Barak UpdatesHappeningsBreaking News

সিআরপিসিসির গণ-ধরনায় ব্যাপক সাড়া

ওয়েটুবরাক, ১২ জুলাই : বুধবার শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, আসাম এর পক্ষ থেকে ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত আসামের বিধানসভা ও লোকসভা আসনের সীমানা পুনর্নির্দ্ধারণের খসড়া বাতিলের দাবিতে গণ ধর্ণার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত ও সম্পাদক মধুসূদন করের পরিচালনায় গণ ধর্ণার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ধর্ণা চলাকালে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, এই খসড়া জনগণের সুবিধার জন্য তৈরি হয়নি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শাসক দলের নেতাদের ভোটে জেতার লক্ষ্যে তা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বরাক উপত্যকাকে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি অযৌক্তিক, বিভ্ৰান্তিকর ও বিভাজনবাদী খসড়ার বিরুদ্ধে দশ হাজার লোকের গণমিছিল আয়োজনের আহ্বান জানান।

‘প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চে’র অন্যতম কার্যকর্তা, বিজেপি নেতা বাসুদেব শর্মা বলেন, দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, এই আন্দোলন ধারাবাহিক ভাবে চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না পর্যন্ত খসড়া বাতিল হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির কুচক্রান্তকে ভেস্তে দেওয়া যাবে না।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি বিশ্বজিত দাস বলেন, তাঁর সংগঠন এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি’র অরিন্দম দেবেরও অভিমত, একজোট হয়ে লড়াই ছাড়া দাবি আদায় সম্ভব হবে না।

সংগঠনের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, এই খসড়া প্রকাশের পেছনে রয়েছে গভীর চক্রান্ত। তিনি ২০২৬ সালে গোটা দেশের সাথে আসামেও বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা পুনঃনির্ধারণের দাবিতে সি আর পি সি সি, আসাম আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানান।

এস ইউ সি আই ( সি ) দলের নেতা অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর খিলঞ্জিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থে খসড়া প্রকাশ হয়েছে বলে যে বার বার করা দাবি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। কারণ সংবিধানে খিলঞ্জিয়া শব্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ হয়নি। রাজ্যের জনগণের ঐক্য ও সংহতিকে ধ্বংস করতেই মুখ্যমন্ত্রী এসব বলছেন।

সি পি আই এম জেলা সম্পাদক দুলাল মিত্রের কথায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার নীল নক্সা এই খসড়া। ফলে ভবিষ্যতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্ৰতিনিধি পাঠানোর ক্ষমতা হ্ৰাস পাবে।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভূঁইয়া, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের গৌতমপ্রসাদ দত্ত, ফোরাম ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস-র চয়ন ভট্টাচার্য, মনিপুরি চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক ওক্রাম লক্ষীকান্ত সিংহ, হিন্দিভাষী ছাত্র পরিষদের দিলীপ সিং, ইয়াসি’র সভাপতি সঞ্জীব রায়, জেলা কংগ্রেস নেতা সীমান্ত ভট্টাচার্য সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি।

বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ধর্ণা প্রদর্শনের পর সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল জেলা শাসক মারফত আসামের চিফ ইলেক্টরেল অফিসারকে একটি স্মারকপত্র প্ৰদান করে ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত অভিযোগ প্রদানকারী সংগঠন ও নাগরিক শুনানি শিলচরে করতে জোরালো দাবি উত্থাপন করে। স্মারকপত্র প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কাছাড় জেলা সভাপতি নিরঞ্জন দত্ত, সম্পাদক মধুসূদন কর সহ কো চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্হ, কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, ডা এম শান্তি কুমার সিংহ, সুব্রত চন্দ্র নাথ, নির্মল কুমার দাস, হিল্লোল ভট্টাচার্য প্রমুখ।

ধর্ণায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পৌর সভাপতি তমাল কান্তি বনিক, শিলচর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন পৌর কমিশনার অতনু ভট্টাচার্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড়, প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক আশু পাল, লেখিকা আদিমা মজুমদার, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন এর সভাপতি সিহাব উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য দীপঙ্কর চন্দ, বনানী রায়চৌধুরী, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনির অরূপ বৈশ্য ও মানস দাস, মার্চ ফর সায়েন্স এর কমল চক্রবর্তী, সি পি আই এম এল লিবারেশন এর নেতা অসীম নাথ, এস ইউ সি আই( কমিউনিস্ট) দলের জেলা সম্পাদক ভবতোষ চক্রবর্তী, জয় বরদিয়া, জেলা বার সংস্থার সদস্য আব্দুল হাই লস্কর, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ দেব, প্রাক্তন অধ্যক্ষা সীমা ঘোষ, নারী মুক্তি সংস্থার স্নিগ্ধা নাথ, সুব্রত কর, সি পি আই নেতা রফিক আহমেদ, বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের জেলা সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর, ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক মিহির নন্দী, মাতৃভাষা সুরক্ষা মঞ্চের সুনীল রায়, বরাক হিউম্যান রাইটস প্রটেকশন কমিটির সদস্য নেহারুল আহমেদ মজুমদার, অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন’র জেলা সভাপতি মন্মথ নাথ ও সম্পাদক অঞ্জন কুমার চন্দ, এ আই ডি এস ও’র পল্লব ভট্টাচার্য, ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি এ এস এম ইসলামুল হক লস্কর, কাটিগড়া নাগরিক মঞ্চের আশিক আহমেদ চৌধুরী, রঞ্জিত কুমার চন্দ, বি ডি এফ এর হৃষিকেশ দে, সি আর পি সি’র সমীরণ চৌধুরী, বেরেঙ্গা জিপি’র প্রাক্তন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চন্দনা দে, আইনজীবী আলী রাজা ওসমানী, মাধব ঘোষ, সুরজিত পাল সহ বহু বিশিষ্ট নাগরিকগণ।

এছাড়াও এদিন সি আর পি সি সি, আসাম এর ধোয়ারবন্দ শাখার উদ্যোগে ধোয়ারবন্দ বাজারে ডিলিমিটেশন খসড়ায় ধোয়ারবন্দ, বড়জালেঙ্গা, ছোটজালেঙ্গা এলাকাকে বড়খলার সাথে যুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য পরিতোষ ভট্টাচার্য, দিলীপ রী, সুজিত আকুড়া প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker