Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বরাক বঙ্গের সঙ্গে অসম সাহিত্য সভার কেন্দ্রীয় সভাপতির সৌজন্য বৈঠক

অসমের স্বার্থেই অসমিয়া-বাঙালি ভাববিনিময় জরুরি : সূর্যকান্ত

ওয়েটুবরাক, ১৪ আগস্ট : অসমের সার্বিক বিকাশ এবং কল্যাণে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা বর্তমান সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয় । এই পটভূমিতে এ রাজ্যের দুই প্রধান জনগোষ্ঠী অসমিয়া এবং বাঙালির মধ্যে পারস্পরিক ভাব বিনিময় জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে । এ কাজটি যত আন্তরিকভাবে হবে, ততই রাজ্যে এক নতুন আবহ  তৈরি করবে। অসম সাহিত্য সভার কেন্দ্রীয় সভাপতি ডঃ সূর্যকান্ত হাজারিকা বুধবার শিলচর বঙ্গভবনে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সৌজন্য বৈঠকে এই অভিমত পোষণ করেন।
        হাজরিকা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে দুদিনের শিলচর সফরে এসে বুধবার গুয়াহাটি ফিরে যাওয়ার আগে শিলচর বঙ্গভবনে বরাকবঙ্গের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকে বসেন। তিনি বলেন, সাহিত্যের যারা অনুরাগী তাদের মধ্যে নিবিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠলে সেটা সামগ্রিকভাবে সাহিত্য সৃষ্টিকে উৎসাহিত করে। এখানে ভাষা, জাতির প্রশ্ন অনেক সময়ই গৌণ হয়ে যায়। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেক সময়ই তাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেতে হয়েছে। লন্ডনে শেক্সপিয়ারের পাশে যখন রবীন্দ্রনাথের ছবি এবং দুজনের সাহিত্যকর্ম কাছাকাছি রাখা হয় তখন গর্বে তাঁর বুক ভরে ওঠে। তার মনে তখন অসমিয়া -বাঙালি এসব প্রশ্নই আসে না, আসে ভারতীয় হিসেবে এক উদ্দীপ্ত অনুভব।
  এদিন এই সৌজন্য বৈঠকে আলোচনার সূত্রপাত করেন বরাকবঙ্গের কাছাড় জেলার সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর। ইতিহাসের নানা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলা এবং অসমিয়া ভাষার মধ্যে মূলত কোনও বিরোধ নেই । এটা আসলে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে । এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক । বলেন, সম্মেলনের দূর- শিক্ষা কেন্দ্রে যারা পাঠ  গ্রহণ করছেন, তাদের মধ্যে সব জনগোষ্ঠীর পড়ুয়ারাই রয়েছেন।
          সাহিত্য সভার কেন্দ্রীয় সভাপতিকে স্বাগত জানিয়ে বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন , বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মেলন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা ও তার অর্জিত অধিকার  সংরক্ষণে নিয়ত তৎপর থাকার পাশাপাশি প্রতিবেশী সব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সদর্থক ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে কাটিগড়ায় সম্মেলনের প্রথম গ্রামীণ কেন্দ্রীয় অধিবেশনে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে তারাপদ রায় এবং হোমেন বরগোঁহাই পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সম্মেলনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অসমিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকেছেন। অসম প্রকাশন পরিষদের আমন্ত্রণে বরাক দিবসে সংগঠনের প্রতিনিধিরা গুয়াহাটিতে গিয়ে আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন । তিনি খেদ ব্যক্ত করে বলেন, রাজ্যের সব জনগোষ্ঠী সাহিত্য সংগঠন কর্পাস ফান্ড থেকে অনুদান পেলেও বাঙালি এবং হিন্দিভাষীরা তা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এ ব্যাপারে বরাকবঙ্গকে আশ্বস্ত করার পরও কিছুই হয়নি। রাজ্য সরকারের তরফে বরাক বঙ্গকে প্রদত্ত আর্থিক অনুদানের পরিমাণ  ক্রমাগত কমিয়ে নামমাত্র করা হয়েছে । শুধু এসব ক্ষেত্রেই নয়, উপত্যকার সামগ্রিক আর্থিক বিকাশ এবং রাজ্যে নিযুক্তির ক্ষেত্রেও বাঙালি কর্মপ্রার্থীদের প্রতি বৈষম্য ও উপেক্ষা চলছে। তিনি অবশ্য সাহিত্য সভার সভাপতি হাজরিকার ভাব বিনিময়ের আহ্বানকে সদর্থক বলে মন্তব্য করে এ ক্ষেত্রে বরাকবঙ্গের সহযোগিতা থাকবে বলে জানান।
   বরাকবঙ্গের কাছাড় জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী সূর্যকান্ত হাজরিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সংগঠন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার বিষয়টির সঙ্গে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে বহুভাষিক সমন্বয় সমিতি গঠন করেছে । সাহিত্য সভার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্মেলন আমন্ত্রিত হলে সেখানে যেমন সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন , তেমনি সাহিত্য সভার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকেও সম্মেলন মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ কথা বলেও তিনি কর্পাস ফান্ড এবং বার্ষিক অনুদানের ক্ষেত্রে উপেক্ষার বিষয়টি তুলে ধরেন।
সাহিত্য সভার কেন্দ্রীয় সভাপতি সূর্যকান্ত হাজারিকার হাতে এদিন বরাকবঙ্গ প্রকাশিত বইগুলো তুলে দেওয়া হয়। পরে তিনি বঙ্গভবনের গ্রন্থাগার এবং মহাফেজখানা ঘুরে দেখে সম্মেলনের বহুমুখীন তৎপরতার  প্রশংসা করেন। এদিনের সৌজন্য কার্যক্রমে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির দুই সহ-সভাপতি ইমাদ উদ্দিন বুলবুল ও সুবীর রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মিলন উদ্দিন লস্কর, কাছাড় জেলা সমিতির সহ-সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা  কোষাধ্যক্ষ বকুল চন্দ্র নাথ, দুর শিক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কবির হোসেন, শিলচর শহর আঞ্চলিক সম্পাদক সুশান্ত সেন, কেন্দ্রীয় সদস্য সীমান্ত ভট্টাচার্য, হাসনা  আরা শেলি সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker