Barak UpdatesHappeningsBreaking News
তিনহাজার গণস্বাক্ষর সংবলিত আপত্তিপত্র পাঠাল “প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চ”
ওয়েটুবরাক, ১২ জুলাইঃ ডিলিমিটেশন প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে তিনহাজার গণস্বাক্ষর সংবলিত প্রতিবাদ পত্র ৮ জুলাই ই-মেলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাল “প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চ”। গণস্বাক্ষর সহ সেই প্রতিবাদ পত্রের কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ই-মেল যোগে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রতিবাদ পত্রে তাঁরা দাবি করেন, ১) বর্তমান ডিলিমিটেশন প্রস্তাব স্থগিত রেখে ২০২৬ সালের পর সারা দেশের সাথে ডিলিমিটেশন কমিশনের তত্বাবধানে সর্বশেষ লোক গণনার ভিত্তিতে আসামেও আইনসভার আসন সমূহ পুনর্বিন্যাস করতে হবে। ২) তখন ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার তদারকি করার জন্য যদি কোনও রাজ্যভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়, তবে সেই কমিটিতে জনসংখ্যার অনুপাতে সমস্ত ভাষাভাষী মানুষের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। ৩) কোনও অবস্থাতেই বরাক উপত্যকা থেকে ২টি বিধানসভার আসন কমিয়ে দেওয়া চলবে না। বরং সর্বশেষ লোকগণনার ভিত্তিতে প্রয়োজন হলে আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। ৪) মালুগ্রাম, সেন্ট্রাল রোড, জানিগঞ্জ সহ শহরের কেন্দ্রস্থলের এক বিশাল অংশ উধারবন্দ সমষ্টিতে জুড়ে দেওয়ার অন্যায় পদক্ষেপ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কোনও অবস্থাতেই পুনর্বিন্যাসের সময় ডিলিমিটেশন কমিশনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম কানুন লঙ্ঘন করা চলবে না।
মঙ্গলবার মঞ্চের এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক ত্রিদিব কোঁওরের হাতে সেই প্রতিবাদ পত্র তুলে দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক কোঁওর সেই প্রতিবাদ পত্র গ্রহণ করে রাজ্যের নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে দ্রুত পাঠিয়ে দেবেন বলে প্রতিনিধি দলকে জানান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন আইনজীবী ধ্রুব সাহা, বাসুদেব শর্মা, আশু পাল, সঞ্জীব রায়, প্রণব দত্ত, রঞ্জিত দেবনাথ ও রঞ্জিত চৌধুরী।
দল-মত নির্বিশেষে শিলচর পুরসভার ১,২,৩,৪, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকেরা কিছুদিন আগে এক সভায় মিলিত হয়ে গড়ে তোলেন এই “প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চ”। তাঁরা শহরের ওই অঞ্চলগুলিতে ব্যাপক লিফলেট বিলির মাধ্যমে জনমত গঠন করার পাশাপাশি এই তিন হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।
প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিলিমিটেশন অর্থাৎ লোকসভা এবং বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী এলাকার পুনর্বিন্যাস গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি সাধারণ অংশ। প্রতি দশ বছর পর পর দেশে জনগণনা হয় এবং জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে আইনসভাগুলির কেন্দ্র সমূহের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়। দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য যেমন ‘নির্বাচন কমিশন’ রয়েছে তেমনি ডিলিমিটেশনের কাজ নিয়মিত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’ নামে একটি নিরপেক্ষ স্ংস্থাও রয়েছে। সংসদে গৃহীত প্রস্তাব অনু্যায়ী আগামী ২০২৬ সালের পর প্রথম যে জনগণনা হবে, সেই জনগণনার ভিত্তিতে সারা দেশে লোকসভা ও বিধানসভা গুলির পুনর্বিন্যাস হওয়ার কথা বেশ আগেই সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সময় লোকসভার আসন বাড়বে, এটা আন্দাজ করেই অনেক বেশি আসন সংখ্যা সম্পন্ন নতুন লোকসভা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে সেই ডিলিমিটেশন কমিশনের ক্ষমতাকে খর্ব করে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে শুধুমাত্র আসামের জন্য ডিলিমিটেশন করানো হয়ে গেল।
সংসদের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়ে রাজ্যের বিধানসভার আসন সংখ্যা বাড়ানো হলো না, অথচ সেই একই সিদ্ধান্তের অপর অংশের অবমাননা করে লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রগুলিকে যথেচ্ছ ভাবে কাঁটাছেঁড়া করা হলো। ডিলিমিটেশনের সমস্ত নিয়মনীতিকে বিসর্জন দিয়ে এক জেলার আসন কেটে অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হলো, এক কেন্দ্রের অংশ কেটে নিয়ে দূরের অন্য কেন্দ্রের সাথে জুড়ে দেওয়া হলো। প্রশাসনিক কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ, ভৌগোলিক অবস্থান, জনবিন্যাসের ধরণ ইত্যাদি সহ ডিলিমিটেশন কমিশনের সমস্ত গাইডলাইন উপেক্ষা করে, শুধুমাত্র শাসক দলের একাংশের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই ডিলিমিটেশন প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে বলেই রাজ্যবাসী মনে করছেন। শুধু বরাক উপত্যকা নয়, অল্প সংখ্যক তাঁবেদার ছাড়া গোটা রাজ্যের মানুষ এই ডিলিমিটেশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। মিটিং, মিছিল, বনধ হচ্ছে। তবু অশোভন ভাবে ধৃতরাষ্ট্রের মত মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেছেন, ‘খিলঞ্জিয়া’রা এবং ‘প্রকৃত ভারতীয়রা’ নাকি এই খসড়াকে দুহাত তুলে সমর্থন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে এই প্রস্তাবের পক্ষে সওয়াল করতে, যুক্তি সাজাতে এবং মেনে নেওয়ার জন্য রাজ্যের মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছেন, তাতে অসাংবিধানিক ভাবে তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এই ডিলিমিটেশনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে সন্দেহ করার অবকাশ তৈরি হয়েছে।