NE UpdatesHappeningsBreaking News
সংঘর্ষবিরতি প্রস্তাবে সায় জানাতে পারলেন না কুকি নেতারা

ওয়েটুবরাক, ৬ এপ্রিলঃ দুই বছর আগে মণিপুরে মেইতেই-কুকি হিংসা শুরু হওয়ার পর শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রথমবারের মতো উভয় জনগোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে মুখোমুখি বসার ব্যবস্থা করে৷ মেইতেই জনগোষ্ঠীর পক্ষে অল মণিপুর ইউনাইটেড ক্লাব অর্গানাইজেশন এবং ফেডারেশন অব সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের ছয়জন প্রতিনিধি তাতে অংশ নেন৷ কুকি জো কাউন্সিলেরও ছিলেন ছয়জন এবং জোমি কাউন্সিলের দুইজন বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন৷ কেন্দ্রের তরফে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রাক্তন ডিরেক্টর একে মিশ্র ও জয়েন্ট ডিরেক্টর রাজেশ কাম্বলে৷ মণিপুর সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন মুখ্যসচিব পিকে সিংহ ও অতিরিক্ত পুলিশ প্রধান আশুতোষ কুমার সিংহ৷
বহু আশার সঞ্চার ঘটিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও তা কার্যত ভেস্তে যায়৷ শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন৷ এর শুরুতেই উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দিলে মেইতেইরা তাতে বিনা বাক্যে সায় জানালেও কুকি-জো প্রতিনিধিরা তাতক্ষণিক মতামত জানাতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন এবং শেষপর্যন্ত ওই অবস্থানে অনড় থাকেন৷
মণিপুরের মেইতেই ও কুকি নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় দিল্লিতে মুখোমুখি আলোচনায় বসলেও প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক অমীমাংসীতই থাকে। কুকি প্রতিনিধিরা কেন্দ্রের শান্তিপ্রস্তাব একেবারে এককথায় খারিজ না করলেও রাজ্যে ফিরে গিয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে কথা না বলে তাঁদের পক্ষে মতামত প্রকাশ সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়ায় বৈঠক নিষ্ফলাই হয়৷
বৈঠকে কেন্দ্র সরকারের তরফে ছয়দফার যে রোডম্যাপ পেশ করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে, অন্য সম্প্রদায়ের সদস্যদের লক্ষ্য করে হিংসায় লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য উভয় জনগোষ্ঠী নিজেদের জনগণের কাছে আবেদন জানাবে এবং হিংসায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাবে। দ্বিতীয়ত, অস্ত্র জমার সুবিধার্থে রাজ্যপালের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ জাগানোর জন্য ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সহযোগিতার করার আশ্বাস দেবে৷ তৃতীয়ত, জাতীয় ও রাজ্য সড়কে যানবাহনের মুক্ত চলাচলে বাধার কারণে জনসাধারণের অসুবিধার কথা স্বীকার করে প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হবে৷ চতুর্থত, সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সাপেক্ষে বাস্তুচ্যুত লোকদের তাদের নিজ নিজ স্থানে প্রত্যাবর্তনের সুবিধার্থে যে কোনও উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। পঞ্চমত, সংঘাতের সময় উপেক্ষিত সমস্ত এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য রাজ্যপালের কাছে আবেদন করা হবে৷ ষষ্ঠত, দীর্ঘমেয়াদী এবং বিতর্কিত সমস্যাগুলি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য উভয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে পদক্ষেপ করা হবে।
এই ঘোষণাপত্রে সই করতে মেইতেইরা রাজি থাকলেও কুকিরা রাজি হননি। তাঁরা জানান, আগে রাজ্যে গিয়ে বাকি কুকি-জ়ো সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে তবেই সিদ্ধান্ত নেবেন৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র জানান, শান্তিপ্রস্তাবে কুকি প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তাঁরা অসন্তুষ্ট৷ তবে উভয় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এই ধরনের আরও আলোচনার ব্যাপারে কুকি জো নেতারা সায় জানিয়েছেন৷ একে মন্দের ভাল বলেই মনে করছেন তাঁরা৷