Barak UpdatesHappeningsBreaking News
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বীর শম্ভুধন ফংলোর মূর্তি উন্মোচন
ওয়েটুবরাক, ১৬ মার্চ: রবিবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর শম্ভুধন ফংলোর ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর মূর্তি উন্মোচন, যা বর্মন ডিমাসা কাছাড়ি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল, অসম-এর এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই গৌরবময় মুহূর্তে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষা ও জনজাতি বিষয়ক (সমতল) মন্ত্রী ডঃ রনোজ পেগু মূর্তিটির উন্মোচন করেন।
এষ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন দুই মন্ত্রী নন্দিতা গারলোসা ও কৌশিক রায়, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজীব মোহন পন্থ, ধলাই বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন দাস ।
মূর্তি উন্মোচনের পর, শিক্ষার্থীদের এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠানের জাঁকজমক আরও বৃদ্ধি করে এবং এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এরপর বিপিন চন্দ্র পাল প্রেক্ষাগৃহে এক ভাবগম্ভীর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী উত্তরীয় পরিয়ে সম্মানিত করা হয়।
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডঃ রনোজ পেগু বীর সম্ভুধন ফংলোর অসামান্য অবদান সম্পর্কে গভীরভাবে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর অবিচল সংগ্রাম আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে। মূর্তি স্থাপনের জন্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং অন্যান্য জাতীয় বীরদের প্রতিকৃতির পাশাপাশি ফংলোর মূর্তির সংযোজন এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক মূল্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তিনি আরও বলেন, অসম সরকার সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এই অঙ্গীকার অতীতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতা, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গতিশীল নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, সরকারের লক্ষ্য জনজাতি নেতাদের অবদান সংরক্ষণ করা এবং তাঁদের ঐতিহ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে গড়ে তোলা।
এই প্রসঙ্গে, ডঃ পেগু ঘোষণা করেন যে, ধলাই বিধায়ক নিহার রঞ্জন দাসের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধলাইতে ছাত্রাবাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসম সরকার। পাশাপাশি, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান, যা রাজ্যের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণাগার হিসেবে কাজ করবে।
খাদ্য, গণবন্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক, খনি ও খনিজ সম্পদ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায় তাঁর বক্তব্যে ইতিহাসের উপেক্ষিত বীরদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদানের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগ ও অবদান সংরক্ষণ করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে গর্ব ও আত্মপরিচয়ের অনুভূতি সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, তিনি অসম সরকারের আদিবাসী সম্প্রদায়ের কল্যাণে নিরবচ্ছিন্ন প্রতিশ্রুতি ও তাঁদের সার্বিক উন্নয়নের প্রতি সরকারের অবিচল দৃষ্টিভঙ্গির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
যুব কল্যাণ, ক্রীড়া ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী নন্দিতা গারলোসা তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও শিক্ষার মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়ন করা সম্ভব। তিনি আশ্বাস দেন যে, সরকার উপজাতি জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতি কেবলমাত্র অতীতের স্মারক নয়; এটি পরিচয়ের প্রতীক, ঐক্যের সেতুবন্ধ এবং অগ্রগতির অনুপ্রেরণা।
এই মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য থেকে একটাই বার্তা প্রতিধ্বনিত হয়— ঐক্য, পারস্পরিক সম্মান এবং বীর সম্ভুধন ফংলোর বীরত্ব ও আত্মত্যাগের চিরন্তন স্মরণ।
উল্লেখযোগ্য যে, এই অনুষ্ঠান কেবলমাত্র এক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি অসম সরকার ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সংরক্ষণ, উন্নয়ন সাধন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে। বীর সম্ভুধন ফংলোর অমর উত্তরাধিকার, অদম্য মনোবল এবং গর্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এই অনুষ্ঠান ভবিষ্যতেও এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
শিলচরের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।