NE UpdatesBarak UpdatesHappenings

মিজো সীমান্তে হিংসার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে  ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকুন, কেন্দ্রকে বরাকবঙ্গ

ওয়েটুবরাক, ৭ আগস্ট : আসাম-মিজোরাম সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং হিংসাত্মক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অবিলম্বে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকে অসম ও মিজোরাম সরকারকে  মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলুক কেন্দ্র ।  এমনই দাবি তুলল  বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন । বরাকবঙ্গের অভিমত, দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলার জন্য সদর্থক মনোভাব নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলোকে এগিয়ে আসা দরকার। অতীতের দোলাচল মনোভাবের জন্য সীমান্তে জটিলতা বেড়েছে। তাই কেন্দ্র সরকারকে ওই অভিজ্ঞতার আলোকে দীর্ঘসূত্রী মনোভাবের পরিবর্তে দ্বিধা ঝেড়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত । বিগত দিনের ভুলে দুটি প্রতিবেশী রাজ্যের সম্পর্ক বৈরী-দেশের রক্তক্ষয়ী সমর পরিস্থিতির আদলে রূপান্তরিত হয়েছে।  ছ’জন পুলিশকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু  এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে অশনিসংকেত মিলছে।
মিজোরাম সীমান্তে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বরাকবঙ্গ আয়োজিত এক আন্তর্জালিক আলোচনা চক্রে  গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করে এই আন্তঃ-রাজ্য বিরোধ মীমাংসায় কেন্দ্রকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘ মিজোরাম সীমান্তে সংঘাত : অশনিসংকেত ‘ শীর্ষক ফেসবুক লাইভে বরাকবঙ্গের আলোচনায় গভীর উৎকন্ঠা ব্যক্ত করে বলা হয়, গত কয়েকদিনে দুই প্রতিবেশী রাজ্যের সুর কিছুটা নরম এবং নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক মত বিনিময়ে আগ্রহ দেখানো হলেও  বিবাদমান এলাকায় উত্তেজনা মোটেই প্রশমন হয়নি। এরই মধ্যে  দু রাজ্যের উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো  সীমান্তে মিশ্র জনবিন্যাসের বাস্তব চিত্রকে  আড়াল করে  বিভাজনমুখী  কূটকৌশলে বরাক উপত্যকাকে অস্থির করে তোলার চেষ্টায় নেমেছে।
আলোচনা চক্রে অসমের সমতল ভূমিতে মিজো হানার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিশিষ্ট লেখক-গবেষক বিবেকানন্দ মোহন্ত বলেন, ১৭১৬ সাল থেকেই বরাক উপত্যকায় দফায় দফায় লুসাই জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র হামলার ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে। বৃটিশ আমলেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। ওইসব হামলায় হাইলাকান্দির আয়নাখাল, করিমগঞ্জের লাতু, কচুবাড়ি, কাছাড়ের নগদিরগ্রাম, লালনপুঞ্জি ইত্যাদি বহু সমতলীয় জনপদ নিশ্চিহ্ন কিংবা বিপর্যস্ত হয়েছে, বহু লোকের প্রাণহানিও ঘটেছে। ১৮৭৫ সালে বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অ্যাক্ট অনুসারে লুসাই পাহাড়ের সীমা নির্ধারণ করে ইনার লাইন ব্যবস্থা চালু করেও বৃটিশ সরকার স্বস্তি পায়নি। পরবর্তী সময়ে বরাক উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের চা বাগানগুলোতে লাগাতার লুসাই পাহাড় থেকে নেমে এসে  হামলা চালানো হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বরাকবঙ্গের কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন, অতীতে সীমা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আন্তরিক চেষ্টা হয়নি । উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন ,২০১১ সালে সীমান্ত সড়ক সংস্থা যখন শিলচর থেকে মিজোরাম সীমান্ত পর্যন্ত সড়কপথ অসম সরকারের পূর্ত বিভাগের হাতে তুলে দেয় তখন রহস্যজনক কারণে আন্তঃরাজ্য সীমান্তের গেট থেকে পাঁচ কিলোমিটার অসমের দিকে সরে এসে লায়লাপুর অবধি পথ হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে  অসমের পূর্ত বিভাগ কিংবা প্রশাসনের তরফে তখন জোরালোভাবে কোনও আপত্তি তোলা হয়নি। পরবর্তী সময়ে লায়লাপুর সীমান্তে অটো স্ট্যান্ডটি একটু একটু করে অসমের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এই পরিকল্পিত আগ্রাসন প্রতিরোধে  অসমের তরফে  তেমন কোনও তৎপরতা এ রাজ্যের  জনগণের নজরে আসেনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের উদাসীনতার জেরে উদ্ভূত সমস্যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলার পর গত ২৬ জুলাই লায়লাপুরে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে  তার প্রতিবাদে বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন একসুরে সরব হয়েছে। এটাকে এক ইতিবাচক দিক বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে এমন চিত্র দেখা যায়নি।
    আলোচনা সঞ্চালনা করে বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন , ১৯৭২ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে লুসাই পাহাড় জেলাকে যখন আসাম থেকে আলাদা করে যখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখন দিল্লির নর্থ ব্লকের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে কোনও সতর্ক পদক্ষেপ নেননি। ১৯৮৭ সালে এমএনএফের সঙ্গে মিজো শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর মিজোরাম পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরই সীমান্ত সমস্যা বাঁকের মুখে এসে দাঁড়ায়। ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ সরকার নতুনভাবে লুসাই পাহাড় জেলার সীমা চিহ্নিত করে যে বিধান দিয়েছিল তা মেনে নিতে আপত্তি জানিয়ে পূর্ণরাজ্য মিজোরামের সরকার ১৮৭৫ সালের ইনার লাইন ব্যবস্থার অধীনে জারি করা গেজেট নোটিফিকেশন মেনে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের দাবি তুলে। এসব বিতর্কিত প্রশ্নে যে জটের সূত্রপাত হয় তার স্থায়ী সমাধানের জন্য  আন্তরিক প্রয়াস না নিয়ে  ধামাচাপা দিয়ে  সীমান্তে শান্তি স্থাপনের উদ্যম দেখা গেছে । বিরোধের এই  বীজ থেকে গজিয়ে ওঠা মনোভাবই বরাক উপত্যকার আন্তঃরাজ্য সীমান্তে মিজো আগ্রাসন ঘটাচ্ছে। উপত্যকার ১৬৫ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় কেবল ২০১৬ থেকেই ১৭৭৭.৫ হেক্টর অসমের জমি মিজোরামের দখলে চলে গেছে। ২৬ জুলাইর ঘটনা অতীত উদাসীনতারই ফসল। ক্রমাগত মিজো আগ্রাসনের দরুণ সীমান্ত এলাকায় জনগণ এখন চরম নিরাপত্তাহীতায় দিন কাটাচ্ছেন।
 পাশাপাশি ঘটনাপ্রবাহের অন্য দিক তুলে ধরে বরাকবঙ্গের   সাধারণ সম্পাদক  গৌতম প্রসাদ  দত্ত বলেন, সীমান্তে হিংসার প্রতিবাদে যখন রাজ্যের দুই উপত্যকার মানুষ জোরালো কন্ঠে   ন্যায় বিচারের  দাবি তুলেছেন তখনই প্রশান্ত রাজগুরুর মত বিশিষ্ট অসমিয়া বুদ্ধিজীবী এবং কিছু কিছু মহল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যু টেনে এনে মূল সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টায় মেতেছেন। মিজো প্রীতি দেখাতে গিয়ে বরাক উপত্যকাকে ‘শত্রুভূমি’ পর্যন্ত বলা হচ্ছে। অথচ মিজো সীমান্তে অসমের এলাকা এক মিশ্র জনঅধ্যুষিত অঞ্চল এবং এরা মিজো প্রশাসনের মদতপুষ্ট আগ্রাসনের শিকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও সাম্প্রতিক শিলচর সফরকালে মিজো সীমান্তে অনুপ্রবেশ তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker