Barak UpdatesBreaking NewsFeature Story
হিন্দু বাড়িতে মুসলমান পরিচারিকা! মৃত্যুর পর কবর দিলেন জয়-অজয়Muslim domestic help in a Hindu house! After her death, she was put to rest in grave by Joy-Ajoy
১৭ সেপ্টেম্বরঃ ৫ দিনেও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাড়িটা। বসার ঘরের চারদিকে খেলনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সোফাগুলোর ওপর কাপড়ের ঢাই। ওইসব একটু এদিক-ওদিক করে বসার ব্যবস্থা হল। স্টিকে ভর করে ভেতর থেকে এলেন ৭৬ বছর বয়সী গৃহকর্ত্রী মঞ্জুশ্রী দাস। বললেন, কাজে মন বসছে না কারও। হোসেনা (আহমেদ) যে পরিচারিকা নয়, আমাদের পরিবারেরই একজন ছিল। আমার ছেলেদের ভাই বলে ডাকত। তারাও বোন বলে সম্বোধন করত। ১১ সেপ্টেম্বর ভাইয়েরাই মৌলবী ডেকে নামাজ শোনায় তাকে। যেভাবে গীতা পড়ে শোনানো হয়েছিল মৃত্যুপথযাত্রী নিত্যভূষণ দাসকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে হোসেনার দেহ। বারবার সে কথাই বলছিলেন নিত্যভূষণ-মঞ্জুশ্রী দাসের ছেলে জয়-অজয়। তাদের কথায়, বোনের কাছ থেকে এত আদর পেয়েছি যে কোনওদিন ভোলার নয়।
হোসেনা নানা সামাজিক সঙ্কটের সময়েও বেঁচে ছিলেন সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে! সিলেটের দুলালীগ্রামে জমিদারি ছিল নিত্যবাবুর। ১৯৬৬ সালে করিমগঞ্জ সেটেলমেন্ট রোডের জমিদার আব্দুল মালিক চৌধুরীর সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় হয়। হোসেনা ছিলেন চৌধুরীবাবুর পরিচারিকা। তল্লিতল্পা গুটিয়ে সবাই দুলালীগ্রামে চলে গেলেও হোসেনা থেকে যায় এ পারেই। নিত্যবাবু বললেন, ঠিক আছে। তুমি থেকে যেও আমাদের সঙ্গে। সেই যে থাকলেন, আমৃত্যু থেকেই গেলেন হোসেনা।
তার অবশ্য বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সংসার হয়নি। শুরুর দিকে স্বামী মাঝেমধ্যে তাদের বাড়ি আসতেন। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করলে সেটুকুও আর টেকেনি। মৃত্যুর পরে অবশ্য তার সতীনের ছেলে ও জামাতাকে খবর পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা আসেন, অন্যদের সঙ্গে হোসেনার কবরে তারাও মাটি দেন।
ধর্মকর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না থাকলেও মৃত্যুর পর তাকে কবর দেওয়ার কথা বলতেন হোসেনা। ভাইয়েরাও তিনি মারা যেতেই এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের সবাইকে খবর দেন। তাদের সিদ্ধান্তমতই তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় টিপু সুলতান চৌধুরীর বাড়িতে। ধর্মীয় রীতি অনুসারে যাবতীয় কর্মকাণ্ড সেরে তাকে মসজিদের পাশে কবরস্থ করা হয়। পরে চারদিনে সিরনি দেওয়া হয়। এখন ভাইদের ইচ্ছে, মুসলিম রীতি মেনে চল্লিশারও আয়োজন করবেন তারা। মামী মঞ্জুশ্রীদেবী জানালেন, সেদিনই বাড়িতে কীর্তন হবে।