NE UpdatesBarak UpdatesHappenings

পরমানন্দ প্রস্তাবের বিরোধিতায় সোচ্চার সিআরপিসিসি

ওয়েটুবরাক, ২ অক্টোবর : সিপাঝাড়ের বিধায়ক পরমানন্দ রাজবংশীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল বরাক উপত্যকা সফরকালে শিলচরে উপস্থিত হয়ে উপত্যকার প্রাথমিক স্কুলের পাঠ্যসূচিতে ৫০ নম্বরের অসমিয়া ভাষা শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রস্তাব রেখেছেন এর তীব্র বিরোধিতা করে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতি, আসামের কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে  বলা হয়, আসাম সরকার উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির ধারাবাহিক আগ্রাসন-উন্মুখ কার্যসূচিকে সচতুরভাবে সারা রাজ্যে চাপিয়ে দিচ্ছে। বহু ভাষিক রাজ্য আসামের সাধারণ মানুষ অসমিয়া ভাষাকে আবশ্যিক করার বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই আন্দোলন করে এসেছে। ১৯৬১, ১৯৭২, ১৯৮৬ সালে বরাক উপত্যকার জনগণ রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা করেছিল। ১৯৬০ সালে তদানীন্তন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার রাজ্যের ভাষিক বৈচিত্র্যের পরিপন্থী ভাষা আইন বলবৎ করতে চাইলে উপজাতি সম্প্রদায়ের জনগণও এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রবলভাবে ব্যক্ত করে এবং আসাম থেকে বহু পার্বত্য জেলা বেরিয়ে গিয়ে নতুন রাজ্য গঠন করে।

১৯৬০ সালের অগণতান্ত্রিক ভাষা বিলের প্রতিবাদে ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে যে আত্মবলিদানের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে সেই প্রেক্ষিতে সে বছর ৭ অক্টোবর সরকারি ভাষা – আইনের পঞ্চম ধারা সংশোধন করে। সেই অনুযায়ী তদানীন্তন অবিভক্ত কাছাড় জেলায় বর্তমান বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সরকারিভাবে স্বীকৃত হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, পরমানন্দ রাজবংশী কি ইতিহাস জানেন না? নাকি প্রভুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাষা – গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি ধ্বংস করতে মরিয়া?

সিআরপিসিসি, আসাম এর পক্ষ থেকে বলা হয়, পরমানন্দ রাজবংশী হয়তো জানেন না, বরাক উপত্যকার তিন জেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসমিয়া ভাষা দীর্ঘ বছর থেকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। অসমিয়াভাষী যে সব জনগণ বরাক উপত্যকায় দীর্ঘ বছর থেকে বসবাস করছেন তাঁদের প্রয়োজনে সে সব এলাকায় অসমিয়া স্কুল রয়েছে বা নতুন করে গড়ে তুললেও কারও আপত্তি নেই। বরং শিলচর শহরে থাকা অসমিয়া মাধ্যমের তরুণ রাম ফুকন এল পি স্কুলকে আসাম সরকার ‘এমালগেমেশন’ করে বাংলা মাধ্যমের স্কুলের সাথে জুড়ে দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছেন বরাক উপত্যকার অনসমীয়া ভাষী জনগণ সহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। কাছাড় জেলার লক্ষীপুর মহকুমার অন্তর্গত মণিপুরি মাধ্যমের একটি সরকারি স্কুলকে দু’বছর আগে রাজ্য সরকার বন্ধ করে দিতে চাইলে এরও প্রতিবাদে সোচ্চার হন অমণিপুরি ভাষী জনগণ। বরাক উপত্যকায় বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর জনগণ নিজের ভাষায় পড়াশোনা করার অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারের উদাসীনতার ফলে। অথচ পরমানন্দ রাজবংশী এর দায়ভার জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন৷ একে অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা বলে মনে করে সিআরপিসিসি, আসাম৷

তাদের কথায়, শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা এই উপত্যকার জনগণের মধ্যে অনৈক্য ও সংঘাত সৃষ্টির জাল বুনতে তিনি যে এখানে এসেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পরমানন্দ রাজবংশীর কাছে তাঁদের প্রশ্ন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষা সহ বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর জন্য যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৯৬০ সালে ছিল তার কয়টি বর্তমানে রয়েছে? জোর করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে পরিচালিত আসাম সরকার হয় বন্ধ করে দিয়েছে নতুবা অসমিয়া মাধ্যমের স্কুলে পরিবর্তন করে নিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এও বলা হয়, মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও রাজ্যের কর্মসংস্হানের সুযোগ সৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান সরকার জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরিতে ব্যস্ত। সিপাঝাড়ের ধলপুরে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে সাম্প্ৰদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দরিদ্র সংখ্যালঘু জনসাধারণকে নির্বিচারে উচ্ছেদ করা ও প্রতিবাদকারীদের অমানবিকভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করার ঘটনা প্রমাণ করে, এই সরকার ফ্যাসিবাদী চিন্তার বশবর্তী হয়ে এসব নারকীয় ঘটনা সংঘটিত করছে। সিআরপিসিসি, আসাম রাজ্যের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের ভাষা, নাগরিকত্ব ও অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাই আসাম সরকারের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker