Barak UpdatesHappeningsSports

শিলচরের স্বেচ্ছা-ডোমদের সংবর্ধিত করলেন চন্দন শর্মা

মর্মস্পর্শী বক্তব্য ইয়ুথ রাইজিং কর্তা পিনাক রায়ের

১ জানুয়ারিঃ তাঁদের হাতেই করোনায় মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবা হিসেবে এই ডোমের কাজ করতে গিয়ে কম যন্ত্রণা সইতে হয়নি। রাইজিং ইযুথ সোসাইটির তরুণদের বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগতভাবে সংবর্ধিত করলেন স্পোর্টস ইন্ডিয়ার স্বত্বাধিকারী তথা ক্রীড়া সংগঠক চন্দন শর্মা। সংবর্ধিতরা হলেন পিনাক রায়, দিলোয়ার খান, রাহুল রায়, রঞ্জন রায়, বিজিত শর্মা, রোহন রায়, তনুজ দত্ত, রতেশ চক্রবর্তী। অনুপস্থিত ছিলেন টিমের আরও দুই সদস্য কুলদীপ তিওয়ারি ও আরেক রাহুল রায়। টাউন ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উত্তরীয় পরিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক, টি শার্ট, বেতের ব্যাগ ও নতুন বছরের ক্যালেন্ডার। চন্দনবাবুর আমন্ত্রণে তাঁদের এইসব উপহার সামগ্রীতে সম্মানিত করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড়, সহসভাপতি ডা. সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, গুরুচরণ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পার্থ চন্দ, রোটারিয়ান এসবি দত্ত, টাউন ক্লাব সম্পাদক নন্দদুলাল রায় প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আরেক ক্রীড়া সংগঠক উতপল দত্ত।

রাইজিং ইয়ুথ-দের সংবর্ধিত করে বাবুলবাবু বলেন, কঠিন সময়ে এগিয়ে এসেছিলেন পিনাকরা। পার্থ চন্দের কথায়, রাজনৈতিক কোলাহলের বাইরে গিয়ে রাইজিং ইয়ুথরা যে কাজ করছেন, তা মনে রাখার মত। বরাকের অতিমারির দিনের ইতিহাসে তাঁদের কথা লেখা থাকবে। এসবি দত্ত তাঁদের নক্ষত্র বলে অভিহিত করেন।

সবশেষে পিনাক রায় অত্যন্ত মর্মস্পর্শী বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন,  বেশ কিছু দিন ধরে তাঁরা দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের সঙ্গে কাজ করছেন। কোভিড আবহে লকডাউন শুরু হলে তাঁরাও বাড়িঘরে আটকে পড়েন। জুলাইর মাঝামাঝি হঠাৎ একদিন কাছাড় জেলার সদর সার্কল অফিসার ধ্রুবজ্যোতি পাঠক ফোন করলেন, চারজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে দেখা করতে। তাঁরা ছয়জন যান৷ তখন সকাল দশটা। দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগে গিয়ে বসে থাকার পর বিকাল চারটা নাগাদ পিপিই-কিট দেওয়া হয়। কী কারণে কিট, তাদের কাজ কী, কেউ কিছু বলছিলেন না। পরে পাঠকের কথামত শিলচর শ্মশান থেকে গাড়ি করে কিছু কাঠ নিয়ে আসেন। লাকড়ি এনে শোনেন, শববাহী গাড়ি মিলছে না। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার এমন একটি গাড়ি রয়েছে। পিনাকবাবুরাই কথা বললাম, গাড়ি পাওয়া গেল। কিন্তু চালক নেই। লকডাউনে কোনও চালক আসতে রাজি নন। শেষে তাদেরই এক সভ্য দিলোয়ার হোসেন অগত্যা স্টিয়ারিঙে বসেন।

সার্কল অফিসার বললেন, শহর থেকে কিলোমিটার বিশেক দূরে শব দাহ হবে। কিন্তু যেতে যেতে কাছাড় ও ডিমা হাসাও দুই জেলার সীমায় পৌঁছেন। অঝোর বৃষ্টি। এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা। ঘন জঙ্গল৷ এক জায়গায় চিতা সাজানো হল। মৃতদেহের প্যাকিং এবং পিপিই পরায় তাঁদের সন্দেহ হচ্ছিল, করোনা ভাইরাসেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তিনি নারী না পুরুষ, যুবক না বৃদ্ধ কিছুই জানেন না। কিন্তু প্রথম বিপদ বাঁধে মৃতদেহ চিতায় তুলতে গিয়ে। পা চিতায় রাখলে মাথা বেরিয়ে থাকে, মাথা ঢোকাতে গেলে নিম্নাংশ পুরো বাইরে চলে যায়। এ বার কাঠ জ্বালাতে গিয়ে বিপত্তি। ডিজেল পোড়াতে পোড়াতে জ্বলল বটে, কিন্তু অর্ধেক পোড়ার আগেই লাকড়ি শেষ। ডিজেলও আর নেই। সার্কল অফিসার গাড়ি থেকে মৃতদেহ নামাতেই দুই-তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। বেশকিছু গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটিতে কিছুটা পেট্রল পেলে তা দিয়েই  জেলার প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোভিড-মৃতের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তাঁরা ।

পিনাকবাবুর কথায়, “বাড়ি থেকে ঘনঘন ফোন। সকাল দশটায় বেরিয়েছিলাম। রাত বারোটা বাজতে চলল। সার্কল অফিসার বললেন, তোমরা এত রাতে বাড়ি যেও না। শিলচরে হোটেলে রুম বুক করা হয়েছে। আমরাও ভাবলাম, ভোরেই বাড়ি যাই। কিন্তু সকালে হোটেল ম্যানেজার বললেন, কোভিডে মৃত নারায়ণ মিত্রের দেহ পোড়ানোর জন্য আমাদের কোয়রান্টিন করা হয়েছে। বাড়ির মানুষ অস্থির হয়ে উঠলেন। শেষে সার্কল অফিসারকে বললাম, আমাদের এ ভাবে আটকে দেওয়া উচিত হয়নি। শেষে সিদ্ধান্ত হল, আমাদের হোটেল থেকে বাড়ি পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু বাড়ি গিয়ে এক ঘরে আটকে থাকতে হবে। বাড়ির কারও সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ চলবে না। শেষে তা-ই হল। এর পর অবশ্য জেলার প্রায় সব করোনায় মৃতের অন্ত্যেষ্টিই আমাদের হাতে হয়েছে। স্থানে স্থানে বাধাদান, শবদেহ নিয়ে এখানে-ওখানে ঘোরা, কোথাও আবার মার খাওয়ার উপক্রম বহু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখনও তাঁরা ওই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker