Barak UpdatesHappeningsBreaking News
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে বের করতে আহ্বান জে নন্দকুমারের
ওয়েটুবরাক, ১৬ মে : সমগ্র দেশব্যাপী স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতির তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপন সমিতি, দক্ষিণ অসম প্রান্ত গতকাল রবিবার কাছাড় কলেজে সারাদিন ব্যাপী এক কর্মশালা এবং বিকেলে আলোচনা সভা আয়োজিত হয়। এই অনুষ্ঠানে মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞা প্রবাহের অখিল ভারতীয় সংযোজক জে. নন্দকুমার৷ ছিলেন প্রান্ত সংঘ চালক জ্যোৎস্নাময় চক্রবর্তী, প্রান্ত কার্যবাহ সুভাষ নাথ, প্রান্ত প্রচারক গৌরাঙ্গ রায়, মধ্য কাছাড় জেলা কার্যবাহ ড. অভিজিৎ নাথ এবং কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থশংকর নাথ।
ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দক্ষিণ অসম প্রান্তের বিবিধ ক্ষেত্র যেমন ভারতীয় মজদুর সংঘ, অধিবক্তা পরিষদ, রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি, অখিল ভারতীয় শৈক্ষিক মহাসংঘ, ক্রীড়া ভারতী, সংস্কার ভারতী, সহকার ভারতী, ইতিহাস সংকলন সমিতি, ন্যাশনাল মেডিকোস অর্গানাইজেশন, পর্যাবরণ বিভাগ, বিদ্যা ভারতী, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ-এর বিভিন্ন পদাধিকারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বরিষ্ঠ প্রচারক শশী চৌথাইওয়ালের লিখিত পুস্তক “मेरी प्रचारक यात्रा”-এর বাংলা সংকলন “আমার প্রচারক যাত্রা” পুস্তকটির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন হয়।
মুখ্য বক্তা জে. নন্দকুমার বলেন, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব আমাদের কাছে একটি সুবর্ণ সুযোগ৷ স্বাধীনতা অর্জনের এই যাত্রাকে, আমাদের দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে ফিরে দেখার এবং তার বীজ আমাদের দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বপন করার এটাই প্রকৃত সময়।” তাঁর কথায়, “আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য, আমরা স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশীদার হতে পারিনি৷ সত্যিকারের স্বাধীনতা উপলব্ধি করতে হলে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে নিজেদের যুক্ত করতে হবে৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে বের করে সেই ইতিহাসকে সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।” তিনি বলেন, সেই বিস্মৃত ইতিহাসকে অতীতের অন্ধকারে ঢেকে রেখে বিগত ৭০ বছর যেভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এক বিকৃত ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, তাতে যুব সমাজের মস্তিষ্কে এক মিথ্যা ইতিহাস স্থাপন করা হচ্ছিল৷ দেশের মেরুদন্ডকে ভাঙার এক কুচক্র চলছিল৷ আমাদের সেই কুচক্রকে নস্যাৎ করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে অন্ধকার অতীত থেকে বের করে এনে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তখনই সেই বিস্মৃত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তাদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন , ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের বিজয়া দশমীর বৌদ্ধিক প্রদান করার করার সময় পূজনীয় সরসংঘ চালক ড. মোহন ভগবত একই কথা বার বার বলেছেন যে, আমাদের প্রকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত হলো “স্ব” । আমাদের দেশের রাজনৈতিক , আর্থিক, সামাজিক ও শিক্ষা ব্যবস্থায় যা কিছু সমস্যা রয়েছে সেই সবকিছু সমাধানের একমাত্র উপায় হলো “স্ব”।
১৯৪৭ সনের ১৫ই আগস্ট আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি সেই স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। মাত্র একটি পরিবারের অঙ্গুলি লেহনে দেশকে টুকরো টুকরো করে লক্ষ লক্ষ মানুষের হত্যালীলার পর আমরা শুধুই রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু আমরা উপনিবেশবাদের লৌহ শেকল থেকে আজও স্বাধীন হইনি। আজও আমাদের দেশ উপনিবেশবাদের শিকার। তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, এই উপনিবেশবাদই দেশটাকে ঘুনের মত খাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নীরবে ধ্বংস করে চলেছে এবং আমরা এই ধ্বংসকে অতি আনন্দের সঙ্গে আধুনিকতার নামে গ্রহণ করে চলেছি।
জে নন্দকুমার তাঁর বক্তব্যে সমগ্র সমাজকে আহ্বান জানান, সবাই যেন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে একজোট হয়ে দেশকে উপনিবেশবাদের বন্ধন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। অতীতের অন্ধকারে মাটি চাপা পড়ে যাওয়া সেই বিপ্লবী মহান সৈনিকদের রক্তে রাঙানো আমাদের মাটিকে প্রকৃত স্বাধীনতা দিতে আমাদের ভেতরের “স্ব” কে জাগিয়ে তুলি এবং সমগ্র ভারতবাসী এক হয়ে ভারতকে এক এবং অখণ্ড বিশ্বগুরু ভারতবর্ষ হিসেবে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে নিজেকে উৎসর্গ করে প্রকৃত স্বাধীনতার অংশীদার হই।