Barak UpdatesHappeningsBreaking News
কুকুর তৌহর শিলচরেও, আয়োজক স্পর্শ
ওয়েটুবরাক, ৫ নভেম্বরঃ মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে, যুধিষ্ঠিরের স্বর্গযাত্রায় কুকুর তাঁর পিছু নিয়েছিল৷ কিন্তু স্বর্গদ্বারে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়৷ বলা হয়, কুকুর নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ যুধিষ্ঠিরও ওকে ছাড়া এগোতে নারাজ৷ বললেন, তাহলে মর্ত্যই ভালো৷ পরে কুকুররূপী যমরাজই যুধিষ্ঠির কে স্বর্গে নিয়ে যান৷
সেখান থেকেই অনেকে বিশ্বাস করেন, মানুষের সঙ্গে স্বর্গের সংযোগ হয় কুকুরের মাধ্যমে৷ তারাই আমাদের আত্মাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়৷ তাই নেপালে কার্তিক মাসে কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিটি বরাদ্দ রয়েছে কুকুরের জন্য৷ পালিত হয় কুকুর তৌহর বা কুকুর তিহার অর্থাৎ কুকুরদের নিয়ে উৎসব৷ ভারতেরও বহু নেপালি অধ্যুষিত অঞ্চলে তা উদযাপন হয়। তবে শিলচর বা এই অঞ্চলে এর প্রচলন নেই৷
এ বার স্পর্শ নামে এক এনজিও-র উদ্যোগে শিলচরেও পালিত হলো কুকুর তৌহর৷ অনেকটা ভাইফোঁটারই মতো। প্রথমে ফুল দিয়ে শঙ্খের জল ছিটিয়ে কুকুরগুলিকে শুদ্ধ করে নেওয়া হয়৷ পরে তাদের কপালে তিলক পরিয়ে দেন একদল পশুপ্রেমী। দুই পায়েও দিলেন দুই ফোঁটা। গলায় পরিয়ে দিলেন ফুলের মালা৷ চলল ধুপ-দীপ যোগে আরতি, যেমনটা ভাইদের মঙ্গল কামনায় বোনেরা করেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায়। পরে বিস্কুট, টক দই সহ ভালো-মন্দ খেতে দেওয়া হলো আশ্রয়স্থলে থাকা ১২ কুকুরের সবাইকে।
শিলচরের এনজিও ‘স্পর্শ’ জীবজন্তু নিয়েই কাজ করে। গরু, বিড়াল, কুকুর তো বটেই, পেঁচা সহ অন্যান্য পাখিদেরও উদ্ধার করে তারা শুশ্রূষা করেন। প্রয়োজনে পশুপালন ও বন বিভাগের সাহায্য নেন৷
‘টিমলিডার’ রূপক পাল জানালেন, এই সময়ে তাদের শেল্টারে বারোটি কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দীর্ঘকাল গৃহপালিত ছিল। বুড়ো হতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা এদের কুড়িয়ে শেল্টারে এনে রেখেছেন। বাকি নয়টির প্রায় সবগুলিই পঙ্গু। বিভিন্ন সময়ে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যুর মুখে পড়েছিল। খবর পেয়ে তারা গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলছেন। আরও দুটি কুকুরের চিকিৎসা চলছে সহসভাপতি প্রসেনজিৎ পাল ও সম্পাদক অপরাজিতা চক্রবর্তীর বাড়িতে রেখে।
গত বছর দীপাবলির দিনে শিলচর বটেরতলে শেল্টারটির প্রতিষ্ঠা হলেও রূপক পাল, সুশান্ত রায়-রা এনজিও গড়ে জীবজন্তু নিয়ে কাজ করছেন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। তবে কুকুর তৌহরের ভাবনা আসে এ বারই। এনজিওটির নেপালি সদস্যা শ্বেতা সোনার প্রস্তাব দিলে সবাই তা লুফে নেন। শ্বেতাই বুধবার তাঁর ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত আয়োজন করেন, কীভাবে তা পালন করতে হয়, অন্যদের দেখিয়ে দেন।
সবাই বিস্মিত, কুকুরকে নিয়েও এমন একটা উৎসব রয়েছে। বিস্ময় ধরা পড়ে গোল্লু-চকলেটদের চোখে-মুখেও৷