Barak UpdatesBreaking News

৮ সন্তানের মা অশীতিপর বৃদ্ধা রেলস্টেশনের কোণা থেকে বারইগ্রাম বৃদ্ধাশ্রমে
81 year old lady, mother of 8 wards ultimately finds shelter at an old age home

১৫ অক্টোবরঃ ৪০ বছর বয়সে বিধবা হন লক্ষ্মী সেন। সে থেকে ৮ ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার লড়াই। তাদের খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করার অদম্য চেষ্টা। এতদিনে তিন ছেলেই কাজ জুটিয়েছে। বড় ছেলে মাইবাঙে শিক্ষকতা করেন। মেজ-র জনস্বাস্থ্য দফতরে চাকরি। ছোট জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।মেয়েদের সবার বিয়ে হয়েছে।

এখন লক্ষ্মীদেবীর বয়স ৮১ বছর। এখনও তাঁকে লড়তে হচ্ছে। আগের চেয়েও কঠিন লড়াই। নিজের মাথা গোঁজার জন্য একবার যেতে হয় মেজ ছেলের কাছে। একবার চতুর্থ মেয়ে তো আরেকবার পঞ্চম মেয়ের বাড়ি। কোথাও ঠাঁই হয়নি। শেষে বোনের বাড়ি গেলে তারাই অটোয় তুলে দিয়ে রেলস্টেশনে নামিয়ে দিতে বলেন। সেখান থেকেই মানুষ তাঁকে পোঁছে দেয় বারইগ্রামের করিমগঞ্জ সপ্তবর্ণ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানে বসেই লক্ষ্মী সেন বললেন, রেলস্টেশনে ছেড়ে দিয়ে গেলে তিনি যেন অথৈ জলে পড়েন। কিছুদিন স্টেশনের এককোণায় পড়ে থাকি। মানুষ খাবার দিয়েছে, কিন্তু মুখে তোলার ইচ্ছে হয়নি। তা দেখে বিবেকে বাঁধে অনিন্দ্য ভট্টাচার্য, শাশ্বতী চক্রবর্তীদের।  শাশ্বতীদেবী বদরপুরের মহিলা জাগরণ সমিতির সভানেত্রী। তাঁর মধ্য দিয়েই খবর যায় ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি (ডিএলএসএ)-র কাছে। ডিএলএসএ-র সচিব পি এ চৌধুরীই চিঠি পাঠিয়ে অশীতিপর বৃদ্ধাকে রাখতে অনুরোধ করেন।

এর পরে অবশ্য মামলার কথা শুনে দুই মেয়ে, মেজ ছেলে মাকে দেখতে যান। কিন্তু কেউ .তার দায়িত্ব নিতে চাননি।মেয়েরা শুধু পুজোর দিনগুলির জন্য তাঁকে আনার প্রস্তাব দিয়েছিল। ডিএসএলএ জানিয়ে দিয়েছে, নিলে একেবারে নিয়ে যেতে হবে। শুধু পুজোর জন্য হবে না।

সপ্তবর্ণ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সচিব সাদিক আহমেদ বলেন, ছেলে এসে একবার বলে মায়ের জল বেশি লাগে। তাই তাঁকে নিয়ে কোথাও থাকা যায় না। কেউ ভাড়া দিতে চায় না। আরেকবার শোনান, নিজের পছন্দে বিয়ে বলে মা তাঁর স্ত্রীকে মেনে নিতে চায়নি। ফলে এখন স্ত্রীও তাঁকে নিতে রাজি নন।

লক্ষ্মীদেবী জানান, বাবা প্রবোধচন্দ্র ঘোষ ছিলেন কবিরাজ। ৩ ভাই, ৬ বোন ছিলেন তাঁরা। ১৮ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী পুষ্প সেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। টানাটানিরই সংসার ছিল। ফলে পুষ্পবাবুর মৃত্যু তাকে অনাথ করে দেয়। শ্বশুর-শাশুড়ি বদরপুরে মায়ের কাছে চলে যেতে পরামর্শ দিলে তা-ই করেন। দাদা একটু জায়গা লিখে দিলে সেখানেই ঘর বানিয়ে থাকেন দীর্ঘদিন। মেজ ছেলে কৃষ্ণের পরামর্শে ওই বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। বড় ছেলে মাইবাঙে চাকরি পেয়ে বাড়িঘরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। তাই কৃষ্ণের কথা ফেলতে পারেননি তিনি। কিন্তু কৃষ্ণ আর থাকতে দিল কোথায়!

লক্ষ্মীদেবী বলতে থাকেন, ঘর থেকে একটু বেরোলেই দরজা বন্ধ করে রেখে দিত সে। ডাকাডাকিতেও খুলত না। তাদের প্রয়োজনে দরজা খুললেই ঘরে ঢুকতেন তিনি। তাই সিদ্ধান্ত নেন, ছোট মেয়ে রুপার বাড়ি গিয়ে থাকবেন। গোলাঘাটে দুদিন কাটানোর পরই মেয়ে বদরপুরে ফিরে যেতে বলে। এলেন বটে, কিন্তু কৃষ্ণের ঘরে যেতে মন চাইল না। গেলেন মেয়ে উমার বাড়ি। সে দরজাই খোলেনি। ভেতর থেকে বলে দিয়েছে, তোমাদের জামাই বকাবকি করবে। এখন কী করবেন! বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। ভিজে ভিজেই গেলেন ছোট বোনের বাড়ি। দুদিন পর বোন ও তার পুত্রবধূ অটোয় তুলে দেন। অটো এনে নামায় বদরপুর রেলস্টেশনে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker