Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ভোটের আগেই আধার ও নাগরিকত্ব সমস্যা মেটানোর দাবি শিলচরের নাগরিক সভায়
ওয়েটুবরাক, ১৭ মার্চ : আধারবিহীন ২৭ লক্ষের বঞ্চনা ও নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ আহ্বানে রবিবার, শিলচরে এক নাগরিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন ডা: মৃন্ময় দেব, রফিক আহমেদ, সুব্রত নাথ, মৃণাল কান্তি সোম, হায়দর হোসেন চৌধুরী, পারিজাত নন্দ ঘোষ, আতরজান বেগম মজুমদার, স্নিগ্ধা নাথ ও খাদেজা বেগম।
আধার এবং নাগরিকত্ব আইনের কোথাও এনআরসি প্রক্রিয়ায় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের এবং আধার আটকে রাখার কোনো বিধান নেই, এমনকি সুপ্রিম কোর্টেরও স্পষ্ট কোনও ধরনের নির্দেশ নেই। তথাপি দাবি-আপত্তি পর্যায়ে আসামের রাজ্য সরকার আধার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় মোট ২৭ লক্ষ লোকের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাদের বঞ্চিত করে আধার প্রদান করা আটকে রেখেছে এক এসওপির ভিত্তিতে। ওই এসওপিতেও চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের পর যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে তাদের সরাসরি আধার কার্ড প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু এটাও মানা হয়নি আজও। ৫ বছর ধরে আধার আটকে থাকা লোকজন নানা সমস্যা ও হেনস্তার সম্মুখীন হয়ে চলেছেন। ২০২২ সালের ১১ আগস্ট আধার কর্তৃপক্ষ এক অফিস মেমোরেন্ডাম ইস্যু করে বলেছিল যে, যাদের এনরলমেন্ট হয়েছে কিন্তু আধার কার্ড ইস্যু হয়নি, তাদের এই এনরলমেন্ট নম্বরের সঙ্গে যে কোনও একটি পরিচয়পত্র দিয়ে আধারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই ২৭ লক্ষ লোকের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এটাও মানছে না। এমন বক্তব্য উঠে এসেছে আজকের সভায়, যা থেকে এটা সম্পূর্ণ স্পষ্ট যে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে হেনস্তা করতেই আধার আটকে রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য থেকেও এটা বুঝতে পারা যায়। অতি সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে তিনি আসুর মতো সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর আধার ইস্যু করা হবে বলে যে মন্তব্য করেছেন এতেও তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করা হয় সভায়। এ প্রসঙ্গে ফোরাম ফর স্যোসাল হারমনির তরফে বিস্তারিত আইনি ব্যাখ্যা সহ গত মাসে নির্বাচনের আগেই আধার ইস্যু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবিপত্র পাঠানো হয়েছিল এবং এই সভা সেই দাবিতে এখনও অনড় রয়েছে বলে মনে করে। এ দিনের সভা মনে করে, রাজ্য সরকার চাইলে নির্বাচনের আগেই আটকে রাখা আধার প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারে।
নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এটা স্পষ্ট উঠে আসে যে, ২০০৩ পূর্ববর্তী সময়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সময় কোনও কাগজপত্র দাখিল করতে হতো না এবং সকলেই আবেদন করতে পারতেন। ২০০৩-এ বাজপেয়ী সরকার প্রথম অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সংজ্ঞায়িত করে তাদের আবেদনের অযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে। এনআরসির আইন ও নিয়ম ওই বছরই তৈরি করা হয়েছে। এমনকি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধানকে কার্যত বাতিল করা হয়েছে। তারপর ২০১৫ সালে দুই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সহ তিন দেশের অমুসলিমদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নন বলা হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন তাদের জন্য আলাদা জটিল এক সিএএ-র দরকার কেন হয়? চার বছরের পর ততোধিক জটিল রুল তৈরি করে যা যা কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হচ্ছে তা অধিকাংশেরই নেই। তাই আসল উদ্দেশ্য যে নাগরিকত্ব প্রদান নয়, এটা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে নিজেকে বিদেশি ঘোষণা করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে বলা হচ্ছে। এর থেকে স্পষ্ট যে সরকারের সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক বদলে দেওয়া, আইনি জটিলতায় নাগরিকত্বহীন গরিব মেহনতি মানুষকে সস্তা শ্রমিকে রূপান্তরিত করা এবং ধর্মীয় জিগির তোলে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা। এসব আলোচনা উঠে আসে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে। চার বছরের বেশি সময় ধরে বেআইনিভাবে চূড়ান্ত প্রকাশের পরও এনআরসির আপিল প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আইনি জটিলতার মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিয়ে হয়রানি, আধার ইস্যু না করে গরিব মেহনতিদের বঞ্চনা, সস্তা শ্রম লুণ্ঠনে ও স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার বিপদের স্থায়ী সমাধানে “ভোটাররাই নাগরিক” এই বিধানের পক্ষে মত প্রকাশিত হয়। ”ভাওতাবাজির সিএএ” বাতিল করে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভোটারদেরই বৈধ নাগরিক হিসাবে বিবেচিত করতে হবে, এই দাবিও ওঠে।
কনভেনশনে বক্তব্য রেখেছেন শিশির দে, কমল চক্রবর্তী, সুব্রত পাল (শ্যামা), সঞ্জীব রায়, অসিত রায়, জয়দীপ ভট্টাচার্য, রিপন নাথ, অরূপ বৈশ্য, আতরজান বেগম মজুমদার, রফিক আহমেদ, সুব্রত নাথ , হিল্লোল ভট্টাচার্য, হায়দর হোসেন চৌধুরী, খাদেজা বেগম, পারিজাত নন্দ ঘোষ, সারওয়ার জাহান লস্কর, ডা: মৃন্ময় দেব, স্নিগ্ধা নাথ প্রমুখ।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে প্রত্যেক যোগদানকারী সংগঠনের দুজন করে প্রতিনিধি নিয়ে এক প্রচার ও আন্দোলন কমিটি গঠিত হবে এবং সেই কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সকলের জন্য আধার, ২০১৪-এর সচিত্র তালিকায় নাম থাকা সকল ভোটারদেরই নাগরিক হিসেবে মান্যতা দেওয়া, কা রুলে সেল্ফ ডিক্লারেশনেরর ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান করা, আধারের বিকল্প হিসাবে এনরলমেন্ট আইডিকে আধার কর্তৃপক্ষের দেওয়া অফিস মেমোরেন্ডামের ভিত্তিতে কার্যকর করা, এই দাবিগুলো প্রাথমিকভাবে গৃহীত হয়। কার্যসূচি হিসেবে প্রচারপত্র প্রকাশ করে নির্বাচনের আগে প্রচার চালানো। মূল স্লোগান হবে ‘No Aadhaar, No Citizenship — So No Vote to BJP” । নির্বাচনের পর গুয়াহাটিভিত্তিক কার্যসূচি রূপায়িত করার সিদ্ধান্তও হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজকদের পক্ষে অরিন্দম দেব ও ফারুক লস্কর।