NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News

গুয়াহাটিতে ই-রিক্সার ধাক্কায় হত শিলচরের শিবু পাল

ওয়েটুবরাক, ২৭ নভেম্বর : প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না রেলের মালিগাঁও শাখার চিফ ওয়েলফেয়ার অফিসার শিবু পালের। শনিবার গুয়াহাটি পান্ডু পোর্ট রোডে ব্যাটারি চালিত ই- রিক্সার ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অ্যাপোলো এক্সেল কেয়ার হাসপাতালে। মঙ্গলবার বিকেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয় । বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৮ বছর । রেখে গেছেন স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, মা-ভাই সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধদের।

শিলচরের ছাত্র মহলে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব শিবু পালের জন্ম ভাগা বাজারে । ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন । তারই সূত্রে শিলচর শহরে মামার বাড়িতে থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন । জিসি কলেজ হয়ে ১৯৯৯ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর খুব দ্রুত বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। আজকের প্রতিষ্ঠিত বহু চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার তাঁর ছাত্র ছিলেন। সময় লাগেনি রেলে চাকরি পেতে। দীর্ঘদিন বদরপুরে চাকরি করেন। ধীরে ধীরে পদোন্নতি হয়ে বর্তমানে তিনি মালিগাঁও রেলের চিফ ওয়েলফেয়ার অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। নিজের কর্মতৎপরতা ও জনসংযোগের জোরে রেলের মজদুর ইউনিয়নের মালিগাঁও শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। বন্ধুত্ব বৎসল, মিশুকে এবং পরোপকারী স্বভাবের জন্য সব মহলে ছিল তার বিপুল জনপ্রিয়তা। পড়াশুনার প্রতি এই বয়সেও ছিল বিশেষ আগ্রহ । যার জন্য সব ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন এবং ইতিমধ্যে এলএলবি ফাইনাল দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সবকিছু উলটপালট করে দিল।

নিয়মিত প্রাতর্ভ্রমণের জন্য শনিবার সকালে স্ত্রী কৃষ্ণা বৈদ্য পালকে নিয়ে পান্ডু পোর্ট রোডের ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে একটি বেপরোয়া ব্যাটারি চালিত ই- রিক্সা তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। ধাক্কার চোটে রাস্তায় পড়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যান শিবু। মাথায় প্রচন্ড চোট লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপোলো এক্সেল কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিন দিন যমে মানুষে টানাটানি চলে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই অঘটনের খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে সর্বত্র। হাসপাতালে ভিড় জমান অসংখ্য অনুরাগী। সহকর্মী রেল ইউনিয়নের সদস্য সহ বিভিন্ন মহলের মানুষ ছুটে যান। বুধবার গুয়াহাটিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ব্যক্ত করেছে রেলের মজদুর ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন সংস্থা। প্রয়াত শিবু পালের স্ত্রী কৃষ্ণা বৈদ্য পাল মালিগাঁও রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষিকা। মেয়ে শিবাংশী পাল এবার শিলচর এনআইটিতে ভর্তি হয়েছে এবং ছেলে আদিত্য পাল নবম শ্রেণীর পড়ুয়া।

তাঁর অকালপ্রয়াণে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর দাস শোক ব্যক্ত করে বলেন, “আমার জীবনের স্পন্দন আজ যতটুকু রয়েছে এতে শিবুর ভূমিকা অনেকটুকু। ২০২০-এর ৫ এপ্রিল লকডাউনের সময় আমার ব্রেন স্টোক হবার পর গুয়াহাটির জিএনআরসি-তে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন রাজশেখর, শিবু, সুব্রত আর আমার পরিবারের কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমেই আমার পুনর্জন্ম হয়। আমার ব্রেন সার্জারি হয়েছিল। মাথার ভেতরে প্ল্যাটিনাম কয়েল (যাকে এনারিজম বলে) লাগিয়ে আমাকে ডাক্তারেরা বাঁচিয়ে তোলেন। সেই প্ল্যাটিনাম কয়েল জিএনআরসিতে ছিল না। শিলঙের এক সাপ্লায়ারের কাছে ছিল। লকডাউনের সময় আমার ভাই রাজেশ এবং বন্ধু শিবু পাল শিলঙের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। শিবু নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে খুব তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছে ওই কয়েল নিয়ে গুয়াহাটি ফিরে আসে, নিজের বন্ধুকে বাঁচাবে বলে। আমার চেতনা ফিরে পাবার পর আইসিইউ-তে বলেছিল, তোকে এত তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী থেকে যেতে দেবো না। অনেক কাজ বাকি তোর।” শোকস্তব্ধ হিমাদ্রী বলেন, ” আমার না হয় বহু কাজ বাকি, তোর এত তাড়া কীসের ছিল, শিবু!”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker