানো হয়। ভারত ওই প্রস্তাবে সমর্থন দিলেও তা গৃহীত হয়নি। জর্ডনের প্রস্তাবটিই পাস হয়। জাতিসংঘে ভারতের সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি যোজনা প্যাটেল সাধারণ পরিষদে বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সাধারণ পরিষদের স্পষ্ট বার্তা পাঠানো দরকার। পাশাপাশি কূটনীতি ও সংলাপের পরিসর বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে মানবিক সংকট মোকাবিলা করা যায়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দেশ, সীমান্ত, জাতি মানে না। সন্ত্রাসবাদ কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।
ভারত ভোটদানে বিরত থাকায় কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো সমালোচনায় সরব হয়েছে। কংগ্রেস বলেছে, ভারতের ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভারতের ভোট না দেওয়া আমাকে বিস্মিত ও লজ্জিত করেছে। ভারত গড়ে উঠেছে অহিংসা ও সত্যের ভিতের ওপর। এ নীতি ধরে রাখতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রাণ বিসর্জন দেন। এই নীতিই আমাদের সংবিধান গড়ে তুলেছে, তা আমাদের জাতির পরিচয়ও।’
এক্স–এ প্রিয়াঙ্কা বলেন, “গাজায় মানবিকতা প্রতি পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য, পানীয়, ওষুধপত্র পৌঁছনো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও অন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। হাজার হাজার ফিলিস্তিন পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভূমিকা না নিয়ে নীরব থাকা মানবতাকে অস্বীকারের শামিল। অথচ জাতি হিসেবে ভারত চিরকাল এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।” প্রিয়াঙ্কা আরও বলেছেন, “চোখের বদলে চোখ নীতি গোটা পৃথিবীকে অন্ধ করে দেয়।”
প্রিয়াঙ্কার মতোই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার৷ শনিবার তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ভারতের এমন সিদ্ধান্তহীনতা আগে দেখিনি। অতীতে ভারত সব সময়ই ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এবার সেই ধারাবাহিকতা দেখা গেল না।”
ভারতের দোলাচলের উল্লেখ করে শরদ পাওয়ার বলেন, ৭ তারিখে হামাস হামলা চালাল। এর পরদিন ‘মর্মাহত’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইজরায়েলের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর কথা জানালেন। তিন দিন পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার পরেও সেই এক মনোভাবের পুনরাবৃত্তি করলেন তিনি। এরপর ১২ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি ‘স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ গঠনে ভারতের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা জানান। এই নীতি পরিবর্তনের কড়া সমালোচনা করে শারদ পাওয়ার বলেন, ভারত কখনো ইজরায়েলকে এভাবে সমর্থন করেনি। শরদ পাওয়ার এর আগেও প্রধানমন্ত্রী মোদির এই ভূমিকাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
কংগ্রেসের সমালোচনায় বিজেপি নেতা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস বলেন, যাঁরা ‘বিস্মিত ও লজ্জিত’ তাঁদের জানা উচিত, ভারত কখনও সন্ত্রাসবাদের পক্ষে থাকেনি। প্রিয়াঙ্কার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘’আগে নিজেকে শিক্ষিত করুন। মনে হচ্ছে, কংগ্রেসের অতীত অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞরা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। আপনি রাহুল গান্ধীর চেয়ে ভালো এটা প্রতিপন্ন করতে গিয়েই তাঁরা আপনাকে হাসির পাত্র করে তুলছেন।’’