Barak UpdatesAnalyticsCulture

শ্রীজাত পর্বঃ বেদনা ভুলতে পারছেন না তরুণ কবি-শিল্পীরা

১৯ জানুয়ারিঃ শ্রীজাত হয়তো এখন শিলচর কাণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সে দিনের ঘটনা ভুলে গিয়েছেন শিলচরেরও বহু মানুষ। কিন্তু একদল কবি-শিল্পীর কাছে ক্ষতটা কিছুতেই শুকোতে চাইছে না। এদের অধিকাংশ বয়সে তরুণ। ১২ জানুয়ারি ‘এসো বলি’ নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তাঁদের কবিতা পাঠ বা ছবি আঁকা দুটো মিলেমিশে যাওয়ার কথা ছিল। কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করবেন, শিল্পীরা ক্যানভাসে তা ফুটিয়ে তুলবেন। তাও আবার কবি শ্রীজাতের সামনে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। একে বড় আঘাত বলেই মনে করছেন তারা। ৮জন কবি ও ৮ চিত্রশিল্পীকে একমঞ্চে আনার দায়িত্বে ছিলেন অধিষ্ঠিতা শর্মা। বললেন, ‘অনুষ্ঠানের এই পর্বের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। কিন্তু করা গেল না, কতদিন যে সে আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে।’ শান্তনু আচার্য ছিলেন শিল্পীদলের নেতা। কবিদের সঙ্গে কথা বলা, কবিতা বুঝে নেওয়া, সেই সঙ্গে চিত্রকল্প তৈরি—বেশ খেটেছিলেন তিনি। তাঁর দুঃখ, সব মার খেয়ে গেল!

ওই পর্বে স্বরচিত কবিতা পড়তেন বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য, নিরূপম শর্মাচৌধুরী, সায়ন চ্যাটার্জি, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, শতদল আচার্য, ভাস্করজ্যোতি দাস, ও শৈলেন দাস। শান্তনু আচার্যের নেতৃত্বে ছবি আঁকার কথা ছিল স্বপনকান্তি কর, বিশ্বজিত দত্ত, উত্তম ঘোষ, রত্নদীপ পাল, দেবব্রত দাস, গৌতম ঘোষ ও রাজদীপ দাসের। বিশ্বরাজের কথায়, ‘শ্রীজাতের সামনে আমি কবিতা বলব, আর সেই কবিতা ক্যানভাসে ফুটে উঠবে! এক অন্য অনুভূতি কাজ করছিল। তা করতে না পারার বেদনা অস্বীকার করা যায় না।’ তবে শ্রীজাতের অপদস্থ হওয়ার ঘটনা এর চেয়ে বেশি আঘাত করেছে বিশ্বরাজকে। তাঁর কথায়, ‘কবির শহর শিলচর’ এই লিগ্যাসি আর বহন করা গেল না।

Pic Credit:Jatayu

‘এসো বলি’-র মুখ্য আহ্বায়ক সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত অবশ্য মনে করেন, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও শিলচরের বিশিষ্টজনেরা, কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, সমাজকর্মী, যুব সমাজ, মহিলা, সংবাদ মাধ্যমের সদস্যরা যে ভাবে কবি শ্রীজাত ও এসো বলির পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঐক্যবদ্ধ জোরালো প্রতিবাদ করেছেন, তা আবারও প্রমাণ করেছে, শিলচর কবির শহর, সংস্কৃতির শহর। তিনি সেজন্য তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কবি শ্রীজাতও শিলচরের মানুষই সেদিন তাঁকে আগলে রেখেছিলেন বলে যে ভাবে প্রশংসা করেছেন, সে জন্য তাঁর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সব্যসাচী। তিনি ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসনকে। সব্যসাচী বলেন, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসি সহ সবাই তাঁদের সহযোগিতা করেছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কবি শ্রীজাতের উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে তাঁকে নিরাপদে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।

তিনি তরুণ কবি-শিল্পীদের অনুষ্ঠানটি করতে না পারার জন্য তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, এসো বলি তাঁদের অনুষ্ঠানটি শীঘ্রই করবে। সব্যসাচী সে দিনের অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়ে বলেন, বিশ্বজয়ী বক্তা স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কবি শ্রীজাত। এই অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও অ্যালবাম উন্মোচিত হয়। দুই প্রজন্মের বিশিষ্ট বক্তাদেরও সংবর্ধিতও করা হয় সে দিন।

পড়ুন: শ্রীজাত’র অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনা শিলচরে

কবিকে এনে উপযুক্ত সুরক্ষা দিতে না পারায় সব্যসাচীও অবশ্য এখন কাঠগড়ায়। দুদিন আগে শিলচরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ সেদিনের ঘটনা পর্যালোচনা করে। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি সব্যসাচীকেও দোষারোপ করেন।

English text here

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker