NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
আসাম আন্দোলনের সময়ে কংগ্রেস ভাষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশেই ছিল, বললেন প্রদ্যোৎ
//প্রদ্যোৎ বরদলৈ//
ঘা-টা শুকিয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেসই তা শুকিয়ে দিয়েছিল। সত্তরের দশকে বিদেশি খেদা আন্দোলনে সন্ধ্যা পাঁচটা বাজলেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত। বাড়ি থেকে কেউ বেরোতেন না। যারা এই অশান্তির ঝড় এনেছিলেন, তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে খুন করা হতো। কংগ্রেসের শ্রমিক নেতা মানবেন্দ্র শর্মাকে ঘরে ঢুকে খুন করা হয়েছিল। লখিমপুর, শোণিতপুর, শিবসাগরে জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে হত্যা করা হয়েছিল। কংগ্রেসের সুহৃদ কালীপদ সেন খুন হন। নগেন নেওগ, ক্ষীরোদ ভুইয়া সহ হাজারের বেশি কংগ্রেসিকে হত্যা করা হয়েছিল তখন। তাঁদের অপরাধ একটাই, কংগ্রেস দল বলুন বা কংগ্রেসের সরকার, এরা মনুষত্বের জয়গান করে। ভাষা বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যেন কোনও ধরনের অবিচারের শিকার না হন, সে দিকে খেয়াল রাখে। সে জন্য কংগ্রেস তাদের শত্রু ছিল।
আসু যখন দীর্ঘ আন্দোলন করছিল, অশান্তির সৃষ্টি করছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের আলোচনার জন্য দিল্লিতে ডাকেন। এরা দাবি জানান, ১৯৫১ সালকে অসমের জন্য নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ করতে হবে। ইন্দিরা গান্ধী বললেন, না তা হবে ১৯৬৭। কেন ১৯৬৭? কারণ ১৯৬৫-৬৬ সালে প্রচুর মানুষ বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসামে এসেছিলেন। তাঁদের ৯০ শতাংশই বাঙালি। তাঁদের স্বার্থরক্ষায় ইন্দিরাজি ১৯৬৭ সালকে নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ করতে চেয়েছিলেন। তখন চুক্তি হয়নি। সর্বানন্দ সোনোয়ালরা তা মানেননি। যখন পরে আর আন্দোলন চালাতে পারছিলেন না, সে সময় নিজেরাই ১৯৭১-র ২৪ মার্চের কথা বললেন। সব রাজনৈতিক দল তা মেনে নিল। বিজেপি-ও ১৯৮৫ সালের সেই চুক্তিকে সমর্থন জানায়। এখন রাজনীতি করার জন্য বাঙালিকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। বাঙালির অনুরাগ, বিশ্বাস নিয়ে প্রতারণা করছে। আসাম চুক্তি ৯৯ শতাংশ বাঙালিকে সম্মানের সঙ্গে থাকতে দিয়েছিল। এখন এনআরসি-র মধ্য দিয়ে ১৮ লক্ষ বাঙালিকে এর বাইরে রেখে কা করে রাজনীতি শুরু করেছে। ওই ১৮ লক্ষের সবাই অসমের, সবাই ভারতের। কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরে তাদের নাগরিকত্ব দেবে।
বিজেপি এখন আসাম চুক্তিকে নস্যাৎ করে নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ করেছে ২০১৪। অন্যদিকে, আসাম চুক্তির ৬ নং অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করছে। লক্ষ্য, বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা।
কংগ্রেস কখনও ডি ভোটার করেনি। ডিটেনশন ক্যাম্প করেনি। এই সব করেছে অসম গণ পরিষদ, যাদের সঙ্গে শরিক হয়ে এখন সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। ডিটেনশন ক্যাম্পের ৮৫ শতাংশ বাঙালি হিন্দু। ক্যাম্পেই ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছেন। কারা মারল ওই বাঙালিদের? জোর দিয়ে বলছি, ক্ষমতায় ফিরে প্রত্যেক বাঙালির স্বার্থ কংগ্রেস সম্মানের সঙ্গে রক্ষা করবে।
তাই বলি, ১৫ বছরে ঘা-টা শুকিয়ে গিয়েছিল। আমাদের নেতা তরুণ গগৈ ক্রমাগত মলম লাগিয়ে যাচ্ছিলেন। সম্প্রীতির যুগ ছিল। উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। আজ ফের পুরনো ঘা খুঁচিয়ে বাড়ানো হচ্ছে। ধর্মের নামে বিভাজন আনছে। এ এক পশ্চাদগামী রাজনীতি।
সর্বানন্দ সোনোয়াল গত ভোটের আগে থেকেই বলতে শুরু করেন, বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড়-ভৈয়াম। অর্থাত বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড়-সমতল। মনে মনে ভাবতাম, মানুষটা সকলের উন্নয়ন চান। এখন দেখছি, তিনি আসলে বলতে চেয়েছিলেন, বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড়-সমতলে সিন্ডিকেট কালচার কায়েম হবে। তিনি যখন অগপ সাংসদ ছিলেন, তখন বগীবিল সেতুর কাজ হয়। সে থেকে সিন্ডিকেট শুরু করেন। তাঁর মাথায় কিলবিল করছিল, এই সিন্ডিকেটকে কীভাবে বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড়-সমতলে প্রসারিত করা যায়। এখন সিন্ডিকেটকে একেবারে সোনালি সুতোতে বেঁধে দিলেন। কৌশিক রাই বরাকে সিন্ডিকেটের সম্রাট। বার্মিজ সুপারি, কয়লার সিন্ডিকেট তাঁর পৃষ্ঠপোষকতাতেই চলছে। ধুবড়িতে গরুর সিন্ডিকেট। তিনসুকিয়ায় চলছে অবৈধ কয়লা খননের সিন্ডিকেট। চিনি, বালি, পান, মাছ –কোথায় সিন্ডিকেট নেই! পরিমলবাবু হলেন এসবের প্রধান পুরোহিত।
(এটি আসলে ধলাইর জনহুঙ্কার সমাবেশে কংগ্রেস ক্যাম্পেন কমিটির চেয়ারম্যান, সাংসদ প্রদ্যোৎ বরদলৈর বক্তৃতা)