ওয়েটুবরাক, ৮ মেঃ দীর্ঘ রোগভোগের পরে সোমবার বিকেল পৌনে ৬টায় ইহলোক ত্যাগ করেছেন সমরেশ মজুমদার৷ অনিমেষ, মাধবীলতা, জয়িতাদের স্রষ্টা৷ তাঁর লেখনীতে বারবার উঠে এসেছে নিপীড়িতদের কথা, সমাজের নিচুস্তরের মানুষের দাবিদাওয়ার কথা৷
বেশ কিছু দিন ধরেই সিওপিডি-র সমস্যায় ভুগছিলেন সমরেশ। সোমবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বার্ধক্যজনিত একাধিক সমস্যা ছিল। হাসপাতালে ঘুমের মধ্যেও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। ভেন্টিলেশনে দেওয়া হলেও শেষরক্ষা আর হল না। প্রয়াত হলেন সাত ও আটের দশকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ সমরেশ মজুমদার।
১৯৪৪ সালে জন্ম সমরেশ মজুমদারের। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটায়। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর হন। শিক্ষার সূত্রেই শহর কলকাতার সঙ্গে পরিচয়। শুরুতে ছোটগল্প লিখেই খ্যাতি। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে ‘দৌড়’ উপন্যাস ছাপা হয়েছিল একটি বাণিজ্যিক পত্রিকায়। অচিরেই বৃহত্তর পাঠক এবং সমালোচকের নজর কাড়েন সমরেশ। তারপর অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, রম্য, ভ্রমণ কাহিনি। তাঁর উপন্যাস ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্যে তাঁকে স্থায়ী আসন দিয়েছে বলে মনে করা হয়। যার অন্তিমপর্ব ‘মৌষলকাল’। ছোটদের পছন্দের গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুনের স্রষ্টাও সমরেশ। সাহিত্যকৃতির জন্য সাহিত্য আকাডেমি, আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার-সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গভূষণে ভূষিত করেছে তাঁকে।
প্রখ্যাত সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শোকবার্তা, “বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বাংলা সাহিত্যের লব্ধপ্রতিষ্ঠ কথাকার সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল: দৌড়, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, উত্তরাধিকার, অর্জুন সমগ্র, সাতকাহন ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি সাহিত্য অকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার-সহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি সমরেশ মজুমদারের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”