NE UpdatesBarak UpdatesHappenings

আরএসএস প্রচারক গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তীর জীবনাবসান

ওয়েটুবরাক, ৪ মার্চ : রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রবীণ প্রচারক, বরাক উপত্যকার সুসন্তান গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী আর নেই। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। বুধবার সকাল ৬টায় দিল্লির এমডিসিটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। রেখে গেছেন পাঁচ ভাই, ভ্রাতৃবধূ, ভ্রাতুষ্পুত্র-ভাইঝি, নাতি-নাতনি সহ সংঘের অসংখ্য গুণমুগ্ধদের।

তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ব্যক্ত করে প্রয়াতের আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া, প্রদেশ সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস, মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সহ অনেকে । গৌরীদা হিসেবেই তিনি ছোট-বড় সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। তাঁর নশ্বর দেহ বৃহস্পতিবার কলকাতা হয়ে শিলচরে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রথমে রাখা হবে কেশব নিকেতনে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর তাঁর পৈতৃক আবাস জালালপুরে নিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

জালালপুরের জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. খগেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তী এবং সুষমাদেবীর চতুর্থ সন্তান ছিলেন গৌরীশঙ্কর। জন্ম হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ৩০ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের শ্রীহট্ট জেলার ছাতক থানার মহবৎপুরে। তাঁর বড়ভাই শিবশংকর চক্রবর্তীও ছিলেন একজন প্রচারক এবং খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক।

অত্যন্ত মেধাবী ও অন্তর্মুখী স্বভাবের গৌরীশঙ্কর শৈশব থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। নিয়মিত শাখায় যাতায়াত তাঁর বিদ্যালয় জীবন থেকে। ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি গোটা রাজ্যের মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করেন। পরবর্তীতে গুয়াহাটি এসে কটন কলেজে পদার্থবিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে প্রথম বিভাগে খ্যাতির সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। চলে যান দিল্লি। দিল্লি গিয়ে কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও দুরারোগ্য এই ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করেন। তার পর ২০১৮ সালে মেরুদণ্ডের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। দিল্লির হাসপাতালে অপারেশন করে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে শারীরিক কিছু অসুস্থতার জন্য তাঁকে দিল্লির এমডি সিটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ডাক্তারদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন বরাকের এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

সংঘের টানে দিল্লিতে অবস্থানকালে ১৯৭৩ সালে প্রচারক হয়ে বেরিয়ে পড়েন গৌরীশঙ্কর । সে থেকে তাঁর প্রচারকজীবন শুরু। দিল্লিতে পাঁচ বছর প্রচারকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। পরবর্তীতে জরুরি অবস্থার পর ১৯৭৮ সালে তাঁকে পাঠানো হয় গুয়াহাটি মহানগর প্রচারকের দায়িত্ব দিয়ে। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত একই দায়িত্ব পালনের পর ওই সালেই তাঁকে পাঠানো হয় ডিব্রুগড়ে, বিভাগ প্রচারক হিসেবে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ডিব্রুগড়ে ছিলেন। ১৯৯১ সালে শিলচর সম্ভাগ প্রচারক করে তাঁকে পাঠানো হয়। ১৯৯৪ সালে দায়িত্ব দেওয়া হয় দক্ষিণ অসম প্রান্ত প্রচারকের। ওই দায়িত্বে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ক্ষেত্র শারীরিক প্রমুখ হিসেবে। এর পর ২০১২ সালে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সহ-ক্ষেত্র (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) প্রচারকের। প্রচণ্ড শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও গৌরীশঙ্কর তাঁর দায়িত্ব পালনে কোনওদিন কিঞ্চিৎমাত্র অবহেলা করেননি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাঁকে সহ-ক্ষেত্র প্রচারকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সংঘের অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী মণ্ডলের আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়। মৃত্যুকাল পর্যন্ত এই দায়িত্বও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।

প্রয়াত গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী একজন সুগায়কও ছিলেন। তাঁর গোটা পরিবারই অবশ্য সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া বেশ কয়েকটি গানে সুর দিয়ে সুরকারের খ্যাতিও অর্জন লাভ করেন গৌরীশঙ্কর । কেবল তা-ই নয়, রাষ্ট্রবাদ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। ইংরেজি, হিন্দিতে লেখা পঞ্চাশোর্ধ্ব গ্রন্থ তিনি অসমিয়া ভাষায় অনুবাদ করেছেন। ২০১৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে যখন ক্যামো দেওয়া হচ্ছিল, তখন প্রায় তিনমাসের মধ্যে দত্তপন্থ ঠেংড়ির লেখা ‘কার্যকর্তা’ শীর্ষক বড় বই অনুবাদ করেছেন। শেষবারের মতো হাসপাতালে যাওয়ার দিন-কয়েক আগে ‘আধুনিক ভারতর খনিকর ডা. হেডগেওয়ার’ শীর্ষক সংকলনগ্রন্থ অনুবাদ এবং বিভিন্ন গ্রন্থের প্রুফ দেখে প্রচণ্ড মনোবল ও ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী।

গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী একজন ভালো বংশী, বিউগল ও আনক (ড্রাম) বাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন উঁচুমানের দণ্ডযোদ্ধাও। সংঘের নানা শিবিরে তাঁকে স্বয়ংসেবকদের দণ্ড শিক্ষার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker