Barak UpdatesBreaking NewsFeature Story
রেখেছ বাঙালি করে, লিখেছেন সুব্রত দাস
২৫ অক্টোবরঃ এক অদ্ভুত কাহিনী দিয়ে শুরু করি। আসামের বরাক উপত্যকার ঘটনা। আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে বাংলা সাহিত্যের এক অধ্যাপকের জন্য বাংলা নিয়ে পড়া এক উচ্চশিক্ষিতা নারীর বিয়ের প্রস্তাব আসে। পাত্রী এবং পাত্র দু’পক্ষই শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত; দু’পক্ষই শ্রীহট্টীয় ব্রাহ্মণ। দুই পরিবারের সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে, দুটি পরিবারই বৈষ্ণব সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। ঘটক এটাও বিশেষভাবে আলোকপাত করলেন যে পাত্র এবং পাত্রীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের জন্য এটা রাজযোটক হবে। স্বভাব, চরিত্রে নিঁখুত পাত্র উচ্চবর্ণের বাঙালি শ্রীহট্টীয় ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও বাধ সাধল পাত্রের বাঙালিয়ানা বা দেশীয় সংস্কৃতি, যা পাত্রীপক্ষের কারো কারো চোখে অত্যন্ত লজ্জাকর এবং হাস্যাস্পদ হয়ে দাঁড়াল।
কি ব্যাপার? না, ছেলে ধুতি পরিহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অতিবাহিত করে পরবর্তীতে কর্মস্থলেও ধুতি পরিধান করে যাতায়াত করে। এরকম পাত্র বাড়ির জামাতা হলে লজ্জার শেষ থাকবে না বলে পাত্রীর বোন এবং দুয়েকজন নিকটাত্মীয়ের জোর দাবি। অবশেষে, পাত্রীর বাবা মাও হৃদয়ঙ্গম করলেন– সত্যি, এরকম পাত্রীর সাথে মেয়ের বিয়ে হলে সমাজে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে। তাই অবশেষে যথারীতি ধুতি পরিধানের অপরাধে বিয়ে বাতিল। যদিও শেষে সেই সাহিত্যের ছাত্রীর বিয়ে হয় এক সুচাকুরে ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি সচ্ছল না সুখি হয়েছিলেন, সে উত্তর কেউ জানে না। তবে পরবর্তীকালে সেই বাংলার অধ্যাপকও বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত উঁচু পদে আসীন হন। হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেন না যে, বর্তমানে তিনি উচ্চ সরকারি পদে আসীন এবং বিশিষ্ট পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত।
যদি আপনাদের জিজ্ঞাসা করি, এই গল্পের মরাল কি? আমি বলবো, ‘বাঙালি হইয়া কস্মিনকালেও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ধুতি পরিধান করিবেন না; তাহা হইলে বিধিভঙ্গ করিবার অপরাধে নির্বাচন কমিশনের ন্যায় আপনার বিবাহের প্রার্থীত্ব বাতিল হইতে পারে!
পাঠক, প্রথমেই এন্টি ক্লাইমেক্স দিয়ে শুরু করলাম বলে ক্ষমা করবেন। আজকাল বরাক উপত্যকা তথা আসামে বাংলা ও বাঙালি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর বাতেল্লা চলে। অনেকেই দেখি নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতি তলানিতে অবস্থান করার জন্য, অন্য ভাষা, সংস্কৃতি বা কখনও সরকারকে এমনভাবে দোষারোপ করেন যেন বাঙালির সমস্ত দুর্ভাগ্যের জন্য অন্যেরা দায়ী। প্রতিবাদের পদ্ধতি অনেকসময় উগ্র ভাষিক জাতীয়তাবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। অর্থাৎ, যেটা অন্যের বেলায় শভিনিজম; সেই উন্নাসিকতা নিজের বেলায় সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার অধিকার। মানে- অউর করেতো গুনেগার; হাম করেতো চমৎকার! অবশ্য, অনেক মানুষ আবার সমন্বয়ের সাঁকো তৈরিতে বিশ্বাস রাখেন। কারও কারও মন নানা কারণে কখনও শঙ্কিত থাকে। হয়তো সঙ্গত কারণেই আসামে বাঙালিদের ভাষা নিয়ে সামান্য উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত। তেমনি অসমিয়া ভাষাভাষী মানুষের খেদ, শঙ্কা এবং আবেগও কিন্তু উড়িয়ে দেবার মতো নয়। বাঙালিরা যদি অস্তিত্ব নিয়ে ভীত থাকে, তাহলে অসমিয়ারাও নিজভূমে পরবাসী হবার ভয়ে শঙ্কিত। তাই, নিজের ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রসার না হবার জন্য সরকার বা অন্য কোনও ভাষিক জনগোষ্ঠীকে নন্দ ঘোষ দেখানো অনুচিত। এক সংখ্যক বোদ্ধা বাঙালির আবার কিছু নির্বাচিত ভাষা এবং সংস্কৃতিতে আপত্তি নেই; কিন্তু রাজ্যের অসমিয়া ভাষা সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা! অথচ, ভারতীয় মিশ্র সংস্কৃতির সুবাস প্রতিটি ভারতীয়কে মননে চিন্তনে উন্নততর করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই কি বলেননি, ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’?
প্রথমেই আসামের বরাক উপত্যকার দিকে তাকানো যাক। বরাকে প্রায় অর্ধেক হিন্দু বাঙালি এবং অর্ধেক বাংলাভাষী মুসলমান। দ্বিতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতি নিয়ে ততটা উৎসাহ পরিলক্ষিত হয় না। বরং, বাংলা সংস্কৃতি অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার খপ্পরে পড়ে রবীন্দ্র বা নজরুল জয়ন্তী পালনেও আসে অনীহা। কোনও কোনও জায়গায় তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কলকাতার মেটিয়াব্রুজ অঞ্চলে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদ্মশ্রী কাজী মাসুম আখতারের মতো মানুষকে ২০১৫ সালের ২৬শ জানুয়ারি ছাত্রদের দিয়ে জাতীয় সংগীত গাইয়ে ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়া হয়। যেটা নিয়ে ভারতের সমস্ত জাতীয় টিভি নিউজ চ্যানেলগুলো সংবাদ পরিবেশন করেছিল, যা এখনও গুগল ঘাঁটলেই পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, যে দেশ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগের বশে একদা জন্ম নিয়েছিল, সেটা বর্তমানে ধর্মীয় মৌলবাদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুর্গা পূজার সময় থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু হিন্দু বাঙালির উপর এখনও চলা ধারাবাহিক অপ্রতিরোধ্য তীব্র ধর্মীয় নির্যাতন সমস্ত বিশ্বকে ১৯৭১-এর পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বা দ্য ফরগটেন জেনোসাইডের বীভৎস ঘটনা মনে করিয়ে দেয়।
এবার রইল বাকি পঞ্চাশ ভাগ হিন্দু বাঙালির প্রসঙ্গ। শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালির বেশির ভাগই ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর দিকে মা বাবার উৎসাহ উদ্দীপনা বেশি। এর মূল কারণ, ইংরেজি শিক্ষার স্মার্টনেস পড়াশোনার পর উচ্চ বৃত্তি বা পেশার সাথে জীবনের মানোন্নয়ন বাড়াতে সাহায্য করে। কিছুটা অন্যদিকে, পরীক্ষার উত্তরপত্রে বাংলা বিষয় নিয়ে অত্যন্ত কম মার্কস পাওয়াও বাংলা পঠন পাঠনে ছাত্রদের অনীহার কারণ। এক অলিখিত সংস্কার বা বিশ্বাস অনুযায়ী, বাংলা শিক্ষকের কলমে ছাত্র যত সঠিক বা ভাল উত্তর দিক না কেন, নম্বর বেশি উঠে না। এছাড়া অত্যন্ত সামান্য সংখ্যক মানুষ আছেন, যাদের ভাষার প্রতি মমত্ব থাকলেও কর্মসূত্রে স্থান পরিবর্তনের জন্য সন্তানকে সেভাবে বাংলা পড়াতে পারেন না।
সবশেষে হারাধনের যে দু’চারটি ছেলে হাতে থাকে, তারা অনন্যোপায়। বাংলার শিক্ষক আর ছাত্রে তফাৎ নেই। কখনও যারা প্রায় কিছুই পড়াতে পারে না, তারাই বাংলা পড়ায়; যারা অন্যকিছু পড়তে পারে না, তারা বাংলা পড়ে। অর্থাৎ যাদের সামর্থ্য নেই, তারা বাংলায় পড়াশোনা করে। এদের চাই পুজোয় হয় ‘লুঙ্গী ড্যান্স’ বা ‘মুন্নী বদনাম হুয়ী’ জম্পেশ গান, যা কিনা হচ্ছে ‘জমাইল গান’ (জমানো গান); কারণ, – এরা দেহে এবং মনে অনুভব করেন, রবীন্দ্র সংগীত মানে ‘ঝিমাইল গান’ (ঝিমুনি গান)! ঝুলন, বিষরী, কালী, সরস্বতী, দুর্গা, ব্রহ্মা সবকিছুতেই হুলস্থুল কাণ্ড। কোন সংস্কৃতি বুঝা মুস্কিল। অসমিয়া, পাঞ্জাবি ইত্যাদি সবার নিজস্ব সংস্কৃতি বিহু বা বৈশাখীর আবহে বুঝা যায়, কিন্তু বাঙালির? বোঝা দায়! তারমধ্যে আজকাল আরেকদল আবার রাম, গণেশ ইত্যাদি পুজো হলে সেটাকে অবাঙালির দেবতা বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় কান্নাকাটি করেন! লে হালুয়া, সনাতন বা হিন্দু ধর্ম শুনেছি, কিন্তু হিন্দি ধর্ম! মানুষের দুটো পরিচয় থাকে। একটা ভাষিক, অন্যটা ধর্মীয়। কিন্তু ধর্মীয় উৎসব প্রতিপালনে ভাষিক ধর্মান্ধতা? একেবারে কাঁঠালের আমসত্ত্ব! তারমানে, শুরুর বিয়ে ভেস্তে যাবার গল্পের ট্রেন্ডটা এখন অন্যভাবে চলছে।
বাঙালির স্ববিরোধী কার্যকলাপের অবিমৃষ্যকারিতা অনেক দিনের পুরনো অভ্যেস। আজ থেকে অনেক বছর আগে যখন আমাদের মতো মানুষ কলেজে পড়ত তাদের আশেপাশের অনেক মানুষের কাছ থেকে তখনও বাংলা নিয়ে পড়ার জন্য তির্যক মন্তব্য শুনতে হতো। শুনেছি, এখনও নাকি হয়। কিভাবে? দুয়েকটা উদাহরণ দিই, নাহলে পরিস্কার হবে না।
এক- বাংলা নিয়ে পড়বি, এটা একটা বিষয় হলো! দুই- দূর, বাংলা মালগুলো বড্ড ন্যাকা, গরুকেও শান্তিনিকেতনে বলে, এই গরু সরে দাঁড়া, না হলে তোকে ফুল ছুঁড়ে মারবো। তিন-(অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা) ইস্ মাগ্গো, বাংলা নিয়ে পড়া ছেলেগুলো অসম্ভব মেয়েলি, অসহ্য ইত্যাদি ইত্যাদি! আবার আরেকদল শহুরে বুদ্ধিজীবী বা শিক্ষিত মানুষ যারা বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতির জন্য সদা চিন্তিত, তাদের অধিকাংশই বিনীতভাবে গর্ব প্রকাশ করেন এই বলে, ‘আমার ছেলে বা মেয়ের বাংলাটা ঠিক আসে না’! অন্যদিকে, বাংলা যারা পড়ে এবং পড়ায়, তাদের অধিকাংশই এখন সাহিত্য বা বই পড়ে না। ভোগবাদ, টেকনোলজি ইত্যাদির জন্য সামাজিক পরিবর্তন নিমেষে আমাদের বইয়ের পাতার স্বপ্নীল জগত থেকে চিন্তাশক্তির দৈন্যতা সম্বলিত ভিডিওর দুনিয়াতে নিয়ে চলে আসে। বাঘিনী রানী রাসমণি কতটা কাঁদুনে হবেন, ঠাকুর রামকৃষ্ণ কতটা দেখতে গ্ল্যামারাস হবেন, কোনও ঐতিহাসিক চরিত্র সেক্সি হবেন- সব ঠিক করে বোকাবাক্স আর সোশ্যাল মিডিয়া; আর বাঙালি তা গর্দভের মতো মনের আনন্দে গলধঃকরণ করে।
যদিও, এমনিতেও নিয়ম হচ্ছে – সার্ভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেষ্ট। অর্থাৎ, সমুদ্রেও বড় বড় মাছেরা ছোট ছোট মাছকে খেয়ে নেয়। ভাষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। জোর যার মুলুক তার। ইংরেজির মতো আন্তর্জাতিক ভাষাও টেকনোলজি এবং মেরুকরণের ফলে নিজেই আজ বিপন্ন। এসএমএস, চ্যাটিং এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য এই নিজেও আজ নিজের চরিত্র হারিয়ে ফেলতে চলেছে। যে টেকনোলজির হুমকি সব ভাষার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। তাসত্ত্বেও, তথাকথিত বাঙালি বুদ্ধিজীবীরাও যে বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতি নিয়ে খুব একটা ভাবেন- তা নয়। বরং বাঙালি বামপন্থী লেখক এবং বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বাংলার মনীষীকুলকে বরাবর হ্যাটা করে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া, নেতাজি কুকুর, বিবেকানন্দ মার্কিন সাধু, রামকৃষ্ণ স্কিতজোফ্রেনিক রোগী, বঙ্কিমচন্দ্র সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি ন্যারেটিভ বা গল্প বাজারে চাউর করে বাঙালি জাতি সত্তাকে আত্মঘাতী করে তুলতে সাহায্য করেছেন। এমনকি শিল্প সাহিত্য উত্তরণের নামে কল্লোল যুগের রবীন্দ্র বিরোধিতাও এক ধরণের অদ্ভুত বিকারগ্রস্ততা, যে ধারাবাহিকতা দেখাতে দিয়ে আজো কেউ কেউ শালীনতা এবং সভ্যতার সীমা অতিক্রম করেন। বাঙালির মধ্যে অনেক লেখক বা কবি আছেন, কিন্তু একজনও ডঃ কুমার বিসওয়াস নেই, যার মতো মানুষেরা কোন ভাষাকে সবার আনন্দ, উৎসাহ এবং উপভোগের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তার স্তরে পৌঁছে দেন।
সবমিলিয়ে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা – সর্বত্র হিন্দু বাঙালির এভারেজ মাইন্ডসেট এক! সবকিছুর জন্যই কেউ না কেউ দায়ী, নিজেরা নয়। অথচ, বাঙালি এক বিল্ডিংয়ের ছাদের তলায় থাকা দশটা ফ্ল্যাটে সাতটা সংগঠন। যেখানে মতান্তর, সেখানেই মনান্তর। কে, কতোটা নিজেদেরকে নামাতে পারে- সেটাই মূল লক্ষ্য। কে বোঝাবে যে সবকিছুর পরেও কোথাও একটা ব্যালেন্সের প্রয়োজন হয় মানুষের জীবনে? অর্থাৎ, কোনটা কতটুকু নেবো বা ছাড়ব – সেটা নির্ধারিত হয় জাতিসত্তার বেঁচে থাকার তাগিদে; সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রসারের প্রয়োজনে। বাঙালির জীবনচর্যা থেকে সংস্কৃতি, সাহিত্য বা কবিতা চর্চা অনেক ক্ষেত্রেই এখন হয়- স্বপ্নময় বিলাসিতা, নয় কুৎসিত আবিলতা; কোথাও বা আবার তাতে থাকে শ্রাদ্ধবাসরের থমথমে নীরবতা, সেটা রবীন্দ্র, নজরুল বা মার্ক্সীয় ‘রসুন (রবীন্দ্র-সুকান্ত-নজরুল) জয়ন্তী’- যাইহোক না কেন। আসলে, জীবনে যা ঘটে তা মানুষের নিজের চয়েস, যা বুঝে বা না বুঝে আমরা নিজেরাই কামনা করি। তাই যেটা ধরা দেয়, সেটাই আমাদের ভাগ্য। কবি জালালুদ্দিন মহম্মদ রুমির ভাষায় – ‘What you seek is seeking you’. অবশ্য, সবশেষে ঘেটে ঘ হবার পর আমাদের বোধোদয় হয়। অর্থাৎ, তখন আত্মঘাতী বাঙালির শুধু বাকি থাকে নাকের আর চোখের জলে স্বগতোক্তি, ‘…যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না’।