Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ডা. রাজদীপ মূল প্রয়াস নিলেও শিলচর-সিলেট উৎসবকে গুরুত্বই দেয়নি আসাম সরকার
ওয়েটুবরাক, ১৪ অক্টোবরঃ ৬, ৭, ৮ অক্টোবর দ্বিতীয় শিলচর-সিলেট উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আসলে অনুষ্ঠান ছিল চার দিনের৷ ৫ ও ৬ তারিখে হয় দুই দেশের মৈত্রী আলোচনা। সিলেটের ‘গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসর্টে’ অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী আলোচনায় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংহ। আয়োজক দেশের নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আলোচনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অধ্যক্ষ শিরিন শারমিন চৌধুরী। ছিলেন সে দেশের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় কুমার ভার্মা, সাংসদ ভিনসেন্ট পলাও। ফলে মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সরকারি বৈঠক না হলেও এই মৈত্রী আলোচনাকে যে উভয় রাষ্ট্র অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে, তা স্পষ্ট। আলোচনার আয়োজক ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ এবং ‘বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল স্টা়ডিজ’ সরকারি প্রতিষ্ঠান না হলেও উভয়ে নিজের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বলা যায়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে তাদের সামনে রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রকই এ সবের আয়োজন করছে৷
দুই রাষ্ট্রের এমন এক মৈত্রী আলোচনার সঙ্গে শিলচর-সিলেট উৎসবের যুক্ত হওয়া বড় মর্যাদার বিষয়। এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সমাপ্তি পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সে দেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। দুই মন্ত্রীই সিলেটের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। অসীমকুমার উকিল, পঙ্কজ দেবনাথ সহ বেশ কয়েকজন সাংসদ উৎসবের নানা পর্বে অংশ নেন।
দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি সংশ্লিষ্ট কৌশলগত আলোচনাই যখন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল স্টা়ডিজের মুখ্য উদ্দেশ্য, সেখানে শিলচর-সিলেটের কথা কী ভাবে উঠে এল, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত জানান, এটা একমাত্র হয়েছে সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়ের জন্য। তিনি এই ফাউন্ডেশনের সক্রিয় সদস্য। সভা-সমিতিতে সুযোগ পেলেই শিলচর-সিলেট উৎসবের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাই তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সকলে সাধুবাদ জানিয়ে শিলচর-সিলেট প্রতিবছর করার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার, এমনকী সিলেটের নেতৃবৃন্দ একে যতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, বিদেশের মাটিতে শিলচরের নাম যুক্ত উৎসবকে আসাম সরকার বা শিলচরের জনপ্রতিনিধিরা ততটা গুরুত্ব দেননি। শিলচর-সিলেট উৎসবের মূল হোতা, সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় বিশেষ জরুরি কারণে সিলেটে যেতে পারেননি। তিনি তাঁর অনলাইন বক্তৃতায় সে জন্য আক্ষেপ ব্যক্ত করেন। উৎসবে অংশ গ্রহণের জন্য অতিথি- প্রতিনিধি তালিকায় ছিলেন অসমের পরিবহন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, লক্ষীপুরের বিধায়ক কৌশিক রায় এবং পাথারকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। চার জনপ্রতিনিধির মধ্যে একজনও সিলেটে গেলেন না। গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী বলতে ছিলেন বিমলেন্দু রায় ও মঞ্জুল দেব। বিমলেন্দুবাবু বিজেপির কাছাড় জেলা সভাপতি এবং মঞ্জুল দেব শিলচর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু ওই দুই পদের কোনওটি বিদেশে তেমন গুরত্বপূর্ণ নয়। ফলে শিলচর-সিলেট উৎসবের মঞ্চে শিলচরের কোনও প্রতিনিধিকেই দেখা যায়নি। আসলে আসাম সরকার বা প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টিকে গুরুত্বই দিতে চায়নি৷
ভ্রমণ তালিকায় নাম থাকার পরও কেন তাঁরা গেলেন না, এই প্রশ্নে বিমলেন্দু রায় বলেন, অমৃত কলস অভিযান চলছে। কম সময়ের মধ্যে তাঁদের বহু এলাকায় মাটি সংগ্রহে যেতে হচ্ছে৷ তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বাংলাদেশ যাওয়া সম্ভব হয়নি। মন্ত্রী-বিধায়করা গেলে যে উৎসবের মর্যাদা বাড়ত, প্রতিটি আলোচনা বা অনুষ্ঠানে শিলচরের অবস্থান উজ্জ্বলতর হতো, স্বীকার করেন বিমলেন্দু রায়, মঞ্জুল দেব।