Barak UpdatesHappeningsBreaking News

পরিবেশ দিবসে ডলুকাণ্ডের প্রতিবাদে শিলচরে বিক্ষোভ

ওয়েটুবরাক, ৫ জুন : বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রবিবার ডলু চা বাগান বাঁচাও সমন্বয় কমিটির আহ্বানে শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে বিভিন্ন কার্যসূচি পালন করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও ডলু চা বাগানের জৈব বৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক সংগঠনের সদস্যরা জড়ো হন৷ সকাল ১০টায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান, সদর থানার ওসি বিশাল পুলিশ ও সিআরপিএফ বাহিনী নিয়ে ক্ষুদিরাম মূর্তির চারপাশ ঘিরে রেখেছে। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জমায়েতে এত পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর মোতায়েন পরিবেশপ্রেমীদের বিস্মিত করে।

বৃষ্টির জন্য অনুষ্ঠান শুরু হতে বিলম্ব হলেও বিজ্ঞান ভিত্তিক সংগঠন যথাক্রমে মার্চ ফর সায়েন্স, ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি, পিপলস্ সায়েন্স সোসাইটি, ‘আরণ্যক’ ও ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি, কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থা, গণতান্ত্রিক লেখক সংস্থা, নারী মুক্তি সংস্থা, কথা পরিবার, সম্মিলিত লোক মঞ্চ, টি ইউ সি সি, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি অ্যাগেইনষ্ট ল্যাঙ্গুইজ অ্যান্ড কালচারাল এগ্রেশন সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা পরিবেশ রক্ষার দাবিতে প্লেকার্ড হাতে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘কোরাস’ সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীরা ‘জঙ্গল ছোড়ব নাহি, গাঁও ছোড়ব নাহি” গানটি পরিবেশন করেন।

পরবর্তীতে পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীতা নিয়ে একে একে বক্তব্য রাখেন মার্চ ফর সায়েন্স এর কো-অর্ডিনেটর কৃষাণু ভট্টাচার্য, ডাঃ এম শান্তি কুমার সিংহ ও কাবুগঞ্জের জনতা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষা সীমা ঘোষ প্রমুখ। কৃষাণু ভট্টাচার্য বলেন, গোটা বিশ্ব আজ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে গাছ কাটার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এমনকি ভারতেও গাছ কাটার পূর্বে বহু ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু কোনও সরকারি নিয়ম না মেনে ডলু চা বাগানে প্রস্তাবিত গ্রিন ফিল্ড বিমানবন্দর তৈরির অজুহাতে ত্রিশ লক্ষ গাছ উপড়ে ফেলা হল, এ বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার। ডা.এম শান্তি কুমার সিংহ বলেন, একটি গাছ কাটলে যেখানে পাঁচটি গাছ লাগানোর কথা বলা হয়, সেখানে কাছাড় জেলা প্রশাসন ডলু চা বাগানের ত্রিশ লক্ষ গাছ কেটে ক’টি গাছ লাগিয়েছে?

সীমা ঘোষ বলেন,  কর্পোরেটদের স্বার্থে পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনা চারিদিকে চলছে। শুধু ডলু নয়, গোটা বিশ্বে পরিবেশ ধ্বংসের যে ঘটনা ঘটছে তাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম চরম বিপদের সম্মুখীন হবে। ডলু চা বাগান বাঁচাও সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে আজ সেখানে অনেকগুলো ফুলের চারা রোপণ করা হয়। অধ্যাপক অজয় রায়, সুকল্পা দত্ত, মিহির নন্দী, শরিফুজ্জামান লস্কর, স্নিগ্ধা নাথ, জয়দীপ ভট্টাচার্য, হানিফ আহমেদ বড়ভূঁইয়া, প্রদীপ নাথ, রাহুল রায়, সাবির আহমেদ মাঝারভূঁইয়া, বিশ্বজিত দাস, মধুমিতা দেব, তুতন দাস প্রমুখ সহ উপস্থিত ব্যক্তিরা চারা গাছ রোপণ করেন।

বৃক্ষ রোপণের পর সদর থানার ওসির হাতে ডলু চা বাগান বাঁচাও কমিটির প্রবীণ সদস্য নির্মল কুমার দাস একটি গাছের চারা তুলে দিয়ে তাকেও পরিবেশ রক্ষার কাজে সাহায্য করতে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শেষে কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অরিন্দম দেব বলেন, সবুজ রক্ষার নামে আজ শিলচরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবেশ দিবস ঘটা করে পালিত হচ্ছে অথচ প্রশাসনের উদ্যোগেই গত ১২ মে ডলু চা বাগানে নির্দয়ভাবে পুলিশ মোতায়েন করে দু’শো জেসিবি লাগিয়ে চা গাছ ও সেড ট্রি উপড়ে ফেলার কাজ শুরু হয়। এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে যেসব তথাকথিত পরিবেশ বিজ্ঞানী সরব হওয়ার কথা ছিল, তারা সরকারি পুরস্কার পাওয়ার লোভে গাছ কাটার পক্ষে যুক্তি করছেন তা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ডলু চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করার মধ্যে শুধু ব্যবসায়ীক লাভ ছাড়া আর কিছুই নেই। কারণ বিমানবন্দর তৈরির কোনও প্রস্তাবই রাজ্য সরকার এখনও অসামরিক বিমান পরিবহন বিভাগের নিকট পাঠায়নি। তিনি ডলু চা বাগান বাঁচাও সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে পরিবেশপ্রেমী জনগণকে এগিয়ে এসে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আবেদন জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker